
স্বর্ণালী গোস্বামী
20 Jul 2025
২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে, ইসরো আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্লাকে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযানের জন্য মহাকাশচারী দলের সদস্য হিসেবে পরিচয় করায়
আগামী বছরই বিধানসভা ভোট। পুরো এক বছরও বাকি নেই। আজ রবিবার, গত শুক্রবারই দুর্গাপুর ঘুরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। ভোটার দামামা বাজিয়ে গিয়েছেন তিনি। এবারে তৃণমূলের পালা। তারাও ভোটার দামামা বাজাবেন আগামীকাল ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের নেই কোনও ভিডিও রেকর্ড। তাই সেরকম একটি ভিডিও বানাতে নিজেরাই উদ্যোগী হল তৃণমূল। তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে AI নির্ভর একটি তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘অগ্নিকন্যার অগ্নিপথ, বাংলা রক্ষাই তাঁর শপথ।' এদিকে আগামীকাল যাতে শহরের কোনও রাস্তা স্তব্ধ না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে বলে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল মঞ্চ পরিদর্শন করে তা নিশ্চিতও করেছেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বার্মা। লোকে লোকে ভরে উঠেছে কলকাতা, যেমন হয় প্রতি বছর।
কিন্তু তবু, রবিবাসরীয় লিখতে বসে এমন গরম টপিক না লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। ইচ্ছে করছে না রাজনীতির কচকচানিতে। আরও একটা হট টপিক সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে প্রায় প্রত্যেকের ওয়ালে। সম্প্রতি মমতাশঙ্কর নারীদের ঋতুস্রাব নিয়ে আজকালের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির তীব্র নিন্দা করেছেন। যদিও আমি নিজেও এই মত মানতে পারিনি, কিন্তু তাই বলে এই নিয়েও দীর্ঘ একটি লেখা লেখার কোনও বাসনা জাগল না আমার মনে। মনে হল, লিখছে তো অনেকে। তারা লিখুক না। সদ্য জি বাংলার নাচের অনুষ্ঠান ডান্স বাংলা ডান্স এ 'চণ্ডালিকা' নৃত্যনাট্যে 'তেরে বিনা জিন্দেগী কোই' গানটি ঢুকিয়ে বেশ রগরগে একটি ইস্যু তৈরী করেছে চ্যানেল। যারপরনাই তা খেয়েওছে লোকজন। জম্পেশ করে আলোচনা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইচ্ছও হয়েছিল একবার লিখি ইটা নিয়ে, কারন সেই ছোটবেলায় ঠাকুরগঞ্জের আনন্দ মার্গ স্কুলে পড়াকালীন ক্লাস স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান এ আমি চণ্ডালিকায় অভিনয় করে নাচ করেছিলাম। মা আমাদের গোটা বাচ্চাদের টিমকে নির্দেশনা দিয়েছিল। তা এতটাই সাড়া ফেলেছিল, যে ইসলামপুরের আনন্দ মার্গ স্কুলে আমাদের টিমকে হায়ার করা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়েও আমি লিখতে চাইছিনা। আমি আজ লিখব মহাকাশে যাওয়া ভারতীয় শুভাংশ শুক্ল কে নিয়ে। আমি এই নিয়ে খবরও করেছি। তা সত্ত্বেও আজ লিখব। চাইছি, এই বিষয়টা আমার লেখায় থাক।
আসলে ইদানিং মানে গত বছর দশেক হল আমি এই মহাকাশ গবেষণা বেশ উৎসাহিত বোধ করছি। আমাদের ইসরো খুব ভালো ভালো কাজ করছে। তার ওপর আজই একটা স্টোরি করলাম ব্যারাকপুরের গ্রামীণ অর্থাৎ পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত মোহনপুর থেকে একটি ক্লাস ইলেভেনে পড়া ছেলে নাসায় যাচ্ছে রিসার্চ করতে। লা- মার্টিনিয়ার এবারে কম্পিটিশনে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম হয়েছে। তিনটে দেশ থেকে যাচ্ছে নাসায়। খুব ভালো লাগলো। তবে ছেলেটি গ্রামীণ অস্বচ্ছল পরিবারের নয়। বেশ স্বচ্ছল এবং শিক্ষিত পরিবারের ছেলে। ভবিষ্যতে নাম করুক ইন্দ্রজিৎ মন্ডল এই কামনা করি।