top of page

'শরীরের নাম মহাশয়, যাহা চাও তাহা সয়' - সব সময় এই প্রবাদ খাটেনা

স্বর্ণালী গোস্বামী

'শরীরের নাম মহাশয়, যাহা চাও তাহা সয়' - সব সময় এই প্রবাদ খাটেনা

আমরা ছোটবেলায় যে কয়েকটি বেদবাক্য শিখি, তার মধ্যে অন্যতম হল স্বাস্থ্যই সম্পদ। যদিও এখনকার সিলেবাসে এমন কিছু আছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে আমাদের সময় ছিল। তো স্বাস্থ্য সম্পদ কেন? সম্পদ তো সাধারণত হল টাকা/ পয়সা/ বাড়ি/ গাড়ি ইত্যাদি। স্বাভাবিকভাবেই তা মনে আসবে ছোট মনে। কিন্তু যত বড় হতে থাকব, ততই যদি বোধ তৈরি হয় (যা অনেকেরই সারা জীবনেও তৈরি হয়না), আমরা বুঝতে শিখব, যতক্ষন আমার শরীর সচল রয়েছে, ততক্ষনই আমার এ জগতে মূল্য রয়েছে। তাই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল শরীর। টাকা, বাড়ি, গাড়ি যাই থাকুক না কেন, ভগ্ন স্বাস্থ্য হলে, চিকিৎসার পেছনে তো মুঠো মুঠো খরচ হবেই, উপরন্তু মানুষ খারাপ স্বাস্থ্যের কারনে সারাক্ষন খিটখিটে হয়ে যায়। কাজ করার মানসিকতাই থাকেনা।

এই ভাবনাটা নতুন করে মাথা চাড়া দেয়, যখন শরীর বিগড়োয়। সদ্য আমার দখলদারির বাইরে গিয়ে বেশ ক'দিন শরীর নিজের মত খেল দেখাল। ফলে নাটাঝামটা খেয়ে আমি ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লাম এই শরীরের বেগড়বাইয়ের রাশ টানতে যে মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হল, তার খানিক আলাপ- আলোচনা করতে।

যে কোনও কারণেই হোক, হঠাৎ গত শুক্রবার দুপুর থেকেই গা-টা ম্যাজম্যাজ করছিল। সকাল থেকেই রুটিনমাফিক কাজকর্ম করেছি। দুপুরেও তেমন আমল দিলাম না শরীরকে, তবে বুঝছিলাম কিছু সমস্যা হচ্ছে। সন্ধ্যেয় শরীরটা বেশ খারাপ লাগছিল। থার্মোমিটার দিয়ে দেখলাম ১০০ জ্বর। আমার এযাবৎকালে জ্বর আসেনি প্রায় আট বছর হয়ে গেল, সেখানে কথা নেই বার্তা নেই জ্বর কেন? খটকা লাগল। জ্বরের উৎস বুঝতে পারছিলাম না। প্রাথমিকভাবে ঠান্ডা লেগেছে তাই ভাবলাম। কিন্তু ধাক্কাটা লাগল রাত বাড়তেই। ধুম জ্বর। ১০৩। ভোর হতেই শুরু হয়ে গেল ওয়াশরুম যাবার হিড়িক। সে তো থামতেই চায়না। দু'ঢক করে ওআরএস খাই, আর পরমুহূর্তেই তা বের করে দিই। ওষুধ খেলাম (নরফ্রক্স)। তাতেও কোনও তাপ -উত্তাপ নেই শরীরের। দুপুরের মধ্যে প্রায় ৪০/৪২ বার হয়ে গেল। বাড়িতে বললাম, ডাক্তার ডাকো। সাধারণত শরীর বুঝে চলি বলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়না। ঈশ্বরের কৃপায় সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা পেটের সমস্যা ছাড়া (ইদানিং রোজ রান্নাঘরে ঢুকছি বলে ছেঁকা খাচ্ছি। তাও টুথপেস্টই সমাধান হয়ে যাচ্ছে, নইলে সিল্ভারেক্স লাগছে) তেমন শরীর বিগড়োয় না। হোমিওপ্যাথি নিদেনপক্ষে প্যারাসিটামল, প্যান্টোপ্রাজল এতেই ফাঁড়া কেটে যায়। কিন্তু এবারে তা হবার নয় বুঝতে পারছিলাম।

পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল হাসপাতালেই ভর্তি হয়ে যাই। সেই মত চললাম হাসপাতাল সফরে। এবারে জীবনে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে সাত দিন কাটিয়ে বেশ অম্ল -মধুর অভিজ্ঞতা হল। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে যে কথা হয়, তার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে না পারলেও রাজ্যের বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বর্তমান চেহারাটা বেশ অনুধাবন করতে পারলাম। ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হতেই রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা সহ ইসিজি, ইকো টেস্ট ও হয়ে গেল সন্ধ্যের মধ্যেই। ৬৮ হাজার টাকার বিল পাঠিয়ে দেওয়া হল মেডিক্লেমের থার্ড পার্টিকে। বুঝুন, চিকিৎসা কিন্তু শুরুই হলনা। এটাই নিয়ম। তবে স্যালাইন শুরু হয়ে গিয়েছিল সঙ্গে সঙ্গেই। কেবিন পাওয়ার পর ডাক্তার এলেন, বললেন আপাতত ফ্লুইড দেওয়াই হবে প্রাথমিক চিকিৎসা। সেটা যদিও স্বাভাবিক। পরদিন সকালে হল হোল অ্যাবডোমেন আল্ট্রাসনোগ্রাফি। এই অব্দি সাধারণ টেস্টের ইতি।

তবে উল্লেখ না করলেই নয় একটি বিষয়। যা হয়ত আমি করেছি কিন্তু অন্য কোনও রোগী করত কি না আমার সন্দেহ। দ্বিতীয় দিনে আমি যে ডাক্তারের আন্ডারে ছিলাম, তিনি এলেন ভিজিটে। বললেন, "আপাতত স্যালাইন এবং প্রাথমিক ওষুধ চলছে, কিন্তু লুজ মোশন বন্ধ হলে আসল চিকিৎসা শুরু হবে। রোগের উৎস খুঁজতে হবে আমাদের। তার জন্য আমি গ্যাস্ট্রো এবং গাইনো সাজেস্ট করেছি। ওনারা যেমনভাবে বলবেন, তেমনভাবে চিকিৎসা এগোবে।" একটু চিন্তান্বিত যে হলাম না, তা বলবনা। তবে ভাবলাম, যা হবে দেখা যাবে। তিনদিন ধরে চলল আমার সঙ্গে পটির সখ্য। তারপর তিনি ক্ষান্ত দিলেন। এদিকে তৃতীয় দিনে গ্যাস্ট্রো এলেন, আমার শরীরের ইতিহাস জানলেন। এমনিতেতো হাফ সেঞ্চুরি পূরণ হতে চললেও প্রেসার, ডায়াবেটিস, ইউরিক অ্যাসিড, থাইরয়েড শরীরে প্রবেশ করতে দিই নি। তাই শুনে ডাক্তারেরা খুশিই হচ্ছেন, ইনিও হলেন। পেটের সমস্যা আগে কী ছিল, জিজ্ঞেস করলে বললাম, এককালে গ্যাস্ট্রাইটিসে ভুগেছি, মেয়ে হবার পর, এখন কন্ট্রোলে। হোমিওপ্যাথি এবং ডায়েট কন্ট্রোল করে চলে যায়। উনি গম্ভীরভাবে শুনলেন, তারপর নিদান দিলেন, সঙ্গী জুনিয়র ডাক্তারদের- "বুঝলে, আগামীকাল কোলোনোস্কোপি টা করিয়ে নাও। দরকার। রোগের উৎস খুঁজতে হবে। বড় কিছু বাসা বাঁধতেই পারে। পরের দিন সিটি অ্যাবডোমেন করিয়ে নিও।" এবারে আমি কিন্তু পুরোই ঘাবড়ে গেছি। আমি জানি কোলোনোস্কোপি বেশ যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতি। তাও কি আর করা- অগত্যা, যা আছে কপালে..... একটু গুগল খুলে কী করণীয় বা কি কি অসুবিধা হতে পারে চট করে পড়ে নিলাম। বিকেলে জুনিয়র ডাক্তার এসে বলে গেলেন, "ভয় পাবেন না, এখন আগের মতো ব্যাথা হয়না, ক্যামেরা উন্নত হয়ে গেছে, ছোট হয়ে গেছে। তবে পরিস্কার ভাবে দেখার জন্য আমরা পেটটা পরিস্কার করে নিই ওষুধ দিয়ে। সব ঠিক হয়ে যাবে।" তাই হবে হয়ত। মনকে স্বান্তনা দিলাম। আমি কিন্তু সেদিন মোটামুটি স্টেবল।

