আজ চাঁদের দক্ষিণ মেরু স্পর্শ করার মাহেন্দ্রক্ষণে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে গোটা দেশ
![](https://static.wixstatic.com/media/d468f3_620ceba908824657b5f70d1af4fe9449~mv2.png/v1/fill/w_600,h_450,al_c,q_85,enc_auto/d468f3_620ceba908824657b5f70d1af4fe9449~mv2.png)
২৩ অগাস্ট: আজ সন্ধ্যায় চন্দ্রযান- ৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরু স্পর্শ করবে। সারা দেশ মায় সারা বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুজো, হোম-যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যাতে সফলভাবে চন্দ্রযান- ৩ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করতে পারে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ তথা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আজ লাইভ দেখানো হবে এই অবতরণের প্রক্রিয়া, যা ইসরো টেলিকাস্ট করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান ২ অভিযানের সময় সফট ল্যান্ডিং করতে ব্যর্থ হয়েছিল ল্যান্ডার। তাই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারে অন্যরকমভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে চন্দ্রযানকে। চাঁদের চারপাশে কক্ষপথ ২৫X১৩৪ কিলোমিটার কমাতে গত রবিবার চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডারের চূড়ান্ত ডিবুস্টিং হয়েছে।
শেষ মুহূর্তের সবচেয়ে কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং ১৫ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই চন্দ্রযান-৩ যাবতীয় কাজকর্ম করবে। ধাপে ধাপে গতি কমানো হবে বিক্রমের। আর এভাবেই চাঁদের থেকে দূরত্ব কমানো হবে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডারের। শেষ ২০ মিনিটে চন্দ্রপৃষ্ঠের দিকে পালকের মতো করে নেমে আসার কথা বিক্রমের। নামার সময় চাঁন্দ্রপৃষ্ঠের সমান্তরাল অবস্থান থেকে ল্যান্ডারটি সামান্য কাত হয়ে নামবে। ইসরো প্রধান দাবি করেছিলেন যদি অবতরণের সময় সব সেন্সর খারাপ হয়ে যায়, তাহলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ, 'ব্যাকআপেরও ব্যাকআপ' পরিকল্পিত আছে। বলা হচ্ছে, বিক্রম যদি জোরেও আছড়ে পড়ে, তাও এটির ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।
জানা গিয়েছে, অবতরণের গোটা সময়টা বিজ্ঞানীরা নিজেরা কোনও কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন না৷ পুরোটাই হতে চলেছে, AI, অর্থাৎ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে৷ চন্দ্রযানের ভিতরে আগে থেকেই রেখে দেওয়া সফটঅয়্যার প্রোগ্রাম চন্দ্রপৃষ্ঠে তার ‘সফট অ্যান্ড সেফ ল্যান্ডিং’ করাবে৷ ৬১৫ কোটি টাকা খরচে বিজ্ঞানীদের নিরলস অধ্যাবসায়ে তৈরি চন্দ্রযান ৩ যদি এবার সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করতে পারে, তবে রাশিয়া, আমেরিকা ও চিনের পর ভারতই হবে চতুর্থ দেশ, যে চাঁদের মাটিতে তাদের চন্দ্রযান অবতরণ করাতে সফল হবে। ২০০৯ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নাসা আগেই জলের বরফের সন্ধান পেয়েছিল৷ চাঁদের এই বরফ ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ এর থেকে চাঁদকে ভবিষ্যতে বসবাস যোগ্য করা সম্ভব হবে কি না, তা খানিকটা আন্দাজ করা যাবে৷ দেখা হবে, এই বরফ থেকে পানীয় জল তৈরি করা সম্ভব কি না, জল ভেঙে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন তৈরি করা যায় কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে৷
২৩ অগস্ট থেকে টানা ১৪ দিন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে দিন থাকবে। সূর্যের আলোয় ঝকঝক করবে চন্দ্রপৃষ্ঠ।চাঁদের এক মাস হয় পৃথিবীর হিসাবে ২৮ দিনে। এক চান্দ্রমাসে টানা ১৪ দিন রাত আর ১৪ দিন দিন থাকে। চন্দ্রযান যদি এমন সময়ে অবতরণ করে যখন চাঁদ অন্ধকারে ডুবে থাকবে, তা হলে, এটি কাজ করবে না। তাই সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই ল্যান্ডার এবং রোভারটি চাঁদের বুকে নামাতে চাইছে ইসরো। ২৩ অগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুতে দিন থাকবে। ফলে সৌরশক্তি ব্যবহার করে নিজেদের কাজ চালাবে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। পাশাপাশি, ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে তারা। সেই কারণেই ২৩ অগাস্ট দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে চাঁদে অবতরণের জন্য।
যদি কোনও কারণে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আজ চন্দ্রযানের ল্যান্ডার অবতরণ না করত পারে, তাহলে তিনটি বিকল্প পথ খোলা আছে। জানা গিয়েছে, আজ কোনও কারণে না হলে, আগামিকাল ২৪ অগস্টে দ্বিতীয় বারের জন্য সফট ল্যান্ডিংয়ের প্রচেষ্টা চালাবে বিক্রম। যদি আজকের পর কালকেও চন্দ্রযানের ল্যান্ডার চাঁদের মাটি স্পর্ষ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আগামী ১৪ দিন পর্যন্ত ফের অবতরণের চেষ্টার করার পথ খোলা থাকবে বিক্রমের কাছে। ইসরো প্রধান জানিয়েছেন, আজ কোনও কারণে না হলে আগামী ২৪ থেকে ৫০ ঘণ্টার মধ্যে ফের চাঁদের অবতরণের চেষ্টা করবে বিক্রম।
তবে এখনও পর্যন্ত সব পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে বলে ইসরো জানিয়েছে। বিক্রমের গতিবিধির দিকে অনবরত নজর রাখা হচ্ছে। বিক্রম সঠিক সময়েই অবতরণ করবে বলেই আশাবাদী ইসরো।
Comments