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন গ্রুপ ক্যাপ্টেন তথা টেস্ট পাইলট এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর মহাকাশযাত্রী। শুক্লা হলেন ISS পরিদর্শনকারী প্রথম ISRO মহাকাশচারী এবং ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার মিশনের পর দ্বিতীয় ভারতীয় মহাকাশচারী যিনি আমাদের দেশকে গর্বিত করলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শুক্লর জন্ম লখনৌয়ে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং মা গৃহবধূ। ২০১৯ সালে, শুক্ল ইসরোর ইন্ডিয়ান হিউম্যান স্পেসফ্লাইট প্রোগ্রামের জন্য ইনস্টিটিউট অফ অ্যারোস্পেস মেডিসিনের তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তিনি মহাকাশচারী প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত চার প্রার্থীর মধ্যে ছিলেন এবং ২০২০ সালে তাঁকে রাশিয়ার ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল, যা ২০২১ সালে শেষ হয়েছিল। পরে তিনি বেঙ্গালুরুতে ইসরোর অ্যাস্ট্রোনট ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিতে মিশন-নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে, ইসরো আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্লাকে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযানের জন্য মহাকাশচারী দলের সদস্য হিসেবে পরিচয় করায়।
গত ২৬ জুন স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানে চড়ে আইএসএসের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন চার নভশ্চর। এই অভিযানে শুভাংশু ছাড়াও আরও তিন নভশ্চর ছিলেন, ক্রু-কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানস্কি-উইজনিউস্কি এবং টিবর কাপু। ইসরোর সাতটি এবং নাসার পাঁচটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করার জন্য গিয়েছিলেন শুভাংশু। এর মধ্যে অন্যতম হল মায়োজেনেসিস। মাধ্যাকর্ষণের অনুপস্থিতি কী ভাবে পেশিক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে, তা খতিয়ে দেখাই এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও, টার্ডিগ্রেড্স নিয়েও গবেষণা করছেন তাঁরা। পৃথিবীর এই আনুবীক্ষণিক সামুদ্রিক জীব গভীর সমুদ্রের প্রতিকূল অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণশূন্য পরিবেশেও এরা বেঁচে থাকবে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছেন শুভাংশুরা। এ ছাড়া, মাইক্রোঅ্যালগি ও সায়ানোব্যাক্টিরিয়া মহাকাশে কেমন আচরণ করে, তা-ও দেখা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, সুদীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে নভশ্চরদের খাবারের জোগান এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করবে এই গবেষণা।
মহাকাশ থেকে পৃথিবীর উদ্দেশে প্রথম বার্তা দিয়ে শুভাংশু বলেন, "দারুণ সফর!" উচ্ছ্বসিত গলায় বলেন, ‘‘সকল দেশবাসীকে নমস্কার। অসাধারণ সফর ছিল! ৪১ বছর পর ভারত আবার মহাকাশে পা রাখল। এই মুহূর্তে আমরা সেকেন্ডে ৭.৫ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছি। আমার কাঁধে ভারতের তেরঙা পতাকা রয়েছে। এই পতাকাই আমাকে বলে দিচ্ছে যে আমি আপনাদের সঙ্গেই রয়েছি!’’ শুভাংশু বলেন, ‘‘আমি চাই আগামীর এই অভিযানে ভারতের সব মানুষ অন্তর থেকে শামিল হোন।’’ এই যাত্রাপথে শুভাংশু বেছে নিয়েছে শাহরুখ খানের 'স্বদেশ' সিনেমার জনপ্রিয় গান 'ইউ হি চলাচল…৷' আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত, শাহরুখ খান অভিনীত ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই গান শুভাংশুকে মহাকাশ যাত্রায় অনুপ্রাণিত করেছে ৷ কৈলাশ খের এবং হরিহরনের গাওয়া এই গান তাঁর বিশেষ পছন্দের। আর এই সফরের শুরুতে শুভাংশুকে উদ্বুদ্ধ করেছেন স্বয়ং বলিউড বাদশা শাহরুখ খান ৷ পৃথিবী থেকে ৪০০ কিমি দূরের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেও শুভাংশুর সঙ্গী হলো মায়ের রান্না। জানা গিয়েছে, মহাকাশে হালুয়া-সহ একাধিক খাবার নিয়ে গিয়েছেন শুভাংশু শুক্লা। তাঁর স্পেস মেনুর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খাবার হচ্ছে শুভাংশুর প্রিয় মালিহাবাদি আম দিয়ে তৈরি ‘আমরস’। যা নাসা এবং অক্সিওমের দেওয়া নিয়মাবলী মেনেই বানিয়েছেন তাঁর মা আশা শুক্লা। লখনউয়ের বাসিন্দা গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, ছোট থেকেই স্বল্পভাষী, ব্রিলিয়ান্ট, লাজুক স্বভাবের ছেলেটির দারুণ পছন্দের ফল আম।
