top of page

জোহরান মামদানি- নিউ ইয়র্কের নতুন মেয়র- সৃষ্টি করলেন ইতিহাস

ree



৫ নভেম্বর, ২০২৫: নিউইয়র্ককে ‘সিটি অফ ইমিগ্রান্টস’ বলে উল্লেখ করে মামদনি সে শহরের প্রতিটা খেটে খাওয়া মানুষকে শামিল করে নিলেন। জন্মসূত্রে ভারতীয়। ধর্মবিশ্বাসে মুসলিম। গায়ের রঙ বাদামি। নিউ ইয়র্ক শহরের নির্বাচনের মেয়র পদপ্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও বারবার ট্রাম্পের বক্রোক্তির শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। জোহরান মামদানি। জিতে গেলেন তিনি হাজার হুমকির মধ্যে পড়েও। জনগণ তাঁকে জিতিয়ে দিল। আমাদের ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ারের পুত্র জোহরান। ফলে ভারতের সঙ্গে যোগ রয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম মেয়র৷ রাজনৈতিক বিশ্বাসে ডেমোক্র্যাট সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানির জয় আমেরিকার মাটিতে ইতিহাস রচনা করেছে।

৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৪ বছর বয়সি মামদানি নির্বাচিত হয়েছেন মেয়র পদে। ১০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫১টি ভোট পেয়েছেন এই ‘কমিউনিস্ট’ প্রার্থী। ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর তাঁর প্রথম ভাষণ দেন নতুন মেয়র। ৩০ মিনিট দীর্ঘ এই বিজয় সম্ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বার্তা শুরুই করেন মাত্র ৪টি শব্দ খরচ করে। সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন৷ আপনার জন্য আমার কাছে ৪টে শব্দ আছে। ভলিউমটা জোরে করে দিন।’’ সরাসরি ট্রাম্পের নাম নিয়েই সপাট বললেন, ‘‘একটা শহর রাস্তা দেখিয়ে দিল, ট্রাম্পকে কীভাবে হারাতে হয়।’’ বললেন, ‘‘নিউইয়র্কের নতুন প্রজন্মকে ধন্যবাদ। আমরা তোমাদের হয়ে লড়াই করব। ভবিষ্যৎ আমাদেরই হাতে। বন্ধুরা, আমরা একটা রাজনৈতিক রাজত্বকে উপড়ে ফেললাম।’’ মা মীরা নায়ারকে ধন্যবাদ জানান মামদানি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উক্তিও স্মরণ করেন নিউ ইয়র্কের নব-নির্বাচিত মেয়র নিজের স্পিচে। মামদানির স্পিচের পরেই নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছেন, ‘...এবং শুরু হল।’ নিউইয়র্ককে ‘সিটি অফ ইমিগ্রান্টস’ বলে উল্লেখ করে মামদনি সে শহরের প্রতিটা খেটে খাওয়া মানুষকে শামিল করেন এই জয়ের উৎসবে। মনে করেন সেই ট্যাক্সি চালকের কথা, যাঁর পাশে বসে সিটি হলের বাইরে একসময় অনশন করেছিলেন তিনি। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নিউ ইয়র্কের মেয়রের দায়িত্ব নেবেন জোহরান মামদানি। জোহরানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রাক্তন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান (স্বভাবতই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে) হিসেবে নিউ ইয়র্কের মেয়র হচ্ছেন তিনি। একইভাবে প্রথম মুসলিম এবং প্রথম অভিবাসী হিসেবে সেই কুর্সিতে বসতে চলেছেন। পাশাপাশি ১০০ বছরেরও বেশি সময়ে নিউ ইয়র্কের কনিষ্ঠতম মেয়র হতে চলেছেন ৩৪ বছরের মামদানি। সার্বিকভাবে তাঁর জয় আমেরিকার ইতিহাসে এক নয়া যুগের সূচনা করল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। নির্বাচনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মামদানির বিরোধিতা করেছিলেন। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, মামদানি নির্বাচনে জিতলে নিউ ইয়র্ককে ফেডারেল তহবিল দেওয়া হবে না। তারপরও নিউ ইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করেছেন মামদানি।

বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার মামদানির মা এবং তাঁর বাবা মেহমুদ মামদানি। তাঁর বাবা মুসলিম। মা হিন্দু। মীরা নায়ার অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা পরিচালক। আর বাবা মেহমুদ অধ্যাপক এবং খ্যাতনামা লেখক। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহমুদ । ১৯৯১ সালে আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডার কাম্পালায় জ়োহরান মামদানির জন্ম হলেও পরে বাবা-মার সঙ্গে আমেরিকায় চলে আসেন। ১৯৯৮ সালে সাত বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাস শুরু করেন তিনি। মামদানির স্ত্রী রামা ডুয়াজি হলেন পরিচিত শিল্পী। রাজধানী কাম্পালার উপকণ্ঠের এক অভিজাত এলাকা বুজিগা হিলে প্রাসাদোপম বাড়ি মামদানি পরিবারের। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে কিছু দিন বসবাস করেছিল এই পরিবার। উগান্ডার কিছু দিন থাকার পর তাঁরা আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন। কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর পর ২০১৮ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন মামদানি। ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্সে পড়াশোনা মামদানির। ২০১৪ সালে মেইনের বোডোইন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। আফ্রিকা সংক্রান্ত পড়াশোনায় স্নাতক মামদানি। নিউ ইয়র্কের হবু মেয়র সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন চিত্রশিল্পী রমা দুয়াজির সঙ্গে। দুবাইয়ে আংটিবদল সেরে ফেলেছিলেন গত ডিসেম্বরে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিউ ইয়র্কে আইনি বিয়ে সারেন তাঁরা।

২০২০ সালে প্রথম বারের মতো নিউ ইয়র্ক অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন মামদানি। গত অক্টোবরে যখন মামদানি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন প্রাদেশিক আইন প্রণেতা। নিউ ইয়র্কের বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছেই অপরিচিত ছিলেন। তবে জুন মাসে প্রাইমারি নির্বাচনে নিউ ইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর তথা এ বারের নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে বিপুল ভোটে হারিয়ে হঠাৎই সংবাদের শিরোনামে চলে আসেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচারে মামদানি ঘোষণা করেন, নির্বাচিত হলে তিনি নিয়ন্ত্রিত ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টগুলির ভাড়াবৃদ্ধি স্থগিত করবেন। আগামী ১০ বছরে নিউ ইয়র্কে দু’লক্ষ ‘সাশ্রয়ী’ বাসস্থান নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মামদানি। ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়সভায় যোগ দিয়েছিলেন জ়োহরান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী রামা এবং বাবা-মা মাহমুদ মামদানি ও মীরা নায়ার।


 
 
 

Comments

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating

Top Stories

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page