সন্ধ্যেয় কনসেন্ট নিতে এল। একটু আগেই বাড়ির লোক ভিজিট সেরে গেছে। আমি বললাম, দাও আমিই সই করে দিচ্ছি। রাতে একটা ওষুধ নিয়ে এল সিস্টার। প্রায় ৫০০ মিলি এর বোতল। বলল, ম্যাডাম, ১০ মিনিটের মধ্যে এটা খেয়ে ফেলতে হবে। আমি সদ্য খেয়ে ওষুধ খেয়েছি তখন। পেট ঢাই হয়ে রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। তবু ২০ মিনিট পর সেই ওষুধ খাওয়া শুরু করলাম। সমুদ্রের জল আর কী নোনা? এ যেন তার চারগুন বেশি। আমার মনে হচ্ছে এই বুঝি বমি হয়ে গেল। হয়ত শরীর/ পেট নরম ছিল বলেই এত ভয়ংকর অনুভূতি হচ্ছিল! পুরোটা খেতে পারলাম না। বললাম আর পারব না। সিস্টার জোর করল না। বলল পারছেন না? থাক তাহলে। এবারে ঘন্টা খানেক পর থেকে শুরু হল আবার অত্যাচার। ক্ষনে ক্ষনে পটি। সারা রাত ধরে আমায় কাহিল করে দিয়ে ভোর পাঁচটায় আমি দম নিতে পারছিনা। গোটা পেট, বুক, পিঠ দিয়ে ব্যাথায় আমার দম বন্ধ করা অবস্থা। মুখ, জিভ ক্রমাগত শুকিয়ে যাচ্ছে। জলও খেতে পারছিনা। শরীর নাড়াতে পারছিনা। আমি ৫ টায় সিদ্ধান্ত নিলাম আমি পারব না কোলোনোস্কোপি করতে। সকালে ওই ওষুধেরই আরও একটা বোতল শেষ করার ছিল। তারপর আবার অত্যাচার। সঙ্গে কিছু না খাওয়া। আমি পারবোই না। সিস্টারকে বললাম। ও খানিক ভাবল। ওর সিনিয়রকে বলল। তারপর সিনিয়র ছেলেটি এসে বলল পারবেননা ম্যাডাম? ঠিক আছে, আপনি রাজি না হলে ডাক্তারবাবুও মনে হয় জোর করবেন না। একটা রিফিউজাল ফর্মে তাহলে লিখে দিতে হবে। আমি বললাম, নিয়ে এসো ফর্ম। সই করে দিচ্ছি। ওরা ফর্ম নিয়ে এলো। আমি কিছু না দেখে কোনওরকমে সই করে দিলাম। শুনলাম যেতে যেতে ওরা বলছে রেজিস্ট্রারকে জানিয়ে দিতে হবে।

