top of page

পৃথিবীতে ফিরছেন সুনীতারা

স্বর্ণালী গোস্বামী

যে যেমন খুশি আলোচনায় মেতে থাকুন, আমরা বরঞ্চ তাদের ঘরে ফেরার আনন্দে আর তিন দিন, দিন গুনি

ভেবেছিলাম সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার নিয়ে আজ লিখব। কিন্তু ভেবে দেখলাম, আমার এই লেখার থেকে এতদিন রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর সুনিতারা ঘরে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছেন, তাই নিয়েই লিখি। আসলে আমি বরাবরই সদর্থক মনোভাবে বিশ্বাসী। তাই বলে সমাজে যে অন্যায় হয়ে চলেছে অনবরত তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই না একেবারেই। কাজেই সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার নিয়ে লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে শেষ খবর হল পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের তরফে পবিত্র সরকার স্যার, রজত বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন দিল্লির সাহিত্য অ্যাকাডেমির কাছে। বলা হচ্ছে, পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য এ বছর বাংলার কোনও সাহিত্যিককে পুরস্কৃত করা যায়নি। কিন্তু সে বিষয়েও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ৫২ বছর পরে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার নিয়ে এমন ঘটনায় শোরগোল শুরু হয়েছে সাহিত্যমহলে। অনেকে একপ্রকার নিশ্চিত, কাকে পুরস্কার দেওয়া হবে, তাই নিয়েই রাজনৈতিক কোনও সমস্যা হয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবেই বিষয়টি পরিচালিত হয়ে পুরস্কারের রাস্তা বন্ধ করেছে। দেখা যাক শেষ অব্দি কি হয়। তারপর না হয় এ নিয়ে লিখব। আজ চলুন ঘুরে আসি মহাকাশে।

ইলন মাস্কের মহাকাশযান সুনিতা উইলিয়ামসদের ফিরিয়ে আন্তে যাচ্ছে শোনা ইস্তক আনন্দে আর মন ভরছে না। প্রায় এক বছরের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। সব সময় সকলের মনে তাঁদের সম্পর্কে উৎকন্ঠা হয়েছে দেশ- কালের বাধা না মেনে। মহাকাশে সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর কেমন আছেন, কী খাচ্ছেন, কবে ফিরবেন, সুস্থ আছেন কি না, হাজারো প্রশ্ন আমাদের মনে এসেছে এই একটা বছরে। আশা নিয়ে বেঁচেছি, এই শুনব তাঁদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আমি আমার একটা লেখায় এ নিয়ে লিখেছিও। যদিও নাসা আমাদের উৎকন্ঠা দূর করেছে প্রতি মুহূর্তে। মাঝে মাঝেই আমরা ওঁদের ছবি দেখতে পেয়েছি। সাংবাদিক বৈঠকও করেছেন তাঁরা। আশ্বস্ত হয়েছি ভালো আছেন জেনে। তারপর এই সুখবর। এই নিয়ে না লিখলে চলে?

এত দিন পরে সহকর্মীদের পেয়ে উচ্ছ্বসিত সুনীতারা। তাঁদের উচ্ছ্বাসের সেই মুহূর্ত ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। মার্কিন টিভি চ্যানেলে তা সরাসরি সম্প্রচারিতও হয়েছে। স্পেসএক্সের মহাকাশযান ক্রিউ-১০ কে ফ্যালকন-৯ রকেটে করে পাঠানো হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াই নিরাপদভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর এই মহাকাশযান অবতরণের পরেই ওই দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস, এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ইলন মাস্কের মহাকাশযান পৌঁছে যায় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে। তার পর প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ ধরে চলে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। অবশেষে সকাল ১১টা ৫ মিনিটে ড্রাগন ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে ভাসতে ভাসতে স্পেস স্টেশনে ঢুকে পড়েন অ্যানি ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ারস, তাকুয়া অনিশি এবং কিরিলি পেসকভ। হাততালি দিয়ে ওঠেন সকলে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে হাসি-ঠাট্টা, কুশল বিনিময়। সেই সমস্ত মুহূর্ত ধরা পড়েছে নাসার লাইভ স্ট্রিমিংয়ে। সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সুনীতা জানান, তাঁদের আসতে দেখে তিনি ভীষণ খুশি। একে ‘একটি অসাধারণ দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

নাসা সূত্রে খবর, আগামী বুধবার ১৯ মার্চ ভারতীয় সময় অনুযায়ী দুপুর দেড়টা নাগাদ সুনীতা-সহ চার জনকে নিয়ে ফের পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দেবে স্পেস এক্সের মহাকাশযানটি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে ভাসমান গবেষণাগারের (ল্যাবরেটরি) ‘কমান্ডার’ সুনীতা। ক্রিউ-১০ অভিযানে চার মহাকাশচারীর মধ্যে এক জনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন তিনি। তাঁদের সঙ্গেই পৃথিবীতে ফিরবেন নাসার নিক হগ এবং রাশিয়ার আলেকজান্ডার গর্বুনভ। যে চার জন অর্থাৎ নাসার অ্যান ম্যাক্লেন, নিকোল আইয়ার্স, জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সার প্রতিনিধি টাকুয়া ওনিশি এবং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের প্রতিনিধি কিরিল পেসকভ আজ গেলেন, সুনীতারা তাঁদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে পৃথিবীতে ফিরবেন।

গত বছরের জুন মাসে মহাকাশে পাড়ি দেন সুনীতা এবং বুচ। আট দিন পরেই তাঁদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু যে যানে চড়ে তাঁরা গিয়েছিলেন, সেই বোয়িং স্টারলাইনারে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। ফলে তাতে সুনীতাদের প্রত্যাবর্তন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। নাসা সিদ্ধান্ত নেয়, ওই মহাকাশযানে সুনীতারা ফিরবেন না। ফলে মহাকাশে আটকে পড়েন সুনীতা এবং বুচ।

মহাকাশ থেকে এই দুই মহাকাশচারীর প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। এর জন্য বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্ক। তাঁদের অভিযোগ, ওই দুই মহাকাশচারীকে ফিরিয়ে আনার জন্য নাসা দ্রুত পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে এত মাস ধরে দুই নভশ্চরকে মহাকাশে ফেলে রাখার জন্য কত টাকা মাসুল গুনতে হবে নাসাকে, সেটাই কিন্তু এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে আলোচনার বিষয়। তবে যে যেমন খুশি আলোচনায় মেতে থাকুন, আমরা বরঞ্চ তাদের ঘরে ফেরার আনন্দে আর তিন দিন, দিন গুনি।

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page