স্বর্ণালী গোস্বামী
নিজেদের যোগ্য সম্মান, নিরাপত্তার অধিকার না পেয়ে কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রতিবাদ নয়? আমার প্রশ্ন কুনাল ঘোষকে
"কর্মবিরতির হুমকি থ্রেট কালচার নয়?" প্রশ্ন কুনাল ঘোষের! নিজেদের যোগ্য সম্মান, নিরাপত্তার অধিকার না পেয়ে কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রতিবাদ নয়? আমার প্রশ্ন কুনাল ঘোষকে। সাংবাদিক কুনাল ঘোষকে। কী বলবেন কুনাল ঘোষ? এতদিন সাংবাদিকতার জন্য কলম হোক বা গলা- কপচিয়েছেন, প্রতিবাদ আর হুমকির মধ্যে তফাৎ করতে শিখলেন না? শুধুমাত্র পার্টির চামচাগিরি করার চক্করে প্রতিবাদের সংজ্ঞাটাই ভুলে, ঘেঁটে তাতে হুমকির পরত পরাতে চাইছেন?
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে মেডিক্যাল কলেজগুলির নিরাপত্তা নিয়ে শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য। রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছিল, পরবর্তী সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া কথা রাখেনি রাজ্য। অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজেই নতুন সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়নি। এ ব্যাপারে কী বলবেন মিঃ কুনাল ঘোষ?
রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কামারহাটির সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। তাতে রোগী পরিবারের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে পুলিশকর্মীরা। সেই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে। কী বলবেন মিঃ কুনাল ঘোষ? নিরাপত্তা তো বাড়ানো হয়েছিল এই হাসপাতালে। কিন্তু যে কারনে নিরাপত্তা বাড়ানো হল, সেই কাজটা কী আদৌ করতে পারল নিরাপত্তারক্ষীরা? সেক্ষেত্রে কী বলবেন আপনি? ও একটু আধটু মার খেলেই কী কাজ বন্ধ করে দিতে হবে? এই হবে তো আপনার উত্তর? জানিনা কিভাবে আপনি সাফাই গাইবেন!
শরীরটা বিশেষ ঠিক নেই। ভেবেছিলাম পুজোর আগে হয়তো এই সেগমেন্টে আর লিখতে পারবনা। খবরের ভিডিওগুলো ছেড়ে দেবার পর জাস্ট নিউজ আপডেট পেতেই নিউজ পোর্টাল খুললাম। আজ সারাদিনে নিউজ দেখা/ পড়া হয়নি। স্ক্রল করতে করতেই এই খবর। মাথাটা গরম হয়ে গেল। ক্রমাগত আলটপকা মন্তব্য করে যাচ্ছেন উনি। চারদিকে এত কথা হচ্ছে ওনাকে নিয়ে, কুনাল নিজে নির্বিকার। কিন্তু প্রতিবাদকে হুমকির তকমা দিয়ে আন্দোলনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা দেখেই আমার মাথাটা পুরো গরম হয়ে গেল। কোর রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা এ ধরনের মন্তব্য করলে তবু মনে হয় কীভাবে চাল চালছে দেখো! কিন্তু এক্ষেত্রে মনে হয়, আপনারাই তো টিপিক্যাল রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে সরে এসে রাজনীতির বলিষ্ঠ দিকটাকে তুলে ধরার ব্রতী হতে পারতেন, আশ্চর্য্জনকভাবে তা না করে ঝানু রাজনীতিকের মত আলফাল বকে যাচ্ছেন, এতে করে আপনার মত মানুষ নিজের কাছে ঠিক থাকতে পারছেন তো?
আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টে শুনানি আছে। তার আগে আবার পথে নামলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কলকাতায় সাতটি মশাল মিছিল করলেন তাঁরা। পাশাপাশি, জেলার মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরাও পথে নামলেন। এটা তো দরকার। আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। হবেই। যতক্ষন না সব দাবি পূরণ হয়ে কাজগুলো সমাধা হচ্ছে। যেদিন ডাক্তারেরা কাজ যোগদান করল, আমার নিজের বক্তব্য ছিল, দাবি পূরণ না হলে যেন সবাই মিলে ফের পথে নামতে পারে, তার জন্য জোটবদ্ধ থাকা। বর্তমান রাজ্য সরকার কী ভেবেছে? জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ছেলেখেলা ছিল? দু- চারটে বৈঠক করেই ললিপপ ধরিয়ে দেওয়া গেল? সমাজের নতুন প্রজন্ম তাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করবেনা? তারাও কী পুলিশ প্রশাসন তথা নেতা/ নেত্রীদের মত চাকর- বাকর শ্রেণীতে পরিণত হবে? সরকারের মন্ত্রীরা তথা পুলিশ প্রশাসন একটু নড়ে বসুন। এভাবে রগড়ে রগড়ে আর কতদিন চালাবেন?
জুনিয়র ডাক্তারেরা আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা অবস্থান তুলে নিলেও প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন, পরের দিন শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনের অবস্থান উঠবে। তবে অবস্থান উঠলেও আন্দোলন যে চলবে, তা-ও ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। সেই মতোই রবিবার মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত মশাল মিছিল করছেন জুনিয়র ডাক্তারদের একটি দল। একই ভাবে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ থেকে এসপ্ল্যানেড, ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পার্ক সার্কাসের সেভেন পয়েন্ট, সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডানলপ, আরজি মেডিক্যাল কলেজ থেকে শ্যামবাজার ফাইভ পয়েন্ট ক্রসিং এবং কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ থেকে যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মশাল হাতে মিছিল কর্মসূচিতে অংশ নিলেন চিকিৎসকরা।
২৭ সেপ্টেম্বর, রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কামারহাটির সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। তাতে রোগী পরিবারের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে পুলিশকর্মীরা। কিছুদিন আগেই এই হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। একটি পুলিশ আউটপোস্ট তৈরি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনায় প্রশ্নের মুখেপড়েছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা। এবার এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাকে শোকজ করল স্বাস্থ্য দফতর। ভালো কথা। এবারে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কিছু শক্তপোক্ত সিদ্ধান্ত নিক স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দুর্নীতিতে ডুবে থাকা ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করুক। শুধুমাত্র আন্দোলন কেন হবে, এই প্রশ্ন না তুলে আন্দোলন যাতে না হয়, তার সত্যিকারের ব্যবস্থা করুক রাজ্য এবং রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসন। ঠিক ডাক্তারেরা নিজেদের কাজে ফিরবেন এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন।