
স্বর্ণালী গোস্বামী
ব্রিটিশ আমলের থেকে ভারতের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন রকম সামগ্রীর এক অভিনব সমাবেশ হয়েছিল এই প্রদর্শনীটিতে।
আজ গিয়েছিলাম সেক্সপিয়ার সরণি। অরবিন্দ ভবন। মনটা ভালো হয়ে গেল। অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলাম, লিখব বলে। কিন্তু তা তো সবই নেগেটিভ কথাবার্তা। চারদিকে যা হচ্ছে, তার নিন্দা- মন্দ করতে হতো। কিন্তু মন ভালো হয়ে গেল বলে সে সব ভাবনা বাতিল করলাম। সহজে আজকাল মন ভালো থাকেনা, চারপাশের পরিস্থিতির জন্য। নিজে নিজেকে ভালো রাখা আলাদা ব্যাপার। সেটা একটা প্র্যাকটিস। কিন্তু ভালো থাকার রসদ পাইনা কোথাও। ক্কচিৎ কদাচিৎ এমনটা হয়। তাই ভাবলাম আজ তাই নিয়েই লিখি।
'কলকাতা কথকতা'। নামটা শুধু শোনা ছিল, কিসের জন্য, কেন তা মনে নেই। তবে গত শুক্রবার একটা ফেসবুক ভিডিওতে দেখলাম এই সংস্থাটি একটি এক্সিবিশন করছে নিজেদের সংগ্রহের জিনিস দিয়ে। 'রাজ থেকে স্বরাজ'। ব্রিটিশ আমলের থেকে ভারতের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন রকম সামগ্রীর এক অভিনব সমাবেশ হয়েছিল এই প্রদর্শনীটিতে। সঙ্গে ছিল অরবিন্দ ভবনের নিজস্ব সংগ্রহের নথি।
একটি নতুন ক্যামেরার আগমন ঘটেছে আমার নিজস্ব পরিসরের অন্দরে। সেই কোন সময় থেকে একটা ঠিকঠাক ক্যামেরার শখ! তা এতদিনে পূরণ হল। মনে হচ্ছে যেন একটা অলঙ্কার পেয়েছি আমি। তো সেই ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অরবিন্দ ভবনের উদ্দেশ্যে। আশা, কিছু ভালো ফুটেজ অবশ্যই পাবো। যেমন ভাবা, তেমনই হলো। হলে ঢুকেই অসাধারন পরিবেশ মুগ্ধ করছে সকল আগত অতিথিদের। রয়েছে সিপাহী বিদ্রোহের আমলের নথি, স্বাধীনতার দিনের সংবাদপত্র। রয়েছে বিভিন্ন মনীষীদের স্বাক্ষর, অরিজিনাল ছবি, বিজ্ঞাপন, সেই সময়কার দেশলাই বাক্স। দেখা যাচ্ছে, তৎকালীন ব্যবহার্য বিভিন্ন রকম সামগ্রী। সেই পুরোনো আমলের বাক্সের মধ্যে চোখ দিয়ে দেখার বায়োস্কোপ। রয়েছে পেইন্টিং, ছবি বাঁধাইয়ের সংগ্রহ। একজনের সংগ্রহে দেখলাম সেই আমলের বিবাহের নেমতন্ন, তথা কার্ড, টোপর ইত্যাদিও।
রয়েছে ঋষি অরবিন্দের লেখা বই, নথি, চিঠি, তাঁকে নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। শ্রী মায়ের বারীন ঘোষকে লেখা চিঠি। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পাঁচটি ছবি, যা রেখেছেন স্বয়ং তাঁর বংশধর প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। এক কথায় বলতে গেলে আপ্লুত হয়ে যাওয়ার মত কালেকশন।
আসলে শুধু সরকারের দোহাই দিই আমরা বিভিন্ন প্রাচীন জিনিসপত্র, নথি কৃত্যাদি সংগ্রহ করার জন্য। কিন্তু আমাদের মধ্যেও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেদের দায়িত্ব মনে করে এই কাজটা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন, সংগ্রাহক হিসেবে তাঁরা আমাদের কাছে শ্রদ্ধার তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। আজ লেখা অহেতুক অতিরঞ্জিত করে শব্দ বাড়াবো না। যেদিন যেমন প্রয়োজন হয়, সেদিন তেমন শব্দ দিয়েই লেখা সম্পন্ন করি। আজ ঠিক এটুকুই বলতে চেয়েছি। তাই এটুকু বলেই শেষ করব। আশা করব আবার এঁরা এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করে সাধারন মানুষদের এমন অসাধারন জিনিস দেখার সুযোগ করে দেবেন।