top of page

বিশ্বাস রাখছি এই নতুন জেগে ওঠা বাঙালির প্রতি, প্রতিবাদী মিছিলের শহরের প্রতি

স্বর্ণালী গোস্বামী

1 Sept 2024

বিশ্বাস রাখছি সর্বংসহা বাঙালির এই হঠাৎ জেগে ওঠার ওপর, বিশ্বাস রাখছি কালের নিয়মের ওপর, সময় বদলাবেই। সময় বদলাবেই|

তিনটি মিছিলের আজ সাক্ষী থাকল কলকাতা। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা ছিল মহানাগরিকদের মিছিল, গোলপার্ক থেকে নন্দন ছিল রামকৃষ্ণ মিশন প্রাক্তনীদের মিছিল এবং আরজি করে আন্দোলনরত ডাক্তারেরা লালবাজার সামিল হয়েছিলেন অভিযানে। সেই যে ১৪ অগাস্ট থেকে মিছিল দেখছে আমাদের শহর, দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রতিবাদের আঁচ। আজও সেই ধারা অব্যাহত।

আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ঘরের আলো নিভিয়ে মোমবাতির আলোয় প্রতিবাদ জানাতে বলেছেন আন্দোলনরত ডাক্তারেরা। আশা করব, আমরা সকলে সেই আবেদন মেনে সকলে ঘরের আলো নিভিয়ে প্রতিবাদ জানাবো সেদিন। তবে রোববারের আড্ডায় একটু তর্ক- বিতর্কও চলতে পারে। এই ইস্যুটা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ বলছেন রাজনৈতিক দল কেন এর ফায়দা নিয়ে মিছিল করবে? আমি কিন্তু প্রথম থেকেই এই মতকে সমর্থন করতে পারছিনা। এত বড় একটা ইস্যু। রাজনৈতিক দল তাদের মত করে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলবেনা? প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের এ তো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিরোধ করার অধিকার। তাদের নিন্দা করার তো কোনও মানে হয়না। এবং সেই কারণেই হাই কোর্টও রাজ্যের বর্তমান শাসক দলকে সমাবেশ বানচাল করার বা মিছিল বাতিল করার আর্জিকে ভর্ৎসনার সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছে।

তবে হ্যাঁ, আমি শুরু থেকেই বলছি, আমাদের সাধারণ মানুষকে বিবেচনা করে এগোতে হবে, কোন প্রতিবাদে আমরা সামিল হবো, আর কোন প্রতিবাদে আমরা সামিল হবোনা। সবাই যে শান্তিপূর্ণ মিছিল করবে তা তো হতে পারেনা! অশান্তি করা তো এখন ট্রেন্ড। করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল! তার মোকাবিলা করবে রাজ্য সরকার। এইবার আমি বলবো, এই অশান্তি, দু'দিন মূল আন্দোলন বা মূল প্রতিবাদকে হাইজ্যাক করে নিয়েছিল কেন? মিডিয়ার জন্য। কেউ অস্বীকার করতে পারবেন? সেটা কেন হল? রাজনৈতিক দল, মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে শুধু? মিডিয়া এর জন্য দায়ী নয়? তারা কেন বারেবারে বিজেপি সমর্থিত নবান্ন অভিযানকে অত মাইলেজ দিল? না দিলেই হত। সেদিন তো আন্দোলনরত ডাক্তারদেরও একটা মিছিল ছিল, তা কেন তেমন গুরুত্ব পেলনা?

সমাজ তো ধর তক্তা মার্ পেরেকের মত তুড়ি মারার মত করে বদলে যাবেনা রে বাবা! আমাদের বদলটা আনতে হবে। তার জন্য রাজ্যের বিরোধী দল কেন মিছিল করবে, কেন অশান্তি করবে বলে তো লাভ নেই। দুষতে হবে রাজ্য সরকারকে। অত ব্যারিকেড কেন করল চারদিকে? ১৪ তারিখে রাজ্য সরকারের পুলিশ কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকলো? রাজ্যের প্রতিটা মানুষ শিক্ষিত, বোধবুদ্ধি সম্পন্ন তা তো ভেবে বসলে চলবেনা! কিছু তো থাকবে অতি উৎসাহী লোকজন, যারা মার্- দাঙ্গাকেই প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে জানে! তারা তো এই ঘটনাকে ইস্যু করে তাদের মত করে রাস্তায় নামবেই। তার জন্য মোকাবিলা করতে হবে। মিডিয়াকে সেই খবরকে তেমন মাইলেজ দেওয়া যাবেনা, যাতে সেই অশান্তি গুরুত্ব হারায়। তা কী মিডিয়া করল? পাশাপাশি আমরা যদি সেদিন টিভি খুলে না বসতাম, তাহলেই চ্যানেলগুলো টিআরপি পেতনা! আমরা কী কেউ সেদিন টিভি না খুলে থেকেছি? বুকে হাত রেখে বলুন তো, আমরা আগে থেকে আঁচ পাইনি, ২৭ তারিখ একটা অশান্তি হতে চলেছে শহরে? ক'জন আমরা টিভির রিমোট খবরের চ্যানেলে না রেখে অন্য কিছু দেখেছি? কেন দেখলাম আমরা? শুধু বিজেপিকে দুষলে হবে? আমরাও তো আজকাল বসে বসে ঝগড়া, মারামারি, খুন এগুলোই গিলি টিভির পর্দায়।

