top of page

সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে আপোষ নয়- এটাই ভারতের শেষ কথা

স্বর্ণালী গোস্বামী

এবারে দেখার এই 'নিউ নরমালে' আমাদের দেশ কি সিদ্ধান্ত নেয় এবং কিভাবে এগোয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে

শুরু করেছিলাম গত দু'সপ্তাহ আগে। ভূমিকা লিখে রেখেছিলাম গাড়িতে যেতে যেতে, সময়মতো বাকিটা লিখে পোস্ট করবো। কিন্তু সেই সময়টাও আর হলনা। কারন পর পর দু'সপ্তাহ বাইরে বেরোনো ছিল। বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি। তারপর জমে থাকা নিউজ আপলোড করতে গিয়ে আর নিজের লেখার এনার্জি পাইনি। আজ একটু আয়েশ করেই দিন কাটিয়ে তাই লিখতে বসলাম। আজ এখনও পর্যন্ত কোনও খবরের ভিডিওও আসেনি, ফলে তা আপলোড করার ভাবনাও নেই। যদিও আয়েশ কথাটা ব্যবহার করলাম, তবে আয়েশ অবশ্যই শরীরের, মনের নয়। কারন বিগত দু-তিন মাস ধরেই মনের আয়েশ আর করা হচ্ছেনা। জোর করে মনকে ঠিক রাখতে হচ্ছে, নইলে বাঁচা যাবেনা তাই। দিন কাটাচ্ছি, আত্মীয়- পরিজনদের সঙ্গে গেট- টুগেদার করছি, খাওয়া- দাওয়া করছি, আড্ডা দিচ্ছি কিন্তু সবের মধ্যেই ওই খচ্খচানিটা লেগেই রয়েছে। তাই সেটা সঙ্গে করেই আজ শুরু করা যাক।

আমার শেষের লেখা ছিল রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে। তারপর খুব দ্রুত গোটা দেশ জুড়েই একটা ধাক্কা লাগল। ২২সে জুলাই কথা নেই বার্তা নেই দুম দুম করে অমন স্বর্গের মত জায়গায় নৃশংস হত্যালীলা! যা শুধু আমাদের দেশ কেন, গোটা বিশ্বকেই ঝটকা দিয়েছে। বেছে বেছে শুধুমাত্র হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরুষদের মারা হয়েছে, মহিলাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একজনকে বলা হয়েছে, "মোদী কো যাকে বোল"। এই করে কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকা রক্তে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল ২২ তারিখের সুন্দর একটি সকালে। স্বাভাবিকভাবেই উউথালপাথাল শুরু হয় দেশে। ঘটনাটা জাতীয় ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানকে এর দায়ভার নিতে হবে, প্রমান দিয়ে জানায় ভারত। একযোগে সকলেই ভারতের পাশে দাঁড়ায়। এদিকে ঘটনার পর থেকেই আস্ফালন দেখিয়ে পাকিস্তান টানা দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে গোলাগুলি করতে থাকে। গোটা দেশের সাধারণ নাগরিক সহ মিডিয়া জিগির তুলতে থাকে যুদ্ধ প্রয়োজন, নইলে শায়েস্তা করা হবেনা পাকিস্তানকে। কিছু কিছু স্থিতধী মানুষ যদিও যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা যাতে না হয়, সেকথা বলছিলেন বা ভাবছিলেন। কিন্তু অবশেষে দেশ বেশ কয়েকটি রাজ্যকে মক- ড্রিল করার নির্দেশ দেয়।

এরই মাঝে ওই হত্যালীলার ১৫ দিনের মাথায় ৭ মে মধ্যরাতে ভারত 'অপারেশন সিঁদুর' চালিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দেয়। ব্যাস, বেজে যায় যুদ্ধের দামামা। পাকিস্তান তার নিয়মমতোই দেশের সামরিক ঘাঁটি এবং জনবসতি তাক করে আক্রমণ শানাতে থাকে, আর ভারত অতি নিপুণতার সঙ্গে তা সফলভাবে প্রত্যাঘাত করে। গতকাল বিকেল ৫ টা থেকে দুই দেশ আমেরিকার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও রাতে পাকিস্তান ফের সীমান্তে ড্রোন চালিয়ে গোলাগুলি করে। রাত ১১টায় বিক্রম মিস্রি সরকারিভাবে তা ব্রিফ করলে পর ধীরে ধীরে তা বন্ধ হয়। আজ এখনও পর্যন্ত আর কোনও ঘটনা ঘটেনি।

এই প্রসঙ্গে বলতেই হবে আমাদের ডিফেন্স সিস্টেমকে স্যাল্যুট। যে নৈপুণ্য এবং পারদর্শিতার সাথে প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত, সেখানে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাকে জাস্ট পুতুলের সংসারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলে মনে হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তান মূলত চিনা প্রযুক্তিই ব্যবহার করছিল। দেখা গেল, চিনা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভারতীয় আক্রমণের সামনে দাঁড়াতেই পারছে না। দেখা গেল, চিনা ড্রোন পাঠিয়ে ভারতে হামলার চেষ্টা করে কোনও লাভ হচ্ছে না। প্রায় সব ড্রোনকেই মাঝ-আকাশে ভারত নষ্ট করছে। ‘ওখান থেকে গুলি চালানো হলে এখান থেকে গোলা চলবে’ - পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই ভাষায় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে সূত্রের তরফে জানা গেছে। সেই মতোই ভারতীয় সেনারা কাজ করে গেছেন একের পর এক। প্রতিটি পর্যায়ে ভারতের কাছে পাকিস্তান অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকরা।

