খবর
শেখ হাসিনার ফাঁসির সাজা
কলকাতা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫: গত ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১৭ নভেম্বর, ২০২৫- এ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার রায়কে শ্রেষ্ঠ ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এই বিচারের রায় নিয়ে আসিফ বলেন,'আমি (রায়ে) বিস্মিত না, শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের যে তাজা, অকাট্য ও জোরালো প্রমাণ রয়েছে, তাতে পৃথিবীর যেকোনও আদালতে বিচার হলে তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার কথা।'
ফাঁসির সাজা ঘোষণার পরেই ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাদের ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে রীতিমতো বিবৃতি জারি করে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া প্রত্যপর্ণ চুক্তির কথাও নয়াদিল্লিকে মনে করিয়ে দিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশের আবেদনের পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ভারত কি আদৌ ইউনূসদের ‘আহ্বানে’ সাড়া দেবে? মোদী সরকারের তরফে জানানো হয়, হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্ক অবগত ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বাংলাদেশকে ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী’ হিসাবে উল্লেখ করেছে নয়াদিল্লি। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ— শান্তি, গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতার প্রতি ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করবে ভারত সরকার।
আওয়ামি লিগের প্রধান তথা বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ২০২৪-এর ৫ অগস্ট বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতেই কোথাও আত্মগোপন করে আছেন বলে সূত্রের খবর। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব’ বলা হলেও হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র আইনি বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল নয়। নয়াদিল্লি যদি মনে করে হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দিলে আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত স্বার্থ বিঘ্নিত হবে, তা হলে হাসিনার প্রত্যর্পণ আটকানোর একাধিক আইনি পথ রয়েছে। বস্তুতঃ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিলে বাংলাদেশে গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মতো ভারতের পূর্ব সীমান্তের রাজ্যগুলিতে নিরাপত্তাগত সঙ্কট তৈরি হতে পারে। এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে।
এদিকে দেশান্তরী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে উঠে আসা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এই রায় ‘পক্ষপাতদুষ্ট’। আইসিটি-র রায় ঘোষণার পর হাসিনার প্রথম প্রতিক্রিয়া, ”এই রায় বেআইনি ও জালিয়াতিপূর্ণ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত যা একটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।” হাসিনার কথায়, ” এই রায় অন্তর্বর্তিকালীন সরকারে থাকা চরমপন্থী ব্যক্তিদের নির্লজ্জতা ও খুনি মনোভাবের প্রতিফলন মাত্র। বাংলাদেশের শেষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করতে এবং আওয়ামী লিগকে রাজনৈতিক ভাবে ভেঙে দিতে এই কাজ করা হয়েছে।’’













