top of page

যে দিকে এগোচ্ছে, এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ কী?

স্বর্ণালী গোস্বামী

ব্যক্তিগত চাওয়া- পাওয়া, ভালো- মন্দ, ইচ্ছে- অনিচ্ছের চাইতে রাজ্যের পরিস্থিতি বেশি ভাবাচ্ছে আজকাল

বাংলা নতুন বছর শুরু হয়ে গেল গত মঙ্গলবার। আমরা বাঙালি। আমাদের বাঙালিদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল আমরা সংস্কৃতিমনস্ক। ধার্মিক ও বটে। কিন্তু এই বিষয়গুলো আজকাল কি আর তেমন করে বজায় থাকছে? হয়ত থাকছে। বলা ভালো, আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটা বাহ্যিক মোড়কে, অতিশয় আড়ম্বর সহযোগে নিজেদের এই বৈশিষ্টগুলো প্রকাশ করছি। যদি সেটা না হত, যদি সত্যিই সেই আগের মত আমাদের অন্তঃস্থল থেকে এই মানসিকতা ধারণ করার চেষ্টা করতাম, তাহলে হয়ত আজ যে ভাবনা নিয়ে এই লেখা লিখতে বসেছি, তা লিখতে হত না। নতুন বছরের প্রথম দিনে বাড়িতে আত্মীয়দের নিয়ে একটি গল্প- আড্ডা- খাওয়া- দাওয়ার আসরে মেতে উঠেছিলাম। কিন্তু সেই যে, যে কারনে এই লেখার ভাবনা, চারপাশে যখন ভয়ঙ্কর সব কান্ড- কারখানা ঘটে চলেছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার অন্তত এই আয়োজন শুধুমাত্র নিজেকে নতুন করে চার্জ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। দিনটা ভালো কাটলে কী? তার আগে দিয়ে পরে দিয়ে নিজের কাজের টেবিলে বসলেই তো মাথায় ভিড় করে আসে বদলে যাওয়া চারপাশ। সেখান থেকে নিজেকে ভোলাই কীভাবে?

আমরা হিন্দু। রাজ্য তথা দেশে রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ও। এবারে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমাদের রাজ্যে সরকার পক্ষ বলা ভালো তৃণমূল কংগ্রেস একপাক্ষিকভাবে মুসলিম সম্প্রদায়কে সাপোর্ট করে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিজেপি হিন্দুত্ববাদ নিয়ে হৈ- চৈ করছে। দুটি দলই সমানভাবে নিজেদের গদির জন্য ভোট আদায়ের জন্য আর কিছু না পেয়ে শেষে এই ধর্ম নিয়ে বিভাজনের রাজনীতিতে মেতে উঠেছে। মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় যা হল, তা কী আদৌ কাম্য ছিল? এভাবে আমার জ্ঞানতঃ আগে তো এই রকম মারকাটারি দাঙ্গা দেখিনি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। ওই অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায় এত সাহস পায় কীভাবে? অবশ্যই সরকারের মদতপুষ্ট হয়ে! যা করব আমরা, আমাদের ঢাল হিসেবে সরকার রয়েছে। ভয়েতে হিন্দুরা নিজেদের গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে অন্য জেলায়, ভাবা যায়! আমরা আবার বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলি! শুধু তাই নয়, এই সব গ্রামছাড়াদের পুলিশ একেবারে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, যাতে তাদের খবর সাধারণ মানুষ না পেতে পারে! ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না সাংবাদিকদের। বেরোতে দেওয়া হচ্ছেনা শরণার্থীদের! কী চলছে?

মুখ্যমন্ত্রী আবার বিজেপির দিকে আঙুল তুলছেন? ওরা নাকি দাঙ্গা ছড়াচ্ছে! ওদিকে বিজেপি অন্যান্য কিছু রাজ্যের দাঙ্গার ছবি ভাইরাল করে দিয়ে তা মুর্শিদাবাদের ছবি বলে দাবি করছে? এ যেন মৌকা পেয়েছি, ছাড়ব কেন? মুর্শিদাবাদ হিংসায় মারা গিয়েছেন তিনজন। তার মধ্য়ে অন্য়তম হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাস। বাবা ও ছেলেকে খুন করা হয়েছিল। কংগ্রেস ওই পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তারা কিছুতেই দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। আজ তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা গেলেন তাঁদের বাড়িতে (আগেও গিয়েছিলেন, তবে সময়মতো পুলিশ কিন্তু যায়নি)। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আর্থিক সহায়তার কথাও বলেছিলেন তাঁরা। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিহতের পরিবার কার্যত জানিয়ে দিল, আমরা টাকা নেব না। দিদি এলে আমরা ঝাড়খণ্ডে চলে যাব। দাবি পরিবারের। জাগতে হবে সাধারণ মানুষকে। বুঝতে হবে, বিভিন্ন দলের লোকজন শুধুমাত্র নিজেদের আখের গোছাতে মুখভরা কথা বলে। পুলিশ ইতিমধ্য়েই ধরপাকড় করেছে। অনেকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে এই হিংসার ঘটনাকে ঘিরে অবশ্যই রাজনৈতিক তরজা চলছে পুরোদমে।

অভিযোগ উঠছে সেদিন ভিড়ের মধ্য়ে ছররা গুলিও চালানো হয়েছিল। আজ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন এক যুবক। আহত ওই যুবক ধুলিয়ানের বাসিন্দা। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর দেহে ছররা গুলির আঘাত রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। গত ১২ এপ্রিল তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বলে খবর। এতদিন ধরে ওই যুবক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হননি। কেন তিনি সেখানে ভর্তি হননি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হয়তো তাকে নিয়ে সন্দেহ হতে পারে সেই আশঙ্কাতে তিনি সরকারি কোনও হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি।

মালদা এবং মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। গিয়েছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি তথা জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। হিংসায় বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে করে জাতীয় মহিলা কমিশনের (এনসিডব্লিউ) চেয়ারপারসন সাংবাদিক বৈঠক করলেন ৷ শুক্রবারের পর শনিবারও এনসিডব্লিউ-র চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন ৷ রবিবার ২০এপ্রিল সংবাদ মাধ্যমের সামনে বিজয়া রাহাতকে বলেন, মুর্শিদাবাদের নারীরা যে যন্ত্রণার মুখোমুখি হচ্ছেন তা অসহনীয়। তাদের ঘরবাড়ি লুঠ করা হয়েছে এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের চরম হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'মহিলারা তাদের নিজেদের গ্রামেই বন্দি হয়ে আছেন! তাঁরা ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্বস্ত করেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করবে ৷ অভিযোগ উঠেছে যে, ওয়াকফ অশান্তির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে মহিলাদের উপর ৷ তাঁরা অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন । আতঙ্কে এফআইআর দায়ের করারও সাহস পাচ্ছেন না ৷

এদিকে রবিবার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে আসার ফলে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০০টি পরিবার নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আরও কিছু পরিবার দ্রুত ফিরে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি জারি রয়েছে। জাফরাবাদ এবং আশপাশের এলাকায় তিনটি পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে।’’ তবে প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এখনও অন্তত ২০০ পরিবার ঘরছাড়া।

কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যায়। ঘটনার দিন পুলিশকেই পাত্তা দিচ্ছিলনা দাঙ্গাকারীরা! পুলিশের সামনেই যথেচ্ছভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর হয়েছে, তা ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় সকলেই দেখেছে। ভয়ে পুলিশই মুখ লুকিয়েছে দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে। আমরা তা সবাই জানি। এই পরিস্থিতি তৈরি হল কেন? হাতের বাইরে পরিস্থিতি গেল কেন? কারন মুসলিম সম্প্রদায়কে ছাড় দেওয়ার কথা বলা রয়েছে পুলিশের ওপর মহল থেকে। পুলিশমন্ত্রী তো মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তিনি দায় এড়াতে পারেন না। ফালতু কথায় কথায় বিজেপি বিজেপি করলে চলবে?

ভাবনাগুলো আমাদের এখন রাজনীতিকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। কিছু করার নেই। রাজ্যের পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যে কিছুতেই নেওয়া যাচ্ছেনা। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে বিষয়গুলো নিয়ে না ভাবলে নাগরিক হিসেবে নিজেকে দাবি করব কিভাবে? ব্যক্তিগত চাওয়া- পাওয়া, ভালো- মন্দ, ইচ্ছে- অনিচ্ছের চাইতে রাজ্যের পরিস্থিতি বেশি ভাবাচ্ছে আজকাল। সামনের প্রজন্ম কীভাবে এগোবে? চারদিকের এই পরিস্থিতির মধ্যে ভবিষ্যতের কথাই গুরুত্ব পায় বেশি করে।

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page