অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ, সাত দফা নির্দেশ দিয়ে কলেজকে চিঠি দিল উচ্চ শিক্ষা দফতর
- The Conveyor
- 13 minutes ago
- 3 min read

কলকাতা, ৩০ জুন, ২০২৫: অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকছে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ। কলেজের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে কলেজ বন্ধ থাকার কথা। আগামী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধই থাকবে কলেজ। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আপাতত গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তক্রমে সমস্ত বিএ.এলএলবি ও এলএল.এম ক্লাস বন্ধ থাকবে। কলেজ চত্বরে কোনও পড়ুয়া প্রবেশ করতেও পারবেন না বলেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার ছ’দিনের মাথায় কড়া পদক্ষেপ সরকারের। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজকে চিঠি দিল উচ্চ শিক্ষা দফতর। চিঠিতে অস্থায়ী কর্মীকে বহিষ্কার, মূল অভিযুক্ত ‘এম’-কে বহিষ্কার এবং বাকি দুই পড়ুয়াকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে মূলত সাত দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেগুলি দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সাতটি দফা যথাক্রমেঃ ১) মূল অভিযুক্ত অস্থায়ী কর্মী ‘এম’কে বহিষ্কার করতে হবে। ২) গণধর্ষণের ঘটনায় প্রথম বর্ষের যে দুই ছাত্র ‘জে’ এবং ‘পি’ যুক্ত রয়েছেন তাঁদের অবিলম্বে কলেজ থেকে বরখাস্ত করতে হবে। ৩) প্রাক্তন পড়ুয়া বা কোনও বহিরাগত কেউ কলেজের মধ্যে ঢুকতে পারবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে। ৪) নিরাপত্তারক্ষীর যে সংস্থা ছিল তাদের শো-কজ করতে হবে। কেন ওই সংস্থাকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হবে না তাদের কাজের গাফিলতির জন্য তার জবাব দিতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে শো-কজ করতে হবে। ৫) কলেজে কলেজে যে বিশাখা কমিটি বা ‘ইন্টারনাল কমপ্লেন্ট’ কমিটি রয়েছে তাদের কলেজে বৈঠক ডাকতে হবে। ৬) কলেজে অফিসের কাজের সময়ের পর কলেজ ক্যাম্পাস ফাঁকা রাখতে হবে। ৭) কলেজের মধ্যে আরও সিসিটিভি প্রয়োজন কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
সোমবার নিরাপত্তার দাবিতে কলেজে এসেছিলেন একদল পড়ুয়া। উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ক্যাম্পাসে জমায়েত করেছেন পড়ুয়ারা। কিন্তু উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে অভিযোগ। তাঁরা উপাচার্যকে দেওয়ার জন্য একটি ডেপুটেশন তৈরি করেছেন। কলকাতার ১০ থেকে ১২টি আইন কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনী সোমবার জড়ো হয়েছিলেন কসবায়। দুষ্কৃতীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কসবা থানা থেকে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ পর্যন্ত হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় তিন অভিযুক্তই তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নির্যাতিতা নিজেও টিএমসিপির সদস্য ছিলেন। অভিযোগ, গত ২৫ জুন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে তাঁকে ধর্ষণ করেন ‘এম’। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, প্রথমে ইউনিয়ন রুমের ভিতর তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করা হয়। পরে রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন ‘এম’। বাইরে পাহারায় ছিলেন বাকি দু’জন, ‘জে’ এবং ‘পি’। কলেজের মেন গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ছাত্রীকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। রক্ষীর কাছে সাহায্য চেয়েও কোনও লাভ হয়নি। এর পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। কসবার কলেজের এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।
ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ওই কলেজেরই দু’জন ছাত্র এবং এক জন প্রাক্তনীকে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের তরফে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। নির্যাতিতাকে কলেজে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করেছে পুলিশ।
সোমবার কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে একগুচ্ছ প্রশ্ন করল বিজেপির ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’। রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার নিজেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার প্রেরিত দলটিকে নিয়ে সোমবার দেখা করলেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার সঙ্গে। তবে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে অসন্তোষ প্রকাশ করেননি সুকান্তরা। কারণ ধৃতদের সাজা হবেই, সে বিষয়ে কমিশনার বর্মা আশ্বস্ত করেছেন সুকান্ত-সহ গোটা ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’কে। মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যপাল সিংহ, আর এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখী, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেব এবং মননকুমার মিশ্রকে নিয়ে গঠিত চার সদস্যের ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’ আজ সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে গিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন। নির্যাতিতার এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েও দলটির সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের কথা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিজেপি নেতারা কসবার আইন কলেজে যান। সেখানে প্রবেশের আগে অবশ্য প্রথমে তাঁদের পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়। মিনিট ১৫ তাঁদের সঙ্গে পুলিশ আধিকারিকদের বচসা চলে। তার পরে বিজেপি নেতৃত্ব-সহ নড্ডার প্রেরিত দলের সদস্যদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়।
Comments