দিনভর দফায় দফায় বিভিন্ন পদাধিকারীর লোকজন এলেন, আমায় স্বান্তনা দিলেন, তবে বুঝতে পারছিলাম, যা করলাম এমনটা স্বাভাবিক নয়। এভাবে কেউ শিডিউলড কাজ বন্ধ করে দেয়না। বিশেষ করে কোনও রোগী এমন সিদ্ধান্ত নেয়না। আমার এখানে প্রশ্ন, আমি হাসপাতালে গেছি অনবরত হয়ে চলা লুজ মোশন নিয়ে। ফুড পয়জন থেকে হয়ত তা হয়েছিল, যা ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হচ্ছে ডিসেন্ট্রি। সেখানে রোগীর শরীর থেকে প্রচুর মাত্রায় ফ্লুইড চলে যায়, যার ফলে রোগী প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। হাসপাতালে যখন গিয়েছিলাম, তখন আমার প্রেশার নেমে গিয়েছিল ৮০/৫০-এ। ওষুধ দিয়ে তা স্টেবল করা হয়েছে। টানা স্যালাইন চলছে। আবার এমনভাবে ফ্লুইড লস করার ওষুধ দিয়ে টেস্ট করার সিদ্ধান্ত কেন নেবেন ডাক্তারেরা? এমনটা নিশ্চয়ই দস্তুর। করা হয় অন্যান্য রোগীর ক্ষেত্রেও। রোগীরা চূড়ান্ত কষ্ট সহ্য করেও না করতে পারেন না ডাক্তারের কথার ওপর। কিন্তু এমনটা কেন হবে? হয়ত মেডিক্লেমের আওতার মধ্যে ফেলে এই টেস্টটা করিয়ে নিতে চায় হাসপাতাল, যাতে মোটা অংকের বিল তারা দাবি করতে পারে- এমনটা আমি বলতেই পারি। কেউ অস্বীকার করলেও ফেলে দেওয়ার বিষয় নয় এটি। ডাক্তারেরা রোগীর শরীর বুঝবেন না? কোন রোগীর ক্ষেত্রে কী করলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তাহলে সেটা বোঝার দায় কার? রোগী কী কোলোনোস্কোপি না করলে মরে যাবে? তাহলে না হয় বক্তব্য ছিল। তা তো নয়! তাহলে? কেন এত তাড়াহুড়ো? কেন রোগীর শরীরকে স্টেবল হতে দিয়ে কিছুদিন পর এই টেস্টটা করিয়ে নেবার পরামর্শ দেবেন না ডাক্তারেরা? তাদের তো তাই উচিত? সাত তাড়াতাড়ি টেস্টটা করার তো কোনও যুক্তি নেই! কেন রোগীকে নিজের সুস্থতার বিনিময়ে এত ভয়ঙ্কর মাশুল গুনতে হবে? অর্ধমৃত করে একটা (এই মুহূর্তে) অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করবে কেন হাসপাতাল? বিশেষ করে হোল অ্যাবডোমেন সিটি স্ক্যান করলেই বাইরে থেকে পরিস্কার বোঝা যায় পেটে তেমন কোনও সমস্যা আছে কি না। সেটা করিয়ে নিলেই তো হল। কেন কোলোনোস্কোপি? প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক নয় কী?

আমার ভেইন খুব হালকা, মানে মাইল্ড। চট করে পাওয়া যায়না। সেটা মেয়ে হওয়ার সময় প্রথমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েই শুনেছিলাম। প্রথম চ্যানেলটি করার পর তাতে কাজ হয়নি। দ্বিতীয়বার আবার একটি করতে হয়েছিল। কিন্তু এবারে? দুই হাত মিলিয়ে ৫টা চ্যানেল করা হয়েছে। সঙ্গে আরও একটি ফলস চ্যানেল, যাতে শুরুতেই কিছু পাওয়া যায়নি। কেন এমন হবে? এক এক দিন এক একটা চ্যানেল করতে হয়েছে। জানিনা পাঁচদিন ধরে টানা ২৪ ঘন্টা স্যালাইন এবং সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক চলেছিল বলে কি না। অনেক সময় দেখলাম সিস্টারেরা এসে স্যালাইনের পাইপটা মোচড় দিয়ে দিচ্ছে, ঠিকমতো লিক্যুইড চ্যানেলে যাচ্ছেনা বলে। তার সেই কাজে আমার অসহ্য যন্ত্রণা। বলেছিলাম, শুনলাম ওরকম একটু হয়। কিন্তু কেন হবে? দু'জন সিস্টারের কাছে আমায় একটিবারের জন্য একটুও কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। তারা তাহলে কোন পদ্ধতিতে সঠিক জায়গায় ফ্লুইড পাঠাতে পারল? তবে এটাও ঠিক, বাড়ির লোকেদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখলাম, সেটা সঠিক শিক্ষার অভাব। আরও একটা ব্যাপার। কর্পোরেট স্বাস্থ্য পরিষেবায় এই রোগী-সিস্টারের যে একটা মনের আদান-প্রদান গড়ে উঠত আগে, সেটা উবে গেছে। এখন চার শিফটে চার জন সিস্টার আপনার দেখভাল করবে এবং প্রতিদিন তারা পাল্টে পাল্টে যাবে। আমার ক্ষেত্রে যদিও প্রথম চার রাত একই সিস্টার জুটেছিল। তাতে আমি খুব মানসিক শান্তি পেয়েছিলাম। মেয়েটি বেশ সংবেদনশীল ছিল। আমার যথেষ্ট মানসিক শান্তি হয়েছিল ওই ক'দিন।

