top of page

১৪৩১, নতুন বছরের দিনকাল

স্বর্ণালী গোস্বামী

দেখা যাক সামনের সময় কী বার্তা বয়ে আনছে আমাদের জন্য

এক পক্ষকাল হয়ে গেছে বাংলা নতুন বছর শুরু হয়ে গেছে। গত দুই রোববারই ব্যস্ত থাকায় লেখার সময় হয়ে ওঠেনি। ১৪৩১ খুব খারাপ শুরু হয়নি। বরং বলা যায় আমার দৈনন্দিন যাপনের নিরিখে নতুন বছর বেশ ভালোই শুরু হয়েছে। আমি আসলে এই নতুন বছর উপলক্ষে এবং পুজো উপলক্ষে ঘর- বাড়ি ঊনকোটি- চৌষট্টি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করি। হাল আমলে যাকে ডিপ ক্লিনিং বলে আর কি। বাড়ি- ঘর-দোর বেশ পরিচ্ছন্নও হয়ে যায়, উৎসব, উৎসব একটা আমেজ আসে, পাশাপাশি শরীরটাও ক'দিন জং সরিয়ে ঝকঝকে হয়ে যায়। কিছুটা ঝরেও যায় বলা যায়। আমার সেই ৩০- ৩২ বছর আগের তন্বী ফিগার ধরে রাখার এটা একটা অন্যতম স্ট্র্যাটেজি। তো নববর্ষের দিন বা পুজোর শুরুতে আমি একটু ক্লান্ত থাকি বৈকি। তেমন আমল না দিলেও সেই দিন বেশি চাপ নিতে ইচ্ছে হয়না। তবে একটু খাওয়া- দাওয়া, একটু বেরোনো তো হয়েই যায়।

সে যাকগে। এবারে আসি, অন্য প্রসঙ্গে। দিন- কাল কিন্তু খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা। ইতিমধ্যেই দুই দফার লোকসভা ভোট সম্পন্ন হয়ে গেছে। রাজ্যে অবশ্য এখনও পর্যন্ত কহতব্য তেমন কিছু অঘটন ঘটেনি ভোটের দুই দিনে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নেই কেটেছে ভোটপর্ব। এবারে শেষ অব্দি এবং ফলপ্রকাশের পরও এমন পরিস্থিতি থাকলে ভালো। তবে ঘটনা যেটা ঘটেছে তা হল, গত সোমবার অর্থাৎ ২২ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে ২০১৬ সালের এসএসসি-র গোটা প্যানেল অবৈধ ঘোষণা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বির রশিদির বেঞ্চ। অর্থাৎ ২০১৬ সালের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ গোটা প্যানেলই বাতিল হয়েছে। এক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী কারা, সেটি আলাদা করে রাজ্য সরকার ও এসএসসি-র কাছে বার বার জানতে চাওয়া হলেও, তারা সঠিকভাবে কোনও তথ্য দেয়নি। ফলে এমন কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে আদলত এমনই বলেছেন বিচারপতিদ্বয়। লোকসভা নির্বাচন পর্ব মিটে গেলে তার পনের দিন পর নতুন করে ফের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার আদেশ দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে।

স্বাভাবিকভাবেই এই রায়ের ফলে তোলপাড় হয়েছে গোটা রাজ্যে। ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ায়, যোগ্য প্রার্থীরা হাহাকার করছে। তারা তাদের ওএমআর শিট নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনে বসেছেন। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় উঠে আসছে। এই যে, ওএমআর শিট নিয়ে রায়দানের পর শিক্ষক- শিক্ষিকারা বিক্ষোভ করছেন, তাঁরা মামলা চলাকালীন কোর্টে গিয়ে আপীল করতে পারতেন তো! আমার কিন্তু এটা মনে হয়েছে। আসলে একবার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যাওয়ার পর যে কোনও ক্ষেত্রেই বিচার চাওয়ার তেমন গুরুত্ব থাকেনা, যতটা না থাকে সেই বিষয় যতক্ষন বিচারাধীন থাকছে, তখন বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে। এসএসসি-র চেয়ারম্যান সহ শিক্ষা দফতর, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সকলেই আলাদা আলাদা করে সুপ্রিম করতে আপিল করেছেন, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইকোর্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হবার ক্ষেত্রে যে প্রায় ২৫০ পাতার রায়দান লিপিবদ্ধ হয়েছে, সেখানে নিপুণভাবে রায়ের সম্বন্ধে বলা রয়েছে। কোনও সামান্যতম জায়গায় ছাড়েননি, বিচারকেরা যেখানে মার্ক করে পুনরায় রায় বিবেচনা করার অবকাশ থাকবে। সেক্ষেত্রে এই রায় বদল হবে বলে আশা খুবই ক্ষীণ। আগামী ২৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট এই ব্যাপারে রায় জানাবে। দেখা যাক কি হয়।

