top of page

চাকরিহারাদের দায় কে নেবে, বিরোধীরা?

স্বর্ণালী গোস্বামী

রবিবারে আড্ডা আজ বৃহস্পতিবারেই সারছি| ছ্যাবলামো হচ্ছে, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী? বদমায়েশি করবে আপনার লোকজন, আর আপনি আঙুল তুলবেন অন্য দলের ওপর?

আজ আর খবর লিখলাম না। মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফর নিয়ে আড্ডা দেব ভেবেছিলাম, কিন্তু সময়াভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি। অবশ্যই ঢাক- ঢোল পেটাতাম না। আমার অতখানি অধঃপতন ও হয়নি, যে এই অক্সফোর্ড অভিযান, (পড়ুন অক্সফোর্ড স্বীকৃত কেলগ কলেজে একটি বক্তৃতা) নিয়ে গালভরা কথা বলব। সে যাকগে। নিজের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রগলভতা নিয়ে নতুন করে আর কিই বা বলার আছে? তবে আজ এই বিষয় নিয়ে নিজের কথা গরম গরম বলার লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই রবিবারে আড্ডা আজ বৃহস্পতিবারেই সারছি।



বাতিল হয়ে গেল ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি। বহু প্রতিক্ষিত এই হাইভোল্টেজ মামলার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। এদিনের রায়দানে সুপ্রিমকোর্ট জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাঁরা বাদ যাবেন, তাঁদের বেতন দিতে হবে। এছাড়াও বড় রায়ে দেশের শীর্ষ আদালত সাফ জানিয়েছে, যাঁরা অন্যান্য সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে স্কুলের চাকরিতে যোগদান করেছেন, তাঁরা তাঁদের পুরনো চাকরিতে ফিরতে পারেন। কোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে যাঁরা এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা নতুন নিয়োগ পর্বে যোগ্যতার পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বেতন পাবেন।

প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের ২২ এপ্রিল, ২০২৪ সালের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি চলে সুপ্রিম কোর্টে। দেশের শীর্ষ আদালতের তরফে দেওয়া হয় এই বার্তা। কোর্ট বলল, পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। যাঁরা চিহ্নিত অযোগ্য, তাঁদের বেতন ফেরত দিতে হবে। চিহ্নিত হননি যাঁরা, তাঁদের বেতন ফেরত দিতে হবেনা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে পুরো প্যানেলই বাতিল হল কেন? আসলে ঠিক কতজন কারচুপি করে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কপিতে ‘অযোগ্য' হিসেবে তাঁদেরই চিহ্নিত করা হয়েছে, যাঁরা প্রশ্নাতীতভাবে জালিয়াতি করেই চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু চিহ্নিত সংখ্যার বাইরেও অযোগ্য প্রার্থী আছেন। তিনটি ক্যাটেগরির আওতায় অযোগ্য প্রার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথমত, প্যানেলভুক্ত না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ‘র‍্যাঙ্ক জাম্প’ করা হয়েছিল একাধিক প্রার্থীর। তৃতীয়ত, ওএমআর শিটে কারচুপি করা হয়েছিল। যে ওএমআর শিটের ডিজিটাল কপি রাখেনি কমিশন। জানাচ্ছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামীম।

সংরক্ষণের নীতি না মেনে কতজন চাকরি পেয়েছেন, নির্দিষ্ট অনুপাত বজায় না রেখে কতজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে, সেটা জানায়নি কমিশন। এমনকী লিখিতভাবে সিবিআই জানায়, যে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় নম্বরেও হেরফের করা হয়েছিল। কতজন বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছিলেন, তা নিয়ে ঠিকমতো কোনও সংখ্যা পেশ করা হয়নি। সেটা সুর্নিদিষ্ট করতে নেওয়া হয়নি কোনও ব্যবস্থা। কমিশন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং রাজ্য সরকার তিন রকম সংখ্যা পেশ করেছে। যদি সঠিকভাবে বৈধ এবং অবৈধ প্রার্থীদের চিহ্নিত করা হত, তাহলে সাদা ও কালোর মধ্যে পুরোপুরি পৃথকীকরণ করা যেত।

পুরো প্যানেল কেন বাতিল করা হচ্ছে, সেটার ব্যাখ্যা রায়ের কপিতেও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একাধিক মামলার পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে যদি অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা সম্ভব হয়, তাহলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা উচিত নয়। কিন্তু যেখানে বৃহদাকারে কারচুপি হয়েছে এবং পুরো প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা উঠে যায়, সেখানে পুরো প্যানেল বাতিল করা ছাড়া কোনও সুযোগ থাকে না। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এটা এমন একটা মামলা, যেখানে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া কলঙ্কিত। এতটাই দুর্নীতি হয়েছে যে সেটা ঠিক করারও ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছে। বৃহাদাকারে জালিয়াতি এবং কারচুপি করা হয়েছে। তারপর সেটাকে ধামাচাপা দেওয়ার যে চেষ্টা করা হয়েছে, তা শুধরে ফেলার গণ্ডিও পার করে গিয়েছে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।