অডিও, ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হল। আপনারা কেউ কী খুন হওয়া ওই ডাক্তারের মা- বাবার কথা গুরুত্ব দিলেন, তাঁরা যে বলছিলেন, তাঁরা আজকাল টিভি দেখছেন না? এইরকম আমরাও তো করতে পারি। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে (হতে পারে সেটা সকাল বা দুপুরে বা রাতে) টিভি খুলে দিনের খবরগুলো জাস্ট জেনে নিলাম। তা তো আমরা করিনা! মারপিট, খুন- খারাপি হলে দিনভর টিভির সামনে বসে সেগুলো গিলতে থাকি, প্রতিটা চ্যানেলে সান্ধ্যকালীন ঝগড়ার আসরে যোগদান করে সকলের শাপশাপান্ত করি। যারা কাজগুলো করছে, শুধু তাদের দোষ? আমরা যে সেগুলো তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি, তার বেলায় ধোওয়া তুলসীপাতা! আমরা না দেখলেই টিভি চ্যানেল দেখাবেনা। নির্যাতিতার গায়ের চাদর লাল ছিল, না নীল নাকি সবুজ- তাই নিয়েই একটা গোটা দিন কাটিয়ে দিল খবরের কারবারিরা। কাটাবেনা? তারা তো খবর পেয়ে গেছে। সবাই জানে, এই খবরগুলোই মানুষ গিলবে। মুষ্টিমেয় ক'জন হায় হায় করলেও গোল গোল করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে এই সমস্ত বিষয়।

কি অবস্থা হচ্ছে আমাদের, একবার কী নিজেদের দিকে আমরা তাকিয়ে দেখছি? রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অস্থি- কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে আসছে, একটা লোক চূড়ান্ত দুর্নীতি করে রোজ দাপটের সঙ্গে সিবিআই অফিসে যাচ্ছে আর আসছে। আর আমরা যতসব ঠুনকো বিষয়কে নিয়ে আলোচনায় মেতে আছি! আরও একটা কথা আমার বলার আছে। এটাও সবার সঙ্গে মিলবেনা। আমরা কী করে আশা করছি, দুই দিনে অপরাধী ধরা পড়বে এবং তার উপযুক্ত শাস্তিও হয়ে যাবে? এটা কী বাস্তবে সম্ভব? আমরা জানিনা, আমাদের দেশের আইন কীভাবে শ্লথ গতিতে এগোয়? তার ওপর এই মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে এত বড় একটা চক্রের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে। যা হাড়হিম করা ঘটনা বললেও বোধহয় কম বলা হয়। একটু ভাবুন। ডাক্তারি পড়তে আসছে ছেলে- মেয়েগুলো। অরে বাবা এন্ট্রান্স দিয়ে তো ঢুকতে হচ্ছে! তার মানে যথেষ্ট মেধা আছে তাদের মধ্যে। তারা যখন কোনও অপরাধ জগতের সঙ্গে নিজেদের জড়াবে, আঁটঘাট বেঁধেই তো কাজ করবে না কি! সাধারণ বুদ্ধিতেই তো তাই বলে। এ তো ছিঁচকে চোর নয়, যে নিজের কৃতকর্মের ক্লু ছেড়ে রাখবে নির্বুদ্ধিতার কারনে। এই সন্দীপ ঘোষ, বুঝতে পারছি না আমরা কী ঘোড়েল লোক! নইলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাকে সার্টিফিকেট দিচ্ছে, স্বাস্থ্য ভবন তাকে বারবার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং দিচ্ছে! চারদিকে কিভাবে জাল বিস্তার করে রেখেছে সে! সিবিআই অত সহজে তাকে ধরে ফেলবে? কিছু বেনিয়ম ধরা পড়বে, তবেই তো ধরবে না কি? সে তো কাজকর্ম করেছে চারদিক গুটিয়ে! আর রয়েছে আমাদের রাজ্যের চূড়ান্ত দুর্নীতি। সব কিছু সামলে তবেই তো কোনও শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত হবে।

যেতে যেতে বলব, আমি বিশ্বাস রাখছি এই এত মানুষের প্রতিবাদের সাহসের ওপর। বিশ্বাস রাখছি সর্বংসহা বাঙালির এই হঠাৎ জেগে ওঠার ওপর, বিশ্বাস রাখছি কালের নিয়মের ওপর, সময় বদলাবেই। সময় বদলাবেই। এই প্রতিবাদী কলকাতা যেন আমরা দেখতে পারি, তাহলেই নড়বে বর্তমান সরকার, কথা বলবে সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন তুলবে সাধারণ মানুষ, কন্ঠ ছাড়বে ঝিমিয়ে পড়া বাঙালি। দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে মেনে নিতে নিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাঙালি।

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page