এক্সিওম মিশন ৪ (Ax-4)- এর ‘আনডকিং’ প্রক্রিয়ায় ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিট (ভারতীয় সময়)-এ মহাকাশকেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয় শুভাংশুদের মহাকাশযান। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে আগেই বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল শুভাংশু এবং তাঁর সঙ্গী তিন মহাকাশচারীকে। সেই সময় রাকেশ শর্মার উক্তির রেশ ধরে শুভাংশু বলেছিলেন, ‘‘ভারত আজও ‘সারে জঁহা সে আচ্ছা’।’’ মহাকাশ থেকে বেশ কয়েকটি ছবি পাঠিয়েছিলেন শুভাংশু। মহাকাশ থেকে ঝলমলে পৃথিবীর বেশ কিছু সুন্দর ছবি দেখেছিলাম আমরা। শুভংশু শুক্লাকে তাঁর ক্রু সদস্যদের সাথে ভোজ করতে দেখা গিয়েছিল।
ভারতের মহাকাশ মিশনের প্রথম ধাপটি শেষ হচ্ছে অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের মাধ্যমে। যা মিশন ‘আকাশ গঙ্গা’ নামেও পরিচিত। এখনও পর্যন্ত বিষয়টি তেমন জটিল ছিল না। মহাকাশচারী শুক্লা দেশে ফিরে আসার পরেই শুরু হবে ভারতের আসল পরীক্ষা। মহাকাশ স্টেশনে ১৮ দিন থেকে শুক্লা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, সে সব কিছুই ব্যবহার করা হবে ভারতের নিজস্ব মহাকাশ মিশনে। ভারতের এই মহাকাশ মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গগনযান’। এই মিশনের জন্য ৩৩,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ভারত। যার ফলে ২০৪০ সালের মধ্যে একজন ভারতীয়কে চাঁদে পাঠানো সম্ভব হবে।
১৫ জুলাই পৃথিবীতে ফিরলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল। ভারতীয় সময় অনুযায়ী ঘড়িতে তখন ঠিক বেলা ৩টে ১ মিনিট। শুভাংশু শুক্ল-সহ চার নভশ্চরকে নিয়ে ভাসতে ভাসতে প্রশান্ত মহাসাগরে নেমে এল স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। আর প্রায় ১৪,০০০ কিলোমিটার দূরে লখনউয়ে বসে সেই দৃশ্যের সাক্ষী দেখে আবেগে ভেসে গেলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেনের বাবা শম্ভুদয়াল এবং মা আশা। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো উপকূলের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে শুভাংশুদের 'ড্রাগন' নামতেই ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে হাত নাড়াতে থাকেন তাঁরা। শুভাংশুর মায়ের চোখে যেন কিছুটা জলও দেখা যায়। তারইমধ্যে 'চক দে ইন্ডিয়া' গান বাজানো হতে থাকে। সেই গানে গলা মিলিয়ে জাতীয় পতাকা ওড়াতে থাকেন শুভাংশুর মা। সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে একে একে বের করে নিয়ে আসা হয় মহাকাশচারীদের। প্রথমে বের করা হয় পেগি হুইটসনকে। তার পর ড্র্যাগন ক্যাপসুল থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে এলেন ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। ক্যাপসুলের ভিতর থেকে বেরিয়েই বাকিদের হাত ধরে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। সাফল্য ও স্বস্তির হাসি তখন লেগে ভারতের গর্ব শুভাংশুর মুখে।
উচ্ছ্বসিত পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স হ্যান্ডলে মহাকাশচারীকে শুভেচ্ছাবার্তা প্রধানমন্ত্রীর। তিনি লিখলেন, ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লাকে স্বাগত জানাতে গোটা দেশবাসীর সঙ্গে যোগ দিলাম আমিও। ঐতিহাসিক মিশন সেরে পৃথিবীতে ফিরলেন তিনি। শুভাংশুর আত্মত্যাগ, সাহস কোটি কোটি স্বপ্নের অনুপ্রেরণা। এই অভিযান আমাদের নিজস্ব মানব মহাকাশ অভিযান ‘গগনযান’-এর দিকে আরও একটি মাইল ফলক।’



