top of page

মোদীর ধ্যান কর্মসূচি নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে না, জানিয়েছে কমিশন




৩১ মে, ২০২৪: আগেও দু’বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শেষে আধ্যাত্মিক সফরে বেরিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এবার মোদী নির্বাচনী প্রচার শেষ হওয়ার পর কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রককে ধ্যান করার জন্য বেছে নিয়েছেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শেষে তিনি (তখনও মোদী প্রধানমন্ত্রী হননি) গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের প্রতাপগড়ে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ২০১৯ সালে প্রচারের শেষে গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে।

বিবেকানন্দ রকে নরেন্দ্র মোদীর ধ্যানের এই কর্মসূচি নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের সামিল বলে দাবি বলে আপত্তি ছিল বিরোধীদের। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, মোদীর ধ্যান কর্মসূচি নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে না। তারপরই মোদীর ধ্যানের ছবি প্রকাশ্যে আসে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারে নির্বাচনী প্রচারের শেষ ঘণ্টা বাজতেই তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে পৌঁছে যান নরেন্দ্র মোদী। সেদিন সন্ধ্যাতেই ধ্যানে বসেন তিনি। আগামীকাল অর্থাৎ ১ জুন ধ্যান ভাঙবেন মোদী। এই সময়ের মধ্যে তিনি একবারও ধ্যান মণ্ডপ থেকে বের হবেন না। ওম মন্ত্র জপ করছেন তিনি। এই ৪৫ ঘণ্টার ধ্যানের সময় কোনও অন্ন গ্রহণ করবেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী। শুধুমাত্র ডাবের জল, আঙুরের জ্যুস ও অন্যান্য পানীয় পান করবেন এই সময়কালে। এই পুরো সময়টাই মৌন ব্রত পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী।





স্বামীজি তথা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগের কথা সর্বজনবিদিত। একটা সময়ে স্বামী আত্মস্থানন্দ মহারাজের ‘সেবক’ ছিলেন মোদী। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন। তবে মোদীর মূল সংগঠন আরএসএসের সঙ্গেও কন্যাকুমারীর গভীর যোগ রয়েছে। যে ভাবে অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির দীর্ঘ আন্দোলনে যোগ ছিল আরএসএসের, ততটা না হলেও কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ শিলা স্মারক স্থাপনেও ছিল। ১৯৭০ সালে কন্যাকুমারীতে শিলা স্মারকের উদ্বোধন হয়। তাতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন একনাথ রানাডে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তেই তিনি আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৩৭ সালে। একের পর এক দায়িত্ব পালন করতে করতে সঙ্ঘের পূর্বক্ষেত্রের প্রচারক হন রানাডে। স্বামীজির জন্মশতবর্ষের বছর অর্থাৎ ১৯৬২ সালেই শুরু হয়ে যায় কন্যাকুমারীতে শিলা স্মারক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। ‘বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল কমিটি’র সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছিল একনাথকে।

অনেক বাধা সরিয়ে রক মেমোরিয়াল স্থাপনের অনুমতি মেলার পর অর্থসংগ্রহের জন্য নতুন পদ্ধতি নেন একনাথ। প্রস্তাবিত স্মারকের যাবতীয় বিবরণ দিয়ে একটি ‘ফোল্ডার’ ছাপিয়ে গোটা দেশে বিক্রির উদ্যোগ নেন। আরএসএস সারা দেশে এই ভাবে অর্থসংগ্রহ করে। কারণ, একনাথ চেয়েছিলেন, কন্যাকুমারীর স্মারক নির্মাণে গোটা দেশের ‘সহযোগ’ থাক। ঘটনাচক্রে, একনাথের দেখানো সেই পথেই অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য অর্থসংগ্রহ করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। একনাথ যখন ওই কাজ করছেন, তখনই তাঁর সান্নিধ্যে আসেন মোদী। সঙ্ঘের প্রচারক হিসাবে সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি একটা সময়ে তিনি সরাসরি একনাথের সহযোগীও হন। তিনি একনাথের জীবনাদর্শ থেকে প্রেরণা পেয়েছেন, একথা নিজেই বলেছে নরেন্দ্র মোদী। কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ শিলায় মোদী যখন ধ্যানে বসেছেন, তখন বিজেপি এবং সঙ্ঘের একাংশ ‘একনাথ-সংযোগ’ খুঁজে পাচ্ছেন।





ভারতের দক্ষিণতম প্রান্তে তামিলনাড়ুর মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে দু’টি পাথর রয়েছে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, তারই একটি শিলায় দেবী কন্যাকুমারী (পার্বতী) শিবের জন্য তপস্যা করেছিলেন। আর ইতিহাস বলে, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর আমেরিকা সফরের আগে শিলাটির উপরে বসে টানা তিন দিন ধ্যান করেছিলেন। ১৮৯২ সালে সেখানেই তিনি কন্যাকুমারী সঙ্কল্পের ভিত্তি হিসেবে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন বলেও জানা যায়।

ওই স্মারক নির্মাণে সাফল্যের পরে একনাথ বিবেকানন্দকে নিয়ে চর্চার জন্য নতুন একটি সংগঠন গড়েন। ‘বিবেকানন্দ কেন্দ্র’ নামের সেই সংগঠনের সঙ্গেও গভীর যোগ ছিল মোদীর। কাজেই বিভিন্ন দিক দিয়ে দেখতে গেলে এই বিবেকানন্দ রকে মোদীর ধ্যানে বসার বিবিধ আঙ্গিকে গুরুত্ব রয়েছে। ইতিমধ্যেই এক দিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। আগামীকাল এই সময়ের মধ্যে শেষ পর্বের ভোট সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর আধ্যাত্মিক এই সফরও পূর্ণ হয়ে যাবে।

Comments

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating

Top Stories

bottom of page