এদিকে এই রায়ের ফলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হবে বলাই বাহুল্য। একসঙ্গে এতজন শিক্ষক- শিক্ষিকা অফ হয়ে যাওয়ার অর্থ স্কুলে স্কুলে রেগুলার পঠন পাঠনের সিস্টেম ভেঙে পড়া। সেক্ষেত্রে শক্ত হাতে হাল না ধরলে ভুগতে হবে সেই পড়ুয়াদেরই। এমনিতেই রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা মোটেই ভালো জায়গায় নেই। তার ওপর এমন একটা পরিস্থিতিতে কী যে হবে শিক্ষার্থীদের, তা ভাবলেই শিহরিত হতে হয়। পাশাপাশি যে সমস্ত পুরোনো শিক্ষক- শিক্ষিকারা রয়েছেন, তাদের ওপরেও চাপ পড়বে। যাঁরা চাকরি হারালেন তাঁদের মধ্যে কিছু জনের বয়স পেরিয়ে গেছে নতুন করে পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে নতুন করে কোনও নিয়ম করা হবে কিনা, যাতে তারা ফের নিজেদের প্রমান করার সুযোগ পান, তা জানা নেই। ইতিমধ্যেই খবর হয়েছে, প্রচুর শিক্ষক- শিক্ষিকারা হোম লোন বা পার্সোনাল লোন

নিয়েছেন, নিজেদের প্ৰয়োজনার্থে। সেই লোন তাঁরা শোধ দেবেন কিভাবে? তাঁদের জীবন নির্বাহ কীভাবে হবে? যদি লোন শোধ দিতে না পারেন, তাহলে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজে খুব খারাপ একটা প্রভাব পড়ল সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এই গোটা ব্যাপারটায় বর্তমান রাজ্য সরকার কিছুতেই নিজেদের দায় এড়াতে পারেন না। তবে যেটা হচ্ছে, তা হল, ভোটের বাজারে এটা একটা নতুন ইস্যু তৈরি হয়ে গেছে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এ- ওকে দুষছে, ও- একে দুষছে। এভাবেই চলছে এখন।

তার ওপর এই মুহূর্তে রাজ্যের গরম তুঙ্গে। চলছে অতি তাপপ্রবাহ। গত ৫০ বছরের রেকর্ড গরম পড়েছে এবারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের এল- নিনোর প্রভাবেই এই গরম। তবে আমাদের রাজ্যের অস্বাভাবিকতা তো খবর বটেই। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর অনুযায়ী গতকাল অর্থাৎ ২৭ তারিখ শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি এবং তা ছিল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তাহলেই বুঝুন। এমনটা বেশ কিছুদিন ধরেই হচ্ছে। মানে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ না হলেও রাজস্থানের থেকে বেশি থাকছে পুরুলিয়া। মায় আমাদের দমদম অব্দি একদিন রাজস্থানকে পেছনে ফেলে দিয়ে গরমে রেকর্ড করেছিল। তার ওপর কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ বিভিন্ন জায়গায় চলছে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং। মানুষের টিকে থাকাই দায় হয়েছে। ভাগ্যক্রমে এই তাপপ্রবাহের সময় আমাদের এই তল্লাটে লোডশেডিং হয়নি, এখনও অব্দি। তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার আগেও তিন/ চার দিন নিয়ম করে লোডশেডিং হচ্ছিল। সেই জন্যই আমরা এখনও অব্দি নৈরাজ্য দেখলাম না, সেটাও হতে পারে। আবার হুট করে যে কোনও সময়ে লোড শেডিং হয়ে গেল, এই লেখার পর, এমনটাও হতে পারে।

এই মূলত আপেক্ষিকভাবে দিনকালের বিবরণ। চলছে এভাবেই। দেখা যাক সামনের সময় কী বার্তা বয়ে আনছে আমাদের জন্য।

bottom of page