এই বারে আসি হাসপাতালের অত্যাধুনিক পরিষেবার বিষয়ে। ঝাঁ চকচকে ব্যবস্থা। তুলনা করাই যায় আধুনিক হোটেলগুলির সঙ্গে। দুবেলা নিয়ম করে ঘর পরিস্কার থেকে রুগীর যাবতীয় ব্যবহার্য জিনিসের বন্দোবস্ত রয়েছে রুমে। দাঁত মাজার ব্রাশ-পেস্ট থেকে বডি ওয়াশ, হেয়ার ওয়াশ, হেয়ার অয়েল, গা স্পঞ্জ করলে তার ওয়েট শিট, চিরুনি মায় বাথরোব অব্দি মজুত রয়েছে কেবিনের ওয়ার্ডরোবে। প্রতিদিন সকালে হাউস কিপিং-এর দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, আপনার খোঁজ নিয়ে যাবেন এসে কোনও রকম অসুবিধে হচ্ছে কি না। রয়েছে খাওয়া-দাওয়ার সুবন্দোবস্ত। সময় মতো নিয়ম করে ডায়েট অনুযায়ী লোভনীয় খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। বিরিয়ানি, পোলাও, চাউমিন নাই বা হল, অসুস্থ শরীরে ডালিয়ার পায়েস, সিমুইয়ের পায়েস, কড়াইশুঁটির স্যুপ, কর্ন স্যুপ, চিকেন স্ট্যু কী লোভনীয় পদ নয়? সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য সবজি, মাছ, দই, স্যালাড। শেষে আমাকে অবাক করে দিয়েছে এক ঝাঁক টগবগে সিস্টারের দল। ২২ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে মেয়েরা সব অসাধারণ পেশাদারিত্বের সাথে রোগী পরিষেবা দিয়ে চলেছে। রাতের ডিউটি যাদের থাকছে, একটুও দেখলামনা ঘুমের বাহানায় ডিউটিতে ফাঁকি দিতে। টানটান থেকে সারারাত যে ঘর থেকে ডাক পড়ছে, ঠিক গিয়ে উপস্থিত হচ্ছে তারা সময়মতো। আমি খুব খুশি হয়েছি, বলা ভাল আপ্লুত হয়েছি। অপকর্মসংস্কৃতির আতঙ্কে ভোগা মধ্য বয়সী এক নাগরিক আশার আলো দেখতে পেল এই একঝাঁক নতুন প্রজন্মের পরিষেবা প্রদানের পদ্ধতিতে।

আর কৃতজ্ঞ থাকব সারা জীবন ওই ডাক্তারের কাছে, যিনি আমায় যেন তেন প্রকারেন টেস্টটি করতে (ওই শারীরিক পরিস্থিতিতে) বাধ্য করেননি। জানিনা, অন্য কোনও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর সিদ্ধান্ত এভাবে মেনে নেওয়া হয় কি না। কিন্তু এখানে হয়েছে। সেই জন্যই আমি অতিরিক্ত কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আশা করব, ভবিষ্যতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র নিজেদের মুনাফা লোটার জন্য রোগীদের শরীর নিয়ে খেলা করবেন না। জীবন প্রদানের ক্ষেত্রে যেটুকু কষ্ট না দিলেই নয়, রোগীদের সেটুকুই দেবেন। হাসপাতালে রোগীরা যায় সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসার জন্য, নতুন কোনও কষ্ট ভোগ করার জন্য নয়, এটুকু মনে রাখলেই আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাও দক্ষিণের রাজ্যগুলির মতো উন্নত তথা বিশেষ করে ভরসাযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে।

bottom of page