top of page

খগেন মুর্মুর অবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলবাজি শুরু হয়ে গিয়েছে, তবে দল- মত নির্বিশেষে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো উচিত সবার

ree


কলকাতা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫: নাগরাকাটায় বিক্ষোভের মুখে গুরুতর আহত হয়েছেন মালদা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তাঁর চোখের নিচের হাড় ভেঙে গিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকেরা। গতকাল সোমবারেই জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। আক্রমণের জেরে মাথা ফেটেছিল বিজেপি নেতার। জানা গিয়েছে, খগেন মুর্মুর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, খগেন মুর্মুর মুখে অস্ত্রোপচার করে পাত বসানোর প্রয়োজন হতে পারে। তাঁর চোখের নিচ থেকে নাকের দিক পর্যন্ত গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। সেই জায়গায় সাতটি সেলাই পড়েছে। প্রথমে পাঁচটি সেলাই দেওয়া হলেও পরে অবস্থা বুঝে আরও দুটি সেলাই দিতে হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে দিল্লির এইমসে স্থানান্তরের কথাও ভাবছেন পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, আগামী অন্তত পনেরো দিন কথা বলা বা মুখে চাপ পড়ে এমন কিছু করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে সাংসদের জন্য।

মঙ্গলবার শিলিগুড়ির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে হঠাৎই দেখতে চলে গিয়ে চমকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ খগেন মুর্মুর কাছে গিয়ে তাঁর সম্পর্কে বিশদে খোঁজখবর নিলেও গতকালের ঘটনায় আহত শিলিগুড়ির বিধায়কের শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনও কৌতূহলই দেখাননি মমতা৷ খগেন মুর্মুর বিষয়েও তিনি বলেছেন, 'তেমন গুরুতর কিছু হয়নি'। মুখ্যমন্ত্রী কেন শঙ্করকে দেখতে গেলেন না, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিজেপি-ও৷ দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘শঙ্কর ঘোষ বিধানসভার সদস্য, আমাদের মুখ্যসচেতক৷ তাঁর শরীর থেকে হয়তো সেভাবে রক্ত বেরোয়নি, তাই তাঁকে দেখতে যাওয়ার উৎসাহ দেখাননি মুখ্যমন্ত্রী৷ খগেন মুর্মুকে দেখতে গিয়ে উনি সৌজন্যের রাজনীতি করেছেন৷ আমরা এর মধ্যে ঢুকছি না৷

মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার ঘন্টাতিনেক পর মালদহ উত্তরের সাংসদকে দেখতে হাসপাতালে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন এ রাজ্যে বিজেপির নির্বাচনী ‘সহ-প্রভারী’ বিপ্লব দেব এবং অন্য বিধায়ক-সাংসদেরাও। খগেনকে মুখ্যমন্ত্রীর দেখতে আসার বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘শঙ্করের কাঁধের কাছের লিগামেন্ট ছিঁড়েছে। কাল বা পরশু হয়তো তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে আগামী এক মাস বাড়িতে বিশ্রামে থাকতে হবে তাঁকে।’’ খগেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপাতত ট্রাকশন দিয়ে ছ’সপ্তাহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা চলবে তাঁর।’’ এর পরে খগেনের শারীরিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হবে। পারিবারিক এবং দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আপাতত চার সপ্তাহ ওই হাসপাতালে থাকবেন খগেন। তার পরে তাঁকে দিল্লির এমসে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

এক রাতের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। এখনও পর্যন্ত দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা অন্তত ২৭। রবিবার দুপুরের পর থেকে তেমন বৃষ্টি না-হওয়ায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। পাহাড়ের রাস্তাঘাট এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি। ঘুরপথে পাহাড় এবং সমতলের মধ্যে গাড়ি চলাচল করছে। দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিকে। দুধিয়া থেকে মিরিকে যাওয়ার পথে একটি লোহার সেতু ভেঙে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় স্বচক্ষে দেখতে এ রাজ্যে আসেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজুও। শুভেন্দু এবং রিজিজু মঙ্গলবার দুপুরে মিরিকের বিপর্যস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। শুভেন্দু, রিজিজুর সঙ্গে ছিলেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তও।

এদিকে ১৫ দিনের মধ্যে মিরিকের দুধিয়ায় সেতু তৈরি করে দেওয়া হবে। মিরিকের দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দুর্গতদের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুধিয়ায় গিয়ে দুর্গত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিরিকের দুধিয়ায় ১৫ দিনের মধ্যে তৈরি করে দেওয়া হবে একটি অস্থায়ী সেতু, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়। পাশাপাশি স্থায়ী সেতু তৈরির কাজও চলবে, যা সময় নেবে প্রায় এক বছর।ভাল মানের একটি সেতু তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য রাজ্যের ব্যয় হবে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। দুর্যোগে ভেঙে যাওয়া অন্যান্য সেতুগুলিও নতুন করে নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মিরিককে ‘সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা’ বলে চিহ্নিত করে দ্রুত পুনর্বাসন ও পরিকাঠামো নির্মাণের নির্দেশও দেন তিনি।

উত্তরবঙ্গে বন্যার ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন আরও এক বিজেপি বিধায়ক। খগেন মুর্মু, শঙ্কর ঘোষের পর মঙ্গলবার হামলার শিকার হলেন বিজেপি বিধায়ক মনোজ কুমার ওঁরাও। থাপ্পড় মারা হয় তাঁর নিরাপত্তায় থাকা CISF জওয়ানকেও। লাঠি কেড়ে নেওয়া হয় অন্য CISF জওয়ানের। মঙ্গলবার দুপুরে সরগরম হয়ে উঠল ভারত-ভুটান সীমান্তের বন্যা দুর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম কুমারগ্রাম ব্লকের বিত্তিবাড়ি। সেখানে ত্রাণ বিলি করতে এসে হামলার মুখে খোদ কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজ কুমার ওঁরাও। বিজেপি বিধায়ক মনোজ কুমার ওঁরাওয়ের অভিযোগ, এদিন ত্রাণ নিয়ে বন্যা কবলিত দুর্গম বিত্তিবাড়িতে পৌঁছনোর পরই তাঁকে ঘিরে গো-ব্যাক স্লোগান দিতে থাকেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। শুধু তাই নয়, তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা CISF জওয়ানদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। জওয়ানদের হাতের লাঠি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই শুরু হয়ে যায় ধস্তাধস্তি।

এখন দেখার, কত তাড়াতাড়ি এই দুর্যোগ থেকে উত্তরবঙ্গবাসী উদ্ধার পায়। যে সাংঘাতিক পরিমান ক্ষতি হয়েছে পাহাড় তথা ডুয়ার্স অঞ্চলে, তা পূরণ করা না গেলেও যত শীঘ্র সম্ভব সাধারণ মানুষের জীবন যাতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তার চেষ্টা করতে হবে দল-মত নির্বিশেষে।

 
 
 

Comments

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating

Top Stories

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page