স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে গেছে বর্তমান সরকারের ওপর। তা ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে রীতিমতো নাম করে ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন তোলেন এই ঘটনায় বিজেপির ভূমিকা নিয়ে। সংশয় প্রকাশ করেন, তাঁর আশঙ্কা - আজকের এই পরিস্থিতি সিপিআই(এম)-এর সঙ্গে মিলে বিজেপিই সৃষ্টি করেছে। ছ্যাবলামো হচ্ছে, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী? বদমায়েশি করবে আপনার লোকজন, আর আপনি আঙুল তুলবেন অন্য দলের ওপর? কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলে পচছেন। আর আপনি বিজেপি, সিপিএম এর দোষ ধরছেন? নেহাত গোটা একটা প্রজন্মকে অশিক্ষিত করে, বেয়াদপ করে, গুন্ডা বানিয়ে নিজে পুষে রেখে দিয়েছেন। তাই হয়ত ভোটবাক্সে এর প্রভাব পড়বেনা। নইলে আপনাকে আর গদি আঁকড়ে পড়ে থাকতে হতনা। সরকারের গদিতে বসে থেকে বদমায়েশি করে, আবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মানবিক মুখ হতে চাইছেন আপনি? লজ্জা থাকলে এবং আগের মত রাজনৈতিক নৈতিকতা থাকলে এখুনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতেন আপনি।

আগামী তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষা নেবেন বললেন। আপনি গ্যারান্টি দিতে পারেন, যে মেয়েটি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেয়েছিল, সেই মেয়েটি পরবর্তীতে বিয়ে করে, সংসার সামলাতে সামলাতে নতুন করে পড়ে আবার চাকরি পেতে পারবে? আমি নিশ্চিত, আপনার দলের টাকাখোররা ফের টাকার খেলায় মাতবে, তবে এবারে আঁটঘাট বেঁধে। যে ছেলেটি সদ্য পড়া শেষ করে সেই সময় চাকরি পেয়েছিল, পরবর্তীতে বিয়ে করে স্বপ্ন দেখেছে লোন নিয়ে একটা বাড়ি করার, সে লোনের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে কিভাবে বাকি লোন শোধ দেবে, তার উপায় বের করতে না পেরে পড়ায় মন বসিয়ে ফের চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে কি না তার গ্যারান্টি কে দেবে? আপনি মানবিক হবার আই ওয়াশ করছেন? আপনার দলের যারা টাকা খেয়ে চাকরি দিয়ে এই গোটা প্যানেলটাকে বরবাদ করে দিল, তাদের ধরে ধরে বেদম মারা উচিত লোকসমক্ষে। মুখ ফাটিয়ে হাত ভেঙে পঙ্গু করে রাখা উচিত। কে করবে? আপনি তো আছেন পরিত্রাতা। যেখানে যত বদমায়েশি করা পাবলিক, সবাই জানে টিএমসি আছে, আমাদের কেউ টিকিটি পাবেনা!

সামনের ওপর দেখা যাচ্ছে, চারদিকে তথ্যের গরমিল। কেউ সঠিক তথ্য মেলাতে পারছেনা। আপনি সেখানে কথা বলেন কিভাবে? মুখ লুকোতে পারলেননা? সকলের সামনে হাত জোড় করে নিজের দোষ কবুল করতে পারলেন না? গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো কি করে? দিনকে দিন যা দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন আপনি, শুরুতে যা সম্মান পেয়েছিলেন, সরকারে আসীন থেকে তা ধূলিস্যাৎ করে ফেলছেন। আপনার বোধগম্যেও আসছেনা। শুধু বিরোধী দলকে খামোকা দুষলেই সাত খুন মাফ হয়ে যায়? নিজের দিকে আঙুল তুলুন। দেখুন কারা এই কান্ড ঘটালো। তাদের পারলে বার করে দিন নিজের ত্রিসীমানা থেকে। তা আপনি পারবেন না। তাই তো চারদিকে এত টাকা ছড়িয়ে রেখেছেন। যাতে কেউ পড়াশুনা না করে দুধের দাঁত পড়লেই টিএমসি পার্টি করতে নিজের নাম লেখায়। চাকরির তো এই হাল! তার চেয়ে পেটে বিদ্যে ঢোকার আগেই পার্টি করলে পয়সা আসবে। সেটাই ভালো।

সোমবার চাকরি বাতিল সামলাতে ময়দানে নামছেন মমতা। আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আসরে নামলেও আসলে যে তাঁর উদ্যোগ বিরোধীদের রাজনৈতিক মোকাবিলা, তা নিয়ে শাসকদল ও প্রশাসনে বিশেষ সংশয় নেই। আরে টিকেই আছেন তো শুধু বিরোধীদের দিকে বন্দুক তাক করে। যে আশা দিয়ে সরকারে এসেছিলেন, তার তো ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। ওই নিজের সাঙ্গপাঙ্গদের বোঝান মানবিকতার বুলি। আমাদের বোঝাতে আসবেন না। নিজেদের মধ্যে নেত্য করুন গে, এতজনের চাকরি শেষ করে। আবার গন্ডায় গন্ডায় অশিক্ষিতরা কিভাবে আরও টাকা দিয়ে চাকরি পায় তার মতলব ফাঁদুন সকলে মিলে। আর হ্যাঁ, এবারে তো আটঘাঁট বেঁধে কাজকর্ম করতে হবে, নইলে আবার সিবিআই জুজু! তাই এবারে টাকার অ্যামাউন্টটা বাড়িয়ে দিতে বলুন আপনার চ্যালাদের।

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page