দিল্লিতে দূষণ কমাতে কৃত্রিম বৃষ্টি বা ক্লাউড সিডিং
- The Conveyor
- Oct 28
- 2 min read

২৮ অক্টোবর ২০২৫: দিল্লিতে দূষণ কমাতে কৃত্রিম বৃষ্টি আনতে আকাশে উড়ল সেসনা বিমান! ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়ায় মঙ্গলবারই হতে পারে কৃত্রিম বৃষ্টি, জানালেন বিশেষজ্ঞরা। সময়মতো কৃত্রিম মেঘ তৈরি করে বৃষ্টি ঝরানোর দ্বিতীয় ধাপও সম্পন্ন হয়ে গেল। এই পুরো প্রক্রিয়াটি বৈজ্ঞানিকভাবে “ক্লাউড সিডিং” (Cloud Seeding) নামে পরিচিত। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি সেসনা বিমান কানপুর থেকে মেরঠের উদ্দেশে উড়ান দিয়েছে। সূত্রের খবর, মেরঠ পৌঁছনোর পর মঙ্গলবারই ক্লাউড সিডিং-এর মাধ্যমে বৃষ্টি ঘটার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।
মঙ্গলবার বেলায় ক্লাউড সিডিং-এর জন্য একটি সেসনা ২০৬এইচ বিমান উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেয়। গন্তব্য ছিল রাজধানীর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের খেকরা, বুরারি, ময়ূরবিহার এবং করোলবাগ। সেখানে বিমানের মাধ্যমে মেঘের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় সিলভার আয়োডাইড জাতীয় রাসায়নিক এবং ভোজ্য লবণ। কৃত্রিম ভাবে বাড়ানো হয় শুষ্ক মেঘের আর্দ্রতা। ড্রাই আইস এবং সিলভার আয়োডাইড, আয়োডাইজ়ড লবণ এবং রক সল্ট ব্যবহার করে ক্লাউড সিডিং করা হয়। দিল্লি সরকারের বহু প্রতীক্ষিত ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপটিও সেরে ফেলা হয়েছে। দিল্লির বুরারি, ময়ূরবিহার এবং করোলবাগে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এর জেরে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কৃত্রিম বৃষ্টি নামতে পারে দিল্লিতে।
তবে ক্লাউড সিডিং স্থায়ী সমাধান নয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মনু সিং এই বিষয়ে বলেন, ক্লাউড সিডিং কোনও স্থায়ী সমাধান নয় — এটি কেবল অস্থায়ী উপায় মাত্র। কারণ, বারবার এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করলে প্রকৃতির স্বাভাবিক আবহাওয়ার ধারা বদলে যেতে পারে, যার ফলে কৃষিক্ষেত্র ও মাটির স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তিনি আরও জানান, ক্লাউড সিডিং-এর মাধ্যমে যে বৃষ্টি হয়, তা স্বাভাবিক বৃষ্টির মতোই কাজ করে — কিন্তু এটি বারবার করা যায় না।
এ বিষয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা দূষণ রুখতে অনেক দিন ধরে কৃত্রিম বৃষ্টির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা প্রথম বার পরীক্ষামূলক ভাবে ক্লাউড সিডিং করছি। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তা হলে দিল্লিবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে। আমি প্রার্থনা করি, এই পরীক্ষা সফল হোক এবং দিল্লি এর থেকে উপকৃত হোক।”
প্রসঙ্গত দীপাবলিতে দিল্লিতে দেদার বাজি পোড়ানো হয়েছে। ধুলো-ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া দিল্লিতে হাঁফিয়ে উঠেছেন মানুষ। অনেকের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রেকর্ড অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল আটটায় দিল্লির গড় AQI ৩০৬ ছিল, যা ‘অতি খারাপ’ বা ‘very poor’ ক্যাটিগরিতে পড়ে। এই অবস্থায় দিল্লিকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে ক্লাউড সিডিং-ই একমাত্র উপায় বলে মনে করছে পরিবেশ দপ্তর। সেই কারণেই সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখে দিল্লি সরকার IIT কানপুরের সঙ্গে মৌ চুক্তি সাক্ষর করেছিল। সেই চুক্তি অনুসারে দিল্লি জুড়ে ৫টি ক্লাউড সিডিং ট্রায়াল হবে। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবারই হবে সেই ক্লাউড সিডিংয়ের প্রথম ট্রায়াল।
দিন দিন মাত্রা ছাড়াতে থাকা বায়ুদূষণের মোকাবিলা করতে দীর্ঘ দিন ধরেই দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’ করে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি ঝরানোর কথা ভাবছিল সরকার। এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আইআইটি কানপুরকে। গত সপ্তাহে এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপের পরীক্ষাটি করা হয়। সে দিনও কানপুর আইআইটি থেকে রওনা দেয় বিমান। কানপুর থেকে মেরঠ, খেকরা, বুরারি, সাদকপুর, ভোজপুর, আলিগড় হয়ে ফের কানপুরে ফিরে আসে বিমানটি। তবে ওই দিন বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো যায়নি। মঙ্গলবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সেই সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তা সম্ভব হয়, তা হলে ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকবেন দিল্লিবাসী! প্রথম বার সফল কৃত্রিম বৃষ্টি হবে দেশের রাজধানীতে।













Comments