যাত্রী নিরাপত্তা তলানিতে এসে ঠেকেছে রেল ব্যবস্থায়, ফের প্রশ্ন তুলে দিল কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনা
কলকাতা, ১৭ জুন, ২০২৪: সোমবার সকালে শিয়ালদাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। যাত্রীবাহী এক্সপ্রেস ট্রেনের পেছনে ধাক্কা দিল মালবাহী ট্রেন। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে যাত্রা শুরু হওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস যাচ্ছিল শিয়ালদা অভিমুখে। রাঙাপানি স্টেশন ছেড়ে এগোনোর পরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বন্ধ থাকায় খুব ধীর গতিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চলছিল।
রেল সূত্রে খবর, সকাল ৮টা ৪২ মিনিট নাগাদ রাঙাপানি স্টেশন থেকে ছাড়ে মালগাড়িটি। তার পরই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে। কাঞ্চনজঙ্ঘার জন্য ছিল বিশেষ কাগুজে ছাড়পত্র। রেলের পরিভাষায় যাকে ‘পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট’ (পিএলসিটি) বলে। এবারে প্রশ্ন উঠছে, মালগাড়িও কী সেই একই ম্যানুয়াল পেয়েছিল? তাহলে একই লাইনের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হল কিভাবে? তার মধ্যেও প্রশ্ন থাকে। এই রকম সিগন্যাল ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ১০ কিমি প্রতি ঘন্টার বেশি স্পিডে ট্রেন চলার নিয়ম নেই। তাহলে মালগাড়ি দ্রুত বেগে ছুটছিল কেন? নইলে তো সজোরে ধাক্কা লাগার কথা নয়। নাকি মালগাড়ির চালক সিগন্যাল ভুল করে একই লাইনে ঢুকে পড়েছিলেন? মালগাড়ির চালক যেহেতু ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন, তাই পুরো বিষয়টি তদন্ত না করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ঠিক হচ্ছে না।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখপাত্র সব্যসাচী দে জানিয়েছেন, নিহত নয় জনের মধ্যে তিনজন রেলকর্মী। লাইনচ্যুত যাত্রীবাহী ট্রেনের পিছনের চারটি বগির মধ্যে কেবল একটি যাত্রীবাহী কোচ ছিল, বাকি তিনটি জিনিসপত্র বহন করছিল। তিনি আরও জানান, কনটেইনার বহনকারী কার্গো ট্রেনের পাঁচটি ওয়াগনও লাইনচ্যুত হয়েছে। সব্যসাচী দে আরও বলেন, ‘‘কী কারনে দুর্ঘটনা, এই বিষয়টা এখনও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না৷ এখনই এটা বলতে পারব না। আগে আমাদের কাজ উদ্ধারকাজের পর পরিষেবা চালু করা। তদন্ত ছাড়া এটা বলা সম্ভব নয়। তবে অবশ্যই সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে তদন্ত হবে, তখনই এটা জানা যাবে।’’ তিনজন রেলকর্মীর মধ্যে মালগাড়ির চালক, কাঞ্চনজঙ্ঘার গার্ড এবং একজন পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর মারা গিয়েছেন। ৩৫ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। বেশ কিছু আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে। একজনের অবস্থা আশংকাজনক বলেও জানা গিয়েছে।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের যে কামরাগুলি অক্ষত ছিল সেগুলি ঘটনাস্থল থেকে বাদ দিয়ে ফের শিয়ালদার দিকে রওনা দিয়েছে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দফায় দফায় ঘটনার আপডেট নিচ্ছেন তিনি।
ইতিমধ্যে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এদিন বিকেলেই উত্তরবঙ্গে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তিনি আহত যাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন। চিকিৎসার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে সম্বন্ধে খোঁজ নেন তিনি। আহতদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এমনকি, জুনিয়র ডাক্তাররা আহত রোগীদের জন্য অমানসিক পরিশ্রম করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় আহতদের দেখে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায় রেলের সমালোচনায় সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার বক্তব্য, বন্দে ভারতের নামে শুধুই প্রচার হচ্ছে। আর কিছু হচ্ছে না। চূড়ান্ত অবহেলার মুখে ভারতীয় রেল।
মমতার অভিযোগ নিয়ে রেলমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এটা রাজনীতির সময় নয়। আগে আমাদের উদ্ধারকাজে নজর দিতে হবে।’’ মমতা অবশ্য দুর্ঘটনাস্থলে যাননি। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। তাই আমি ওখানে যাচ্ছি না" সকালে মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো চোপড়ার বিধায়ক হামিদুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।
রাতে শিয়ালদায় এসে পৌঁছবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। শিয়ালদা থেকে যাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে। রাত ১২টা নাগাদ শিয়ালদা স্টেশনে হেল্পডেস্ক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে ছোট মাঝারি ও বড় সরকারি বাসের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে শিয়ালদা স্টেশনে।
Comments