প্রাণে বেঁচে গেলেন এক জন
- The Conveyor
- Jun 12
- 3 min read

১২ জুন, ২০২৫: অভিশপ্ত এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিমানে থাকা কমপক্ষে এক যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেন। তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানের ১১এ আসনে বসেছিলেন। বিশ্বাসকুমার রমেশ নামে ৪০ বছরের ওই ব্যক্তির আপাতত আমদাবাদের সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। জেনারেল বেডেই রাখা হয়েছে তাঁকে। ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস দাবি করেছেন, গত ২০ বছর ধরে লন্ডনে থাকছেন। স্ত্রী এবং সন্তানও লন্ডনে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে কয়েকদিনের জন্য ভারতে এসেছিলেন। আর দাদা অজয়কুমার রমেশের সঙ্গে লন্ডনে ফিরছিলেন। তবে বিমানে দাদার থেকে কিছুটা দূরে বসেছিলেন বলে জানিয়েছেন বিশ্বাস। দুর্ঘটনার পরে দাদার কী অবস্থা, তা জানেন না।
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে টেক অফের খানিকক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবাহী বিমান। লন্ডনগামী উড়ানের দুর্ঘটনায় অন্তত ২৪১ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা। সমস্যা বুঝতে পেরে পাইলট শেষ চেষ্টা করে 'মে ডে' কল ডেকেছিলেন। পাইলটের কাছ থেকে বিপদবার্তা পেয়ে এটিসি যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বিমানের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। পাইলট ‘মেডে কল’ ডাকেন যখন তাঁরা একটি জরুরি পরিস্থিতি বা বিপদজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, যেখানে দ্রুত সহায়তা প্রয়োজন। “মেডে” হল আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একটি বিপদ সংকেত। বৃহস্পতিবার বিকেলে গুজরাটের আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের মেঘানিনগর এলাকায় ২৪২ জন যাত্রী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। প্রবল বিস্ফোরণ। দাউ দাউ করে জ্বলে যায় বিমান। একটা আবাসিক এলাকায় মেডিকেল হস্টেলের ভেতর ভেঙে পড়ে বিমান। কার্যত চুরমার হয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমান। ভেঙে পড়া এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের চাকা একটি ভবনে আটকে থাকতেও দেখা গিয়েছে। বিমানটি আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে যাচ্ছিল এবং বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য ছিলেন। পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
মেঘানি নগরের বিজে মেডিক্যাল কলেজের ইউজি হোস্টেলের মেসে বিমানটি ভেঙে পরে। অনেক এমবিবিএস পড়ুয়া প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবর। ঘটনাস্থল থেকে ৫০ জনের বেশি আহতকে সিভিল হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। যাত্রীদের তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে। ফলে আশঙ্কা ছিলই। এরপর আজ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি আর পাতিল।
বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের অধিকাংশের লাশই চেনা যাচ্ছে না। দ্রুত তা শনাক্ত করার জন্য পরিবারের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা চাইল গুজরাত প্রশাসন। অহমেদাবাদের বিজে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিএনএ নমুনা দিতে বলা হয়েছে। দেহ শনাক্তকরণের কাজ তবে দ্রুত সম্ভব হবে। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছেন গুজরাতের স্বাস্থ্য দফতরের সহকারী মুখ্যসচিব ধনঞ্জয় দ্বিবেদী। বিমানের যাত্রীদের সম্বন্ধে খোঁজখবর করার জন্য দু’টি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে। যাত্রীদের আত্মীয়দের অপেক্ষা করার জন্য মেডিক্যাল কলেজের একটি ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বিমানের ইঞ্জিন হঠাৎ বিকল হয়ে যায়, যার ফলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোনও কারণ সামনে আসেনি। সম্ভাব্য দুটি বিষয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, একাধিক পাখির ধাক্কায় টেকঅফের পরে নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছতেই পারেনি ফ্লাইটটি। স্বাভাবিক ভাবেই ঘটে দুর্ঘটনা। দ্বিতীয়ত, যান্ত্রিক ত্রুটি। এক সূত্র উদ্ধৃত করে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘হিন্দুস্থান টাইমস’ জানিয়েছে, সম্প্রতি বিমানটির সংস্কারের কাজ হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে জানা যাচ্ছে, ফ্লাইটটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল (ইঞ্জিনিয়ারিং ফল্ট)। যদিও এ নিয়ে সরকার বা ফ্লাইট সংস্থার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিমান বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় লাজার বলেন, এই বিমানটি অপেক্ষাকৃত নতুন। মাত্র ১১ বছরের। তাই যান্ত্রিক সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কম।’ সবমিলিয়ে প্রকৃত কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তদন্তেই প্রকৃত কারণ সামনে আসবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
টাটা গ্রুপের পরিচালনাধীন এয়ার ইন্ডিয়া। সেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়েছে আহমেদাবাদে। টাটা গ্রুপ মৃতদের পরিবারের জন্য ১ কোটি টাকা করে দেবে। টাটা গ্ৰুপ জানিয়েছে, 'যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের সমস্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করব। আমরা নিশ্চিত করছি তাঁদের সব চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গেই বিজে মেডিক্যালের হস্টেল তৈরিতে আমরা সহায়তা করব।'













Comments