top of page

বিভিন্ন অনৈতিক কাজ- কারবার নিয়ে জর্জরিত রাজ্য ভোটের পালে হাওয়া তুলতে পারবে কী ?

স্বর্ণালী গোস্বামী

31 Aug 2025

কোনঠাসা শিক্ষা দফতর তথা শিক্ষামন্ত্রী এ- ক'দিন মাথার চুল ছিঁড়ছিলেন কিভাবে শান্তা দত্ত কে জব্দ করা যায়

২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশের সময়েই বৃহস্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক কলেজে নির্বিঘ্নে স্নাতকের পরীক্ষা হলো। প্রায় ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে এ দিন ৯৬ শতাংশ ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দে। তাহলে কী দাঁড়ালো? এই যে ২৮ অগস্ট পরীক্ষা নিয়ে বিস্তর জল ঘোলা হল, তা যে নেহাতই জবরদস্তি পড়ুয়াদের ওপর আরোপ করা হচ্ছিল তা বেরিয়ে এল। কই, কোনও গন্ডগোল তো হলনা! ছাত্র- ছাত্রীরা দিব্যি পরীক্ষায় বসলেন! যাঁরা না বসার তাঁরা বসলেন না, তাঁদের হয়তো যায়- আসেনা। কিন্তু যারা সত্যি সত্যি পরীক্ষাটা দিতে চাইছিলেন, তারা শুধুমাত্র একটি দলীয় প্রতিষ্ঠা দিবসের হুল্লোড়ের জন্য বিরক্তিকর একটা বিষয়ের সম্মুখীন হতেন!

শুধুমাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয় এমন অনড় মনোভাব নিতে পারেনি। প্রশ্ন তো সেখানেই ওঠে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলনা! শিক্ষা ব্যবস্থা তো কোনও রাজনৈতিক দলের তোষামোদ করবে তা ভাবাও অন্যায় ছিল! ২০২৫ এ দাঁড়িয়ে এমনটাই দেখতে হচ্ছে আমাদের। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো চাইছে পড়াশোনা করতে। তাদের জোর করে হাত- পা বেঁধে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন কলেজে ছাত্র সংগঠন রাজনীতিতে বুঁদ করে রেখেছে জোর করে অরাজনৈতিক ছেলে- মেয়েদের। জবরদস্তি তাদের দলের খাতায় নাম লেখাতে হচ্ছে। কেন হবে এমনটা? কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজনীতিতে আসতে চাইলে ঠিক আছে, নইলে জোর করে তো খাতায় নাম লেখানো উচিত নয়! তাই হচ্ছে বেশিরভাগ রাজ্যের কলেজগুলিতে। ফলস্বরূপ ভোঁতা একটা ছাত্র সমাজ পাচ্ছি আমরা। সরকারি স্কুল- কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পাশ করে যারা একটু সচেতন, তারা বাইরে চলে যাচ্ছে, নইলে বাকিরা দলের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। এই কী পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ?

রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের রেজাল্ট বেরোলো প্রায় দুই মাস পর। এই সময় সমস্ত ক্লাস পুরোদমে শুরুই হয়ে যাওয়ার কথা। দেশের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আমাদের রাজ্যের ছাত্র- ছাত্রীরা এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পিছিয়ে পড়লে চাকরির বাজারে কমপিট করবে কিভাবে অন্যান্য রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ ছাত্র- ছাত্রীদের সঙ্গে? তা ভাবার সময় রাজ্য সরকারের আছে না কি? তারা তো শুধু নিজেদের ভোট ব্যাংক পূরণ করতে চেঁচিয়ে, গলা ফাটিয়ে, সত্যি- মিথ্যে সাজিয়ে বিরোধীদের তুলোধোনা করতেই ব্যস্ত!

