top of page

নতুন বছরের বইমেলা সকলকে এক সূত্রে গাঁথার প্রয়াস

'নববর্ষ বই উৎসব'। নতুন বছরে বইপ্রেমীদের এক দারুন উপহার দিলেন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড। তাদের ব্যবস্থাপনায় ফের অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বইমেলা। মূলত দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখেই এই উৎসব, এমনই জানানো হয়েছে গিল্ডের পক্ষ থেকে। ছোট- বড় মিলিয়ে প্রায় ৮৪টি স্টল রয়েছে এই বইমেলায়। দুঃসহ গরমকে উপেক্ষা করেই প্রতিদিন বইপ্রেমীরা উপস্থিত হচ্ছেন এখানে।


যদিও আমরা গেলাম শনিবার, ২২শে এপ্রিল। তুলনামূলক গরম খানিক কম ছিল। বইমেলা চত্বর ছিল লোকসমাগমে পরিপূর্ণ। ছোট পাবলিশারদের মতোই নামি পাবলিশারেরাও কিন্তু নিজেদের বইয়ের সম্ভার নিয়ে হাজির সেখানে। আয়তনে বিপুল না হলেও স্বল্প পরিসরে পরিচ্ছন্ন এবং সুপরিকল্পিত সুন্দর আয়োজন তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ছিল লিটল ম্যাগাজিনের স্টলও। যদিও ওই দিন আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি দেখতে পেলাম না। তবে ছড়ানো ছিটোনোভাবে সাহিত্যিক মহলের উপস্থিতি বিশেষভাবে নজর কাড়ল। উল্লেখনীয় হল সুলেখা কালির স্টলটি। তারা যেভাবে নিজেদের নতুন মোড়কে উপস্থাপিত করে আমাদের ছোটবেলার নষ্টালজিয়াকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, তা প্রশংসার যোগ্য।


আসলে বইমেলা একটি মিলনস্থল। যাঁরা বই ভালোবাসেন, তাঁরা এমন জায়গায় সময় কাটাতে পারলে খুশি হন। তাছাড়া রয়েছে বইবিমুখ এই প্রজন্মকে বইমুখী করার এক সুন্দর প্রয়াস। ছোট থেকেই যদি শিশুরা বাবা-মায়ের হাত ধরে এমন বইমেলাগুলিতে নিয়মিত যায়, তাহলে বিভিন্ন রকম বই তারা নিজেরাই দেখে, পড়ে কিনতে পারে। বর্তমান সময়ে তো আমরা প্রচন্ড পরিমানে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছি। এভাবে নেড়ে-ঘেঁটে জিনিস কেনা আর হয়েই ওঠেনা। বেশিরভাগ বাজারই হয় অনলাইনে। সময়ের স্বল্পতাই বলুন বা স্ট্যাটাস মেইনটেইন, আমরা এতেই বেশি সাবলীল এখন। এ-হেন সময়ে এই ধরনের বইমেলাগুলি শিশু-কিশোরদের একটা আলাদা জগৎ তৈরী করে দিতেই পারে। ছোট থেকেই যদি আমরা অভিভাবকরা ছোটদের বই পড়ার অভ্যাসটা ধরিয়ে দিতে পারি, হলফ করে বলা যায়, সুনাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আমরা এক ধাপ এগিয়ে রাখতে পারব। মোবাইল- নেট- ওটিটি প্ল্যাটফর্ম- ভিডিও গেম শৈশব, কৈশোরের কুঁড়িতেই ঝরিয়ে দেওয়ার মোক্ষম উপাচার। সেগুলো থেকে শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার, আগলে রাখার দায়িত্ব আমাদের অভিভাবকদেরই নিতে হবে।


নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, ছোট থেকে প্রতি বছর বইমেলায় নিয়ে যাওয়া, বই পড়তে, বই কিনতে উৎসাহিত করার মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের সন্তানের মধ্যে গল্পের বই পড়ার অভ্যাসটা তৈরি করতে পেরেছি। আর বর্তমানের ৯৯% বাচ্চাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াতে হয় যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে। সেখানে বাংলার সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতে পারে কিন্তু একমাত্র বাংলা গল্পের বই। সেক্ষেত্রে বইমেলার অবদান যথেষ্ট। এত বাংলা প্রকাশনীতে বাংলা বইয়ের সম্ভার ছোটদের বাংলা বই পড়ার প্রতি আলাদা আকর্ষণ তৈরি করে, যা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।


বইমেলাতে অপরিহার্যভাবে থাকে ছবি আঁকিয়েদের একটা অংশ। পরিসরে ছোট হলেও শিল্পীরা কিন্তু তাঁদের নিজেদের হাতের কাজ নিয়ে বসেছেন এই মেলাতেও। বিকিকিনিও অবশ্যই হচ্ছে সেখানে। রয়েছে হাতের কাজের সম্ভার। যা চোখকে আনন্দ দেবার পাশাপাশি নিজের ঘরের জন্য কিছু সংগ্রহ করে নেওয়ারও অবকাশ রাখে। প্রশংসা করতে হয় মেলার সাজসজ্জার বিষয়টি। স্টলের বাইরের দিকে ছবিসহ বেশ ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে মেলায় আগত মানুষদের জ্ঞাতার্থে। রয়েছে সুন্দর আলোয় সজ্জিত জ্ঞানবৃক্ষের একটি মোটিফ, যা বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দেরও যথেষ্ট আকর্ষণ করবে।


এছাড়াও নতুন লেখক- কবিদের বই প্রকাশের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে স্বনামধন্য লেখকদের মেলবন্ধনের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান বহন করে এই বইমেলা। তাই প্রতি বছর মূল বইমেলার পাশাপাশি এমন নববর্ষের বইমেলা আমাদের নতুনভাবে উৎসাহী করে তুলবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।


Top Stories

bottom of page