top of page

শারদীয়া দুর্গোৎসব

স্বর্ণালী গোস্বামী

উৎসবের মরশুম

এ বছরের মত শেষ হল শারদীয়া দুর্গোৎসব। বাংলা বছরের শুরুতেই আমাদের সকলের দৃষ্টি থাকে ক্যালেন্ডারের ওই চারটি দিনের প্রতি। পুজো আসছে আসছে ব্যাপারটাই ভালো তা স্বীকার করবেন একবাক্যে সকলেই। তাই যত দিন এগোতে থাকে, আমরা ততই উৎসাহিত বোধ করি। একটা সময়ের পর থেকে শুরু হয়ে যায় ব্যস্ততা। বাড়ির গৃহিণীদের থাকে ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে গুছিয়ে উৎসবের উপযুক্ত তৈরি করে ফেলা, যা যা নতুন কিছু কেনার প্রয়োজন ঘর সাজাতে, সেগুলো কিনে ফেলা। বাড়ির সকলের নতুন জামা- কাপড় কিনে ফেলা ইত্যাদি। বাড়ির ছোট সদস্যরা মেতে ওঠে নতুন পোশাক- নতুন সাজ-গোজের সন্ধানে। লেখকেরা নতুন শারদীয় লেখা শেষ করার দিন গোনেন। নতুন ছবি রিলিজ করে। নতুন গান রিলিজ করে। রেস্তোরাঁগুলো সেজে ওঠে বিশেষ পদ নিয়ে। চারদিকে সাজো - সাজো রব। গোটা শহর নতুন মন্ডপ- প্রতিমার আদল দেখতে দেখতে দিন যাপন করে। এবারে সেই পুজোর দিনগুলি এসে গেলেই হুস করে কথা দিয়ে বেরিয়ে যায়। এখন তো আর চিরদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই আমাদের পুজো, পুজো শুরু হয়ে যায় মহালয়া থেকেই। এবারে তো মহালয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েকটি পুজো উদ্বোধন করে দিয়েছিলেন। আর শেষ হয় দ্বাদশী বা ত্রয়োদশীতে কার্নিভ্যালের মধ্যে দিয়ে।

দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে পুজোর হিড়িকটা যেন আরও খানিক বেড়ে গেছে। তাই বিজয়া এলে মন খারাপ হয়ত একটু বেশিই হয়। তবে এ কথাও সত্যি, এই দুর্গাপুজোর পর থেকেই আমাদের উৎসব মরশুমের শুরু, যা শেষ হয় গিয়ে সরস্বতী পুজোর মাধ্যমে বা দোলের মাধ্যমে। আমার মত সদর্থক এবং যুক্তিবাদী মানুষ তাই বিজয়ার পর থেকেই প্ল্যান করতে থাকে লক্ষ্মীপুজোর এবং শ্যামাপুজোর। দেওয়ালির আলাদাই মাহাত্ম আছে আমাদের সমাজে। আলোর উৎসব, রোশনাইয়ের উৎসব আমাদের নতুন করে উদ্বেলিত করে মেতে উঠতে।

এবারের পুজো আমার কাছে একটু অন্যরকম ছিল। পুজোর মুখেই মাইক্রোওয়েভটা গেল বিগড়ে। মুড পুরো অফ। আসলে আমরা এমন অভ্যাসের দাস হয়ে যাই, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যেন কিছুতেই সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তায় আবার পুজো। অতিরিক্ত কাজের কথা ভাবলেই গায়ে জ্বর আসে। আমার বাড়িতে দুবেলা রান্নার চল নেই। একবেলা রান্না, রাতে গরম করে খাওয়া। সেক্ষেত্রে মাইক্রোয়েভের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে নিত্যদিন। যদিও অনেক জায়গাতেই পড়েছি মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করে খেলে সেই ওয়েভের কারনে শারিরীক সমস্যা হতে পারে, কিন্তু সেসব মানতে গেলে সেই মান্ধাতার আমলে চলে যেতে হয়। ঘড়ি ধরে জীবন- যাপনে অভ্যস্ত কেউ কোনও একটি যন্ত্র পেলে তা আঁকড়ে ধরবেই। তাছাড়া কিছুটা বিশ্রামেরও প্রয়োজন থেকে শরীরের যা আমি খুব মেনে চলি।

সে যাকগে, আর এই নিয়ে ভ্যান্তারা করে লাভ নেই। এবারে প্রথম আমরা বাসে করে পুজো দেখলাম শহরের বেশ কয়েকটা জমিদার বাড়ির পুজো। বেশ অভিনব অভিজ্ঞতা হল তা বলাই বাহুল্য। সঙ্গে রাজ্য পরিবহন দফতরের তরফে প্রাপ্তি হিসেবে ঘরে এল ছোট্ট একটি অসাধারন দুর্গা মূর্তি। এছাড়াও পুজোর শুরুতেই নিজের লেখা সহ একটি উৎকৃষ্ট অনলাইন পত্রিকা 'মা তোর মুখের বাণী'- র প্রকাশ মনকে খুশিতে ভরিয়ে দিয়েছিল।

