ভারতীয় সময় অনুযায়ী ঘড়িতে ঠিক বেলা ৩টে ১ মিনিটে পৃথিবীতে ফিরলেন শুভাংশু শুক্ল
- The Conveyor
- Jul 15
- 2 min read

১৫ জুলাই, ২০২৫: পৃথিবীতে ফিরলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল। ভারতীয় সময় অনুযায়ী ঘড়িতে ঠিক বেলা ৩টে ১ মিনিট। শুভাংশু শুক্ল-সহ চার নভশ্চরকে নিয়ে ভাসতে ভাসতে প্রশান্ত মহাসাগরে নেমে এল স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। আর প্রায় ১৪,০০০ কিলোমিটার দূরে লখনউয়ে বসে সেই দৃশ্যের সাক্ষী দেখে আবেগে ভেসে গেলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেনের বাবা শম্ভুদয়াল এবং মা আশা। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো উপকূলের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে শুভাংশুদের 'ড্রাগন' নামতেই ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে হাত নাড়াতে থাকেন তাঁরা। শুভাংশুর মায়ের চোখে যেন কিছুটা জলও দেখা যায়। তারইমধ্যে 'চক দে ইন্ডিয়া' গান বাজানো হতে থাকে। সেই গানে গলা মিলিয়ে জাতীয় পতাকা ওড়াতে থাকেন শুভাংশুর মা।
প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাকাশ স্টেশনে ১৮ দিন কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন। তিনি ছিলেন এই এক্সিওম-৪ মিশনের পাইলটের দায়িত্বে। রাকেশ শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন তিনি। নির্ধারিত সময়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে শুভাংশুদের ক্যাপসুল। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগো উপকূলে তখন অবশ্য রাত প্রায় আড়াইটে। এই সময়ে ক্যাপসুলের গতি ছিল ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার। ধীরে ধীরে তা কমতে কমতে ২৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় নেমে আসে। এর পর একে একে খুলে যায় চারটি প্যারাশ্যুট। ভাসতে ভাসতে প্রশান্ত মহাসাগরে নেমে আসে ‘ড্রাগন’। পৃথিবীর বুকে নামার সময়েই ক্যাপসুলের তাপমাত্রা প্রায় ১৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠের ৫.৭ কিমি উচ্চতা থেকে শুরু হয় প্যারাশুট প্রসেস। মূলত দু’ভাগে খুলল প্যারাশুট। ২ কিমি উচ্চতায় প্রধান প্যারাশুট খুলতেই ধীর গতিতে প্রশান্ত মহাসাগরের জলে নামল ড্র্যাগন।
প্রশান্ত মহাসাগরে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল ‘রিকভারি ভেহিকল’। তৈরি ছিল স্পেসএক্সের একটি দল। অবতরণের পরেই তারা শুভাংশুদের ক্যাপসুলের কাছে পৌঁছে যায়। এর পর ক্যাপসুলটিকে তুলে নেওয়া হয় জাহাজে। সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে একে একে বের করে নিয়ে আসা হয় মহাকাশচারীদের। প্রথমে বের করা হয় পেগি হুইটসনকে। তার পর ড্র্যাগন ক্যাপসুল থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে এলেন ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। ক্যাপসুলের ভিতর থেকে বেরিয়েই বাকিদের হাত ধরে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। সাফল্য ও স্বস্তির হাসি তখন লেগে ভারতের গর্ব শুভাংশুর মুখে।
উচ্ছ্বসিত পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স হ্যান্ডলে মহাকাশচারীকে শুভেচ্ছাবার্তা প্রধানমন্ত্রীর। তিনি লিখলেন, ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লাকে স্বাগত জানাতে গোটা দেশবাসীর সঙ্গে যোগ দিলাম আমিও। ঐতিহাসিক মিশন সেরে পৃথিবীতে ফিরলেন তিনি। শুভাংশুর আত্মত্যাগ, সাহস কোটি কোটি স্বপ্নের অনুপ্রেরণা। এই অভিযান আমাদের নিজস্ব মানব মহাকাশ অভিযান ‘গগনযান’-এর দিকে আরও একটি মাইল ফলক।’
তবে এখনই শুভাংশুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না। প্রায় তিন সপ্তাহ মহাকাশে কাটানোর ফলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মানিয়ে নিতে তাঁদের কিছুটা সময় লাগবে। সেজন্য সুনীতা উইলিয়ামসদের মতোই শুভাংশুদের এখন বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। চালানো হবে বিশেষ নজরদারি। তারপর তাঁরা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারবেন। সে জন্য আগামী সাত দিন বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে চার নভশ্চরকে।
অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের অন্যতম সদস্য হিসেবে ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু যে মহাকাশে কাটিয়ে এসেছেন, তা ‘গগনযান’-র ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো আগে কখনও মহাকাশে নভোশ্চর পাঠায়নি। সেই পরিস্থিতিতে শুভাংশু যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেন, তা ইসরোর গগনযান মিশনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।













Comments