top of page

৮০ বছরে টানটান যুবতী অপর্ণা সেন

স্বর্ণালী গোস্বামী

26 Oct 2025

কি টানটান রেখেছেন নিজেকে! কি পরিশীলিত রুচির প্রকাশ প্রতি মুহূর্তে! কি অসাধারন দৃপ্ত শরীরী ভাষা! কি অমায়িক অথচ দৃঢ় অভিব্যক্তি! কি বাচনভঙ্গি! নিজস্ব বক্তব্যের কি সুন্দর প্রকাশভঙ্গি!

আমাদের অপর্ণা সেন ৮০ বছর বয়স্ক হলেন। ভাবলাম এটাই আজকের বিষয় করি। প্রচুর লোকজন নিজের নিজের ফেসবুক পোস্টে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। আমি যদিও কিছুই লিখিনি। আমি কে? তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর? আমার তাই মনে হয়েছে। তবে কিছু লেখাই যায়। কারন অবশ্যই আমাদের সকলের অপর্ণা সেন। যিনি নিজের কাজের মাধ্যমে, অভিনয়ের মাধ্যমে, লেখার মাধ্যমে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, ভাবতে শিখিয়েছেন একটু অন্যভাবে। কিন্তু ফেসবুকে নয়, আমার এই আড্ডার পাতায়। নিজের যখন লেখার একটা জায়গা করেছি ঠিকঠাক, তখন তাতে লেখাই শ্রেয় বলে আমার মনে হল।

তো মোটামুটি ফিডে যেগুলি এসেছে, সেই লেখাগুলি পড়েছি এবং ছবিগুলি দেখেছি। অপর্ণা সেন নিজেও পোস্ট করেছেন ছবি। আমার মনে হয়েছে, এই তো জীবন। হৈ হৈ করে বাঁচা এটাকেই তো বলে। দিব্য কেমন কলকল করছেন এই ৮০ বছর বয়সেও। নো প্যানপ্যানানি, নো ছুঁড়োমি, নো ন্যাকামি। আহা কি অসাধারন উদযাপন! বয়সকে তুড়ি মেরে দিনের উদযাপন। ক'জন পারে বলুন তো? আমার তো লোভ রয়ে গেল, যদি বাঁচতে পারি এমনভাবে তাহলে এমন ধুমধাম করে পার্টি করব। এমনিতে জন্মদিন আমি ঢাক- ঢোল পিটিয়ে পালন করতে পছন্দ করিনা। কিন্তু ৮০ বছরে এমন একটা ধুমধাম করতে পারলে দারুন একটা ব্যাপার হবে।

কি টানটান রেখেছেন নিজেকে! কি পরিশীলিত রুচির প্রকাশ প্রতি মুহূর্তে! কি অসাধারন দৃপ্ত শরীরী ভাষা! কি অমায়িক অথচ দৃঢ় অভিব্যক্তি! কি বাচনভঙ্গি! নিজস্ব বক্তব্যের কি সুন্দর প্রকাশভঙ্গি! এমনি এমনিই যেন প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে। শ্রদ্ধা এসে যায় ওই ব্যক্তিত্বের প্রতি। এখনও কি চার্মিং! ভুবনমোহিনী অথচ ব্যক্তিত্বময়ী হাসি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিখুঁত এবং রুচিসম্মত সৌন্দর্যের প্রকাশ। এভাবেই তো বাঁচতে হয়।

আজই একটি সাক্ষাৎকার শুনলাম ডাকবাংলার জন্য দিয়েছেন সম্প্রতি। ডাকবাংলা খুব ভালো একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। সেখানে অপর্ণা সেনের পরিচালক সত্ত্বা নিয়ে প্রশ্ন করলেন সঞ্চালিকা। প্রশ্নগুলোও যেমন ভালো ছিল, তেমনি অপর্ণা সেন নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বা কি ভাবনা থেকে ছবিগুলো বানিয়েছেন তার একটা বিস্তৃত আলোচনা করলেন। কথায় কোনও জড়তা নেই, ভাবনায় কোনও জড়তা নেই, মনে হচ্ছিল এখনও অনেক কাজ করতে পারেন তিনি। গত বছরই আমি সুমন ঘোষের তৈরি তথ্যচিত্রটি দেখেছি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। সেদিন তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন। কথা বলেছিলেন খুব অল্প। নিজের সম্পর্কে অযথা ঢাক পেটাতে একদম পছন্দ করেন না। আদ্যোপান্ত অমায়িক অথচ সমাজের তথাকথিত ট্যাবু ভাঙতে এক মুহূর্ত ভাবেন না। তাঁর প্রতিটা ছবিই কত সময়ের আগে আগে চলেছে, সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, ভাবলেও অবাক লাগে। উনি অভিনেত্রী হিসেবে এত সফল অথচ তাঁর সেই ছবিগুলোর প্রতি বিশ্বাস ছিলনা বলেই নিজে পরিচালনায় এসেছিলেন। নিজেকে অভিনেত্রীর থেকে পরিচালক হিসেবে ভাবতে এবং পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। তাছাড়াও তিনি অসাধারন ভালো লেখিকা, অসাধারন ভালো সম্পাদক, অসাধারন স্টাইল আইকন এবং পাশাপাশি সমাজের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা এবং প্রয়োজনে প্রতিবাদ করা একজন ব্যক্তি আমরা সবাই জানি।