তবে এই পুজো কিন্তু আরও কিছু ঘটনা বয়ে এনেছে। বয়ে এনেছে ইসরায়েল- গাজা যুদ্ধ, যার পরিণতি যত দিন যাচ্ছে, তত ভয়াবহ হয়ে উঠছে। হামাস- ইসরায়েল একে ওপরের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়ে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। যা শুরু হয়েছিল পুজোর মুখে, তা এখনও বহাল রয়েছে। ওদেশের সাধারণ মানুষ ভীত- সন্ত্রস্ত হয়ে চারদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। শুধুমাত্র নিজেদের সম্বল করে ঘর- বাড়ি ফেলে এক রাতে উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে প্রাণভয়ে। প্রভাব পড়ছে বিশ্ব রাজনীতিতেও। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে প্রভাব পড়েছিল, এই ইসরায়েল- গাজা যুদ্ধের প্রভাব তার চেয়েও অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী হয়ে দেখা দিচ্ছে। যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ইসরায়েল কী পদক্ষেপ নেবে সেই বিষয়ে সকলেই কথা বলছে। শান্তির প্রক্রিয়া পরে কিভাবে শুরু করবে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা বিশ্ব। এছাড়া যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এদিকে আজই (৫ নভেম্বর) বারাক ওবামা ইসরায়েল- হামাস যুদ্ধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "প্যালেস্টাইনিদের সঙ্গে যা যা ঘটছে তা অসহনীয়। এমন মানুষও এখন মারা যাচ্ছেন, যাদের হামাসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।" উল্লেখ্য, ৭ অক্টবর হামাসের হামলার পর গাজায় সংঘাত বৃদ্ধি পায়, যেখানে প্রায় ২৫০০ হামাস জঙ্গি গাজা উপত্যকা অতিক্রম করে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছিল। সেই হামলায় ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। হামাস জঙ্গিরা প্রায় ২০০ র বেশি মানুষকে বন্দী করে। অপরদিকে ইজরায়েলি হামলায় ৯৪৮৮ জনেরও বেশি প্যালেস্টাইন নাগরিক নিহত হন। ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।

এদিকে চলছে ক্রিকেটের মহারণ- বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এবারে আফগানিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে তাদের নাম লেখালো গর্বের সঙ্গে। ৮ পয়েন্ট নিয়ে অনেকটাই এগিয়েছে তারা এপর্যন্ত। সবচেয়ে যে অঘটন ঘটেছে, তা হল পাকিস্তান দলকে আফগান ক্রিকেট দলের পরাস্ত করা। এবং পাকিস্তানকে পরাজিত করে তারা সেই জয় উপহার দিয়েছে পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীদের। যাদের ওপর এই মুহূর্তেও পাকিস্তান অত্যাচার করে চলেছে। আজকের খবর হল লক্ষ লক্ষ আফগান শরণার্থীদের পাকিস্তান ফেরত পাঠাচ্ছে। এমন শরণার্থীও তাদের মধ্যে রয়েছে, যারা বহু বছর ধরে পাকিস্তানে রয়েছে কিন্তু এখনও উদ্বাস্তুর তকমা ছাড়েনি। বহু উদ্বাস্তুর জন্মই হয়েছে পাকিস্তানে, তাও তাদের পাকিস্তানি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। কাজেই বোঝা যাচ্ছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে ।

ভারতও বেশ খেলছে এখনও অব্দি। প্রতিটা ম্যাচ জিতেছে দেশ, যা গর্ব করে বলার মত বিষয়। আজ খেলা হচ্ছে ইডেনে। ভারত প্রথমে ব্যাট করেছে। আমার এই লেখা অব্দি ভারত ৩২৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। এই ম্যাচটা জিতলেই ভারত লিগ টেবিলে প্রতিটা ম্যাচ জিতে যাবে। বিরাট কোহলি তার জন্মদিনে ইডেনকে সেঞ্চুরি উপহার দিলেন। তার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সচিন তেন্ডুলকরের ৪৯ তম শতরান করার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন। তাই বলাই যায় আসন্ন দেওয়ালি উপলক্ষে কলকাতায় রোশনাইয়ের আলোটি জ্বালিয়েই দিলেন বিরাট। উল্লেখ্য, এই ম্যাচ নিয়ে শহরে তুমুল উত্তেজনা ছিল ক'দিন ধরে। টিকিট ব্ল্যাক হওয়া থেকে ইডেনের সামনে টিকিটের হাহাকারের জন্য দর্শকদের বিক্ষোভ, ময়দান পুলিশের ছুটোছুটি, সব ছিল। ম্যাচটা সব উসুল করে দিল বলাই যায়।

bottom of page