খবর
কাঠুয়ায় জঙ্গিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি
২৫ এপ্রিল, ২০২৫: পহেলগাঁওয়ের হামলাকারীরা কাঠুয়ায় লুকিয়ে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই ওই হামলাকারীদের চার জনকে কাঠুয়ায় দেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন এক মহিলা। তা জানার পর থেকেই শুক্রবার ওই এলাকায় এক বড় মাপের তল্লাশি অভিযান শুরু করল নিরাপত্তা বাহিনী। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ। পুলিশ কর্তাদের মতে, পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলে চিরুনি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। চিরুনি তল্লাশি চলছে পুলওয়ামা এবং বারামুলাতেও। এদিন বারামুলার এদিন পত্তনে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বাড়িতেও তল্লাশি চালায় বারামুলা পুলিশ। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এই তল্লাশি অভিযান চলে। বেশ কিছু অপরাধমূলক জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের ত্রালের ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ২০ কিলোমিটার হেঁটে পহেলগাঁও পৌঁছেছিল জঙ্গিরা, সূত্রের খবর অন্তত তেমনই। শুধু তা-ই নয়, ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাতে সহজে বৈসরনে পৌঁছোনো যায়, তার জন্য এক বিশেষ ধরনের মোবাইল অ্যাপ ‘আল্পাইন কোয়েস্ট’- এর সাহায্য নিয়েছিল তারা। সেই অ্যাপ অনুসরণ করে পাইনের ঘন জঙ্গল পেরিয়ে বৈসরনে ঢুকে পর্যটকদের উপর হামলা চালায় পাঁচ জঙ্গি। সূত্রের খবর, জঙ্গিরা যাতে গোয়েন্দাদের নজরদারিতে না আসে, তার জন্য পাক সেনাও মদত দিয়েছিল। পাক সেনার মদতেই এই বিশেষ অ্যাপ বানানো হয়েছে বলে দাবি। সূত্রের খবর, আগামী জুলাইয়ে শুরু হচ্ছে অমরনাথ যাত্রা। পাক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির লক্ষ্য ছিল তার আগে কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে পর্যটক এবং পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই পহেলগাঁওয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি।
এদিকে শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর, দেশের সব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন শাহ। সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের তাঁদের নিজ নিজ রাজ্যে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে রাজ্য থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে শাহের এই কথোপকথনের বিষয়ে কেন্দ্র বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি। উল্লেখ্য, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ করে নয়াদিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, সে দেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখা হচ্ছে। আগে দেওয়া ভিসাও বাতিল করার কথা জানিয়েছে ভারত। ভারত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, যে পাকিস্তানিরা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। এই আবহেই এ বার বিভিন্ন রাজ্যে থাকা পাকিস্তানিদের খুঁজে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিলেন শাহ।
সূত্রের খবর বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সর্বদল বৈঠকে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং সহ বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতা জানতে চান, বৈসরনের ওই পর্যটনকেন্দ্রে কেন কোনও সেনা জওয়ানকে মোতায়েন করা ছিল না৷ জবাবে সরকার পক্ষ জানায়, সাধারণ অমরনাথ যাত্রা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা শুরু হয়৷ সাধারণত জুন মাস নাগাদ সেই কাজ শুরু হয়৷ কিন্তু এ বছর স্থানীয় প্রশাসন অথবা পুলিশকে কিছু না জানিয়েই স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের গত ২০ এপ্রিল থেকে বৈসরনের ওই স্পটে পর্যটকদের নিয়ে যেতে শুরু করে বলে অভিযোগ৷ এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনও অন্ধকারে ছিল৷ যার ফলে বৈসরনের ওই স্পটে নিরাপত্তা বাহিনী জওয়ানদের মোতায়েন করা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার শ্রীনগরে গিয়ে জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী৷ পহেলগাঁও কাণ্ডের পর গোটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে৷ এমনই বার্তা দিলেন বিরোধী দলনেতা এদিন৷ রাহুল গান্ধি বলেন, ‘যা ঘটেছে, তা সমাজকে ভাগ করার জন্য করা হয়েছে৷ যাতে ভাই ভাইকে মারে৷ এই কারণেই প্রত্যেক ভারতীয়ের এখন ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত৷ যাতে সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্য সফল হতে না পারে৷’
পহেলগাঁওতে ভয়াবহ জঙ্গি হানায় বেছে বেছে সিংহভাগ ক্ষেত্রে হিন্দু পর্যটককে খুন করেছে জঙ্গিরা। অসহায়, নিরস্ত্র, নির্দোষ পর্যটককে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। গোটা দেশ জুড়ে উঠছে আওয়াজ শাস্তি দিতে হবে জঙ্গিদের। কাশ্মীরেও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে ঘটনার দিন থেকেই। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। তাঁরা বলছেন যে মারা গিয়েছে সে আমার ভাই। যারা মেরেছে তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন তারা আমাদের শত্রু। এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি শুক্রবার নিজের বাহুতে কালো ফিতে বেঁধে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করেন। এমনকী তিনি এদিন মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কালো আর্ম ব্যান্ড বিতরণ করেন। বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনও ইতিমধ্যেই এই জঙ্গি হানার তীব্র সমালোচনা করেছে। এমনকী রাস্তাতে নেমেও প্রতিবাদ জানান তাঁরা। তাদের দাবি এভাবে নিরীহ পর্যটকদের যারা হত্যা করেছে তারা মানবতার শত্রু।
Top Stories