শনিবার ১০ মে সক্কাল সক্কাল একেবারে নিখুঁতভাবে পাকিস্তানের আটটি সামরিক প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা হয়েছিল। পঞ্জাব প্রদশের রহিম ইয়ার খান বায়ুঘাঁটির রানওয়েকে পুরোপুরি ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাকিস্তানের একের পর এক বায়ুঘাঁটিতে ভারত যে প্রত্যাঘাত করেছে, সেটাই ‘অপারেশন সিঁদুর’- র টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তারপরই সংঘর্ষবিরতির চুক্তি নিয়ে পাকিস্তান থেকে ফোন আসে। যদিও প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে ভারতের যে নিশানা করার কোনও পরিকল্পনা ছিল না, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গিদের নিশানা করেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে জঙ্গি শিবিরকে ‘মাটিতে মিশিয়ে দেব (মিট্টি মে মিলা দেঙ্গে)।’ আর সেইমতো ভাওয়ালপুর, মুরিদকে এবং মুজফ্ফরাবাদের জঙ্গি শিবিরকে মাটিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের ভাওয়ালপুরে জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতরের উপরে সবথেকে ভয়ংকর আক্রমণ চালানো হয়েছে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো বিষয়টাকে কম গুরুত্ব দিতে চেয়ে বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত তিনিই থামালেন। শাহবাজ শরিফ দাবি করছেন, পাকিস্তান জিতে গেল। তারাই যুদ্ধ থামালো। আসলে সকলেই এই সময়ে নিজের কৃতিত্ব নিতে ব্যস্ত থাকবে এ আর নতুন কথা কি? আর ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন বিষয়ে যা করছেন, তা তো কহতব্য নয়। সে যাকগে, ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রি আনুষ্ঠানিক ভাবে অতি সংক্ষেপ বিবৃতি দিয়ে ১০ মে সরকারি ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের ডিজিএমও ফোন করেছিলেন ভারতের ডিজিএমও-কে। এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে এ কথাকে আমেরিকা বা পাকিস্তান অস্বীকার করতে পারেনি। "তবে একথা ঠিক আমেরিকার অনুরোধে ভারতের এই মান‍্যতা ভারতের নতুন ‘সমরতত্ত্ব’কে গোটা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করে দিল।" জানাচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সুব্রত সাহা। তিনি বলছেন, "ভারতের নতুন ‘সমরতত্ত্ব’ কী? সেটা হল— ভারতের বিরুদ্ধে যে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলাকে এখন থেকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে দেখা হবে। এটা খুব শক্তিশালী অবস্থান। এর অর্থ হল, এর পর ভারতে আর কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে ভারতকে আলোচনার টেবিলে বসে সব মিটিয়ে নেওয়ার চাপ কেউ দিতে পারবে না।"

ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক এখন যথেষ্ট ভাল। অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক, দু’রকম সমীকরণই রয়েছে তার নেপথ্যে। তাই সৌদি আরবও এই যুদ্ধের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এ বার তারা কোনও পক্ষ না-নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে মধ‍্যস্থতা করার চেষ্টা করেছে। ভারতকে সৌদি অনুরোধ করেছে সংঘাত আর না-বাড়াতে। ভারত জানিয়েছে, সংঘাত বাড়ানোর ইচ্ছা ভারতের নেই। কিন্তু পাকিস্তান যত বার হামলার চেষ্টা করবে, ভারত তত বার পাল্টা আঘাত করবে। ভারতের সেই অবস্থানকেই সৌদি মান‍্যতা দিয়েছে। পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়িয়েছে। চিনও বারবার এই সংঘাত থামানোর কথা বলছিল। চিনা অস্ত্রাগারের দুর্বলতা রোজ প্রকট হচ্ছিল গোটা বিশ্বের সামনে। রোজ চিনের অস্বস্তি বাড়ছিল। তাই চিনও চাইছিল এই সংঘাত থেমে যাক। আগামীকাল ১২ মে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ফের আলোচনা হবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রতিটি বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেনি। যেটা এই ব্যাপারে খুব প্রয়োজনীয় ছিল। তবে ওই, কিছু জন তো শহীদ হবেনই। কিছু প্রাণের বিনিময়ে শান্তি (পাকিস্তানকে সবক শেখানোয়) পেয়েছে কোটি কোটি ভারতবাসী। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা প্রথম করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ দুই দেশ সরকারিভাবে ঘোষণা করার আগেই ট্রাম্প পাকামো করে নিজের গুরুত্ব বোঝাতে কাজটিই করেছিলেন। এ বার ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা নিয়ে আলোচনা চান লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। সেই মর্মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আজ চিঠি লিখলেন তিনি। চিঠিতে রাহুলের দাবি, সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক। সেখানেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চান রাহুল। এদিকে কেন্দ্রের তরফে রবিবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনও চলছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই থামেনি। তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমনের জন্য মধ্যস্থতার ভূমিকা নিতে চায় আমেরিকা। এর মাঝেই সংঘর্ষবিরতি নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা হয়েছে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের। এবারে দেখার এই 'নিউ নরমালে' আমাদের দেশ কি সিদ্ধান্ত নেয় এবং কিভাবে এগোয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page