এই যে ২৮ তারিখে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা হল, তার পরে কোনঠাসা শিক্ষা দফতর তথা শিক্ষামন্ত্রী এ- ক'দিন মাথার চুল ছিঁড়ছিলেন কিভাবে শান্তা দত্ত কে জব্দ করা যায়। গতকাল জম্পেশ একখানা টপিক পেয়ে গেলেন ব্রাত্য বসু। কবে এবং কিভাবে কলকাতার উপাচার্য মুখ্যমন্ত্রীর নামে মিথ্যা অভিযোগ আনলেন, কে জানে? তিনি প্রতি সময় বলেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকেরা বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, পরীক্ষা যাতে পিছিয়ে দেওয়া হয়। তিনি তো একবারও বলেন নি, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন! এখন যাঁরা তাকে এমনভাবে ধন্দে ফেলে সিদ্ধান্ত বদল করতে চাইছিলেন, তারা যদি পাল্টি খেয়ে যান, তাহলে কী উপাচার্যের দোষ? শিক্ষা দফতর থেকে যে পরীক্ষা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি এসেছে, তা তো প্রকাশ্যে এসেছে মিডিয়ার কাছে। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে স্পেশাল সিন্ডিকেট মিটিং ডাকা হয়। সেই মিটিং- এ ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরীক্ষা হবে। ওই মিটিং এ সরকার ঘনিষ্ঠ ওমপ্রকাশ মিশ্র সমানে সওয়াল করতে থাকেন পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। তা সবার জানা। তা সত্ত্বেও শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যকে মিথ্যাচারী বলেন কোন মুখে? মুখে আটকায় না? লজ্জা হয় না, এমন অটল থেকে উপাচার্য দেখিয়ে দিলেন রাজ্যের ছাত্র- ছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে চায়, দলের ঝান্ডা নিয়ে গুন্ডাগিরি করতে চায়না, তা দেখার পর!

আরও আছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন গতকাল অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করল। মোট ১৮০৪ জন ‘দাগি’ প্রার্থীদের নাম রয়েছে প্রকাশিত তালিকায়। ২০২২ সালের নির্দেশে যা উল্লেখ করেছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ রাজ্য সরকার স্বীকার করে নিল ১৮০৪ জনের চাকরি অবৈধভাবে তারা দিয়েছে৷ স্বাধীনতার পর দেশে এমন নজির নেই৷ এমন কি, ত্রিপুরাতেও বামফ্রন্ট সরকার অবৈধভাবে চাকরি দেওয়ার কথা স্বীকার করেনি৷ প্রমাণিত হল সরকার বেআইনি কাজ করেছে৷ কী হল? চিৎকার, চেঁচামেচি কোথায় গেল? অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে চাকরীখোর বলা সরকার এখন কী বলবে? তার ওপর সেই তালিকায় রয়েছে একের পর এক তৃণমূল নেতা- নেত্রীর নাম তথা তাদের নিকটাত্মীয়ের নাম! কী বলবে শিক্ষা দফতর? এরা তাও বলবে। নাক- কান কাটা রাজ্য সরকারের তাও গলা ফাটবে, যেমন দুই দিন চুপ থেকে ব্রাত্য বসু উপাচার্যকেই মিথ্যেবাদী আখ্যা দিলেন!

২০২৬ এর ভোটের আবহ চারদিক দিয়ে অদ্ভুত একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। একদিকে চারপাশে নক্কারজনক ধর্ষণ- খুন, একদিকে ভোটার তালিকায় চূড়ান্ত গরমিল, একদিকে এই স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের নিয়োগ নিয়ে চূড়ান্ত দুর্নীতি! কী করবে রাজ্যের সাধারণ মানুষ? কোন সরকারকে সিংহাসনে বসবে? তা তো সময়ই বলবে। তবে এই ক'দিনে যতগুলো ঘটনা ঘটল পর, পর তা দেখে শুনে শুধু মনে হচ্ছে ভোটের হাওয়া কোনদিকে বইবে, সেটাই এবারে দেখতে হবে। কারন সরকারে আসীন দল এবং বিরোধী দল একে অন্যের বিরুদ্ধে এই বিষয়গুলোকে কিভাবে কাজে লাগায়, তার ওপরেই নির্ভর করবে রাজ্যের মানুষের কাছে কতদূর পৌঁছতে পারছে দলগুলি। নইলে 'নোটা'র পাল্লা আরও ভারী হবে, এও ঠিক।

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page