কলকাতা টিভি তে গৌতম ভট্টাচার্যও একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, সবে শুরু করেছি সেটি দেখা। দেখব পুরোটা। আরও কিছু পেলে সেগুলোও দেখব। আসলে আমি এভাবে ঋদ্ধ হই। নিজের লেখালেখি, ভিডিও তৈরি, বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজকর্মের পাশাপাশি আজকাল পড়া এবং ভিডিও দেখাকে নিত্যদিনের অভ্যাস করে নিয়েছি। অবশ্যই সেক্ষেত্রে আমি খুব বেছে বেছে ভিডিও দেখি। পডকাস্ট দেখতে আজকাল খুব ভালো লাগে। ভাবনার পরিসর বাড়ে। অনেকটা সময় একটি বিষয়ের মধ্যে থাকা যায়। যাঁর সাক্ষাৎকার দেখছি এবং যিনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন উভয়েরই ভাবনায় নিজেকে জারিত করা যায়।

অনেক ছোট থেকেই ওনার সঙ্গে পরিচয় আমার অবশ্যই সিনেমার অভিনেত্রী হিসেবেই ওনাকে প্রথম চিনেছি। পরে পরিচালক হিসেবে। মূলত টিভিতেই ওনার ছবি দেখা। ওনার ছবি প্রথম কি দেখেছিলাম তা মনে পড়েনা। 'শ্বেত পাথরের থালা' দেখেছিলেম 'ফার্স্ট ডে'- তে শিলিগুড়ি গিয়ে। যেমন গল্প, তেমন অভিনয়। তবে পরিচালক হিসেবে ওনার প্রথম ছবি 'পারমিতার একদিন' দেখেছিলাম প্রথম। ছোট বয়স তখন, যদিও একেবারে ছোটও নয়। কলেজ পাশ করে গেছি। নিজের মত করে কাজকর্ম করছি, বেরোচ্ছি একা একা প্রয়োজনে। ইসলামপুরের মত জায়গায় থেকে এবং রায়গঞ্জ কলেজে পড়ে বাইরের জগৎ বলতে আমার কাছে ছিল তখন 'দেশ' পত্রিকা এবং দূরদর্শনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান। দূরদর্শনেই প্রথম দেখা সেই ছবি। যথেষ্ট ধাক্কা লেগেছিল ওই রকম একটি বিষয়ের ওপর ছবি দেখে। তারপর আরও বার তিন- চার দেখেছি। প্রতিবার মোহিত হয়েছি আমি। '৩৬ চৌরঙ্গী লেন' অনেক পরে দেখা। তার আগে দেখেছিলাম 'পরমা'। পরমা দেখে মনে হয়েছিল বেশ হয়েছে। আমি নিজে ওই ভাবে প্রতিবাদ জানাতাম কি না জানিনা, কিন্তু যারা পারে, তাদের কুর্নিশ অবশ্যই করি। আজ বিভিন্ন ছবির পেছনে তাঁর ভাবনা বিস্তারিত ভাবে শুনলাম ডাকবাংলার ওই সাক্ষাৎকারে। বলছিলেন, বয়স্কদের নিয়ে ভাবতে তাঁর ভালো লাগে। 'বুড়ি' কথাটা উচ্চারণ করলেন বয়স্ক মহিলার একাকিত্ব নিয়ে ছবি করবেন বলে ভেবেছিলেন যখন সেটা বলার সময়। মানে '৭০ বছরের একাকী বুড়ি'- এমনটা বললেন একজন ৮০ বছর বয়স্ক টানটান যুবতী। খুব ভালো কাটলো সময়টা।

অপর্ণা সেন থাকুন আমাদের মধ্যে আরও বহু দিন, আমাদের ঋদ্ধ করুন এবং তাঁর উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের প্রাণবন্ত করে রাখুন এইটুকুই বলার।

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page