top of page

প্রশ্নের মুখে শিক্ষার অধিকার

আসলে শিক্ষা আমাদের সকলের জন্মগত অধিকার। সংবিধান অনুসারে মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার কী আমরা আদৌ বাস্তবে পাচ্ছি? বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের রাজ্যবাসীর এই শিক্ষার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা কী খুব ভুল হবে? চাকরির দুনিয়ায় দুর্নীতি চক্ষুলজ্জাহীনভাবে দাঁত -নখ বের করে দিয়েছে। গত প্রায় এক দশক ধরে পাশ করা সব তরুণ-তরুণীরা সহ শিক্ষক- শিক্ষিকারা যে এসএসসি তে নিয়োগ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করছিলেন, তার পরিণতি যে এমনভাবে সকলের সামনে দেখা দেবে, তা বোধহয় অতি বড় ভবিষ্যৎদ্রষ্টাও ভাবতে পারেননি।

সমস্যা যে কিছু একটা হচ্ছে, তা তো সকলেরই জানা ছিল, কিন্তু তা এমন ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে তার ধারণা কারোই ছিলনা। যদিও বিভিন্ন রকম কেস চলার পর পরীক্ষায় স্বচ্ছতা আনতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার তথা পর্ষদ উভয়ই। তা সত্ত্বেও ফাঁক কিছু থেকেই যাচ্ছে। নিশ্চয়ই সবটা সমাধান হবে এমন আশাই করব। তবে শঙ্কা তো থেকেই যায়। সদ্য নতুন নিয়ম করা হল। হাই কোর্ট বলেছে, গ্রামের স্কুলে শিক্ষক- পড়ুয়াদের অনুপাত অনেক কমে গেছে তাই শহর থেকে শিক্ষক গ্রামে পাঠাতে হবে। এসএসসিও শিক্ষক- পড়ুয়া অনুপাত ঠিক রাখতে কলকাতার শিক্ষকদের জেলায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এইবারে স্বাভাবিকভাবেই একাংশ শিক্ষকদের বক্তব্য, তবে উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলির ব্যবস্থা হল কেন? যা এক বছরের মধ্যেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে ভুল সিদ্ধান্তের কারনে। কারন, ওই পোর্টালের মাধ্যমে বহু শিক্ষক বদলি নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছেন। তৈরি হয়েছে শিক্ষক- পড়ুয়া অনুপাতে তুমুল হেরফের।

এবারে সেই যে শিক্ষককুল শহরে চলে এলেন, পড়ুয়াদের আতান্তরে ফেলে, সেই পড়ুয়ারা কী দোষ করেছিল? তাদের সঠিক শিক্ষা দানে রাজ্য অপারগ হল কেন? এখন টনক নড়েছে। এবারে সব কিছু মিটিয়ে রাগান্বিত হয়ে যেই শিক্ষকরা গ্রামে যাবেন, তাঁরা যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে পড়ুয়াদের ঠিক ঠিক পাঠদান করবেন, তা কী হলফ করে বলা যায়? এমনিতেই চারদিকে আমরা বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাই, শিক্ষকদের নিজেদেরই শিক্ষার মান অতি নিম্ন মানের। তো ওই পড়ুয়ারা তো কোনও দোষ করেনি, তাহলে তাদের এমন সাজা কেন পেতে হবে?

আচ্ছা, উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে একঝাঁক তরুণ-তরুণী তাদের ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াবে কলেজে ভর্তি হয়ে। সেক্ষেত্রে ভর্তিতে স্বচ্ছতা আনতে রাজ্য সরকার নতুন পোর্টাল এনেছে, যাতে ওই পোর্টালের মাধ্যমেই নিজেদের এনরোল করে সব কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বেশ ভালো কথা। কিন্তু এখানেও কী সব ঠিক-ঠাক চলছে? রাজ্যের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যই নেই। ভাবুন একবার। কীভাবে সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে? আদৌ কী তা হওয়া সম্ভব? হাঁড়িকাঠে জবাই হচ্ছে কারা? সেই পড়ুয়ারা! তাদের কী দোষ? কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষা হয়ে রেজাল্ট বেরোবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আবার পড়ুয়ারা ভর্তি হতে যাচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো প্রযুক্তিগত পড়ার জগতে। সেখানেও সেই একই অবস্থা। মার্চ মাসের শুরুতেই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মৌলানা আবুল কালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও ইস্তফা দিয়েছেন একটি মামলার ভিত্তিতে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অস্থায়ী উপাচার্য পেলেও (যদিও ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় যথা- ডায়মন্ড হারবার, রবীন্দ্রভারতী এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে) অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাকাউট উপাচার্যহীন ছিল এতদিন। সদ্য গত সপ্তাহেই অস্থায়ী নতুন উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছেন।

এইবারে ভাবুন একবার। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও রাজ্যের তাপ- উত্তাপ নেই। এখানে ভর্তি হওয়াই শুধু নয়, আটকে রয়েছে বিভিন্ন সেমেস্টারের রেজাল্ট। পাশাপাশি পরবর্তী সেমেস্টারের পরীক্ষা নিয়েও তৈরি হয়েছে টালমাটাল পরিস্থিতি। কারন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ছাড়া তা করা যায়না। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা হয়। সেই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান উপাচার্য। সেমেস্টারের রেজাল্ট না বেরোলে যারা পাশ করে সদ্য ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কোনও কোম্পানিতে চাকরিতে জয়েন করবে, তারা তা করতে পারবেনা। তাহলে বিভিন্ন কোম্পানিতে রাজ্যের সম্পর্কে কী ধারনা তৈরী হবে? তাছাড়া যারা বিভিন্ন কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় বসবে তাদের ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যা একটি সময়ের মধ্যেই জমা দিতে হয়। আটকে রয়েছে রেজাল্ট বেরোনোর প্রক্রিয়া। তাদের ভবিষ্যতের কী হবে? দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিদেশে বহু পড়ুয়া যায় উচ্চশিক্ষার পাঠ নিতে। তাদের কী হবে? বছরটা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তার দায় কার? পড়ুয়াদের? এখানেও ক্ষুন্ন হচ্ছে শিক্ষার অধিকার।

তাহলে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কারনে স্কুলের গন্ডি থেকে কলেজের গন্ডি সব জায়গায় পড়ুয়ারা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজ্য সরকার একটু কী ভেবে দেখবেন? আশা করব খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।


Top Stories

bottom of page