স্বর্ণালী গোস্বামী
এই মুহূর্তে বাঙালি মজে আছে কিন্তু অলিম্পিক গেমসে। এ বারই প্রথম অলিম্পিক্সে ইন্ডিয়া হাউস গড়ে তোলা হয়েছে।
এই মুহূর্তে বাজার দর চড়চড় করে বাড়লেও বাঙালি মজে আছে কিন্তু অলিম্পিক গেমসে। প্রবল বৃষ্টির কারনে ধস নেমে ওয়েনাড়ে যদিও পরিস্থিতি খুব খারাপ। হিমাচল প্রদেশেও যথেষ্ট দুর্যোগ চলছে বর্ষার কারনে। পাশাপাশি আচমকাই মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে কেদারনাথে ধস নামে বুধবার। আটকে পড়েন পুণ্যার্থীরা। সোনপ্রয়াগ ও গৌরীকুণ্ডের কাছে কেদারনাথ হাইওয়েও ভেসে গিয়েছে।
কিন্তু তবু অলিম্পিক আমাদের মন কেড়ে নিয়েছে। আশা জাগিয়েছে ভারতীয় হকি দল। প্রায় ৫২ বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে তারা। সিন্ধু মন ভেঙে দিলেও লক্ষ্য সেন প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠে আশা জাগাচ্ছেন পুরুষদের ব্যাডমিন্টন বিভাগে। ইতিমধ্যেই পদক জিতেছেন আনকোরা স্বপ্নিল কুসালে। তবে সবচেয়ে আন্দোলিত করেছেন যিনি, তিনি হলেন মনু ভাকের।
মনু দুটি ব্রোঞ্জ ইতিমধ্যেই পকেটস্থ করেছেন। একটি নিজে খেলে, অপরটি সরবজ্যোৎ সিংয়ের সঙ্গে মিক্সড ডাবলস এ পদক জিতেছেন তিনি। প্যারিস অলিম্পিক্সে মনু ভাকেরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল সম্ভবত মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের ব্রোঞ্জ জয়। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে স্বপ্নভঙ্গের পরে মনুর কাছে প্রথম ইভেন্টটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথম ইভেন্টেই পদক পেয়ে যাওয়ায় মনুর মধ্যে আলাদাই আত্মবিশ্বাস চলে এসেছিল। যদিও সকলের মনে প্রবল উচ্চাশা জাগিয়ে হ্যাটট্রিক করার লক্ষ্যে এগিয়েছিলেন মনু, কিন্তু অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছে তাঁর। চতুর্থ স্থানে শেষ করেছেন তিনি ২৫ মিটার পিস্তলের ইভেন্টটি। তবু একই অলিম্পিকসে দুটি পদক তো জিতলেন তিনি, তাই বা মন্দ কী? তাঁর হাত ধরেই এল প্যারিস অলিম্পিক্সে শুটিং-এর প্রথম পদক।
এর আগে টোকিও অলিম্পিক্সে আশা জাগিয়েও পিস্তলের যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য তেমন কিছু করতে পারেননি মনু। হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। মতানৈক্য হয়েছিল কোচের সঙ্গেও। কিন্তু খারাপ সময় কাটিয়ে উঠে নতুন করে শুরু করেছিলেন তিনি। স্থির করেছিলেন প্যারিস অলিম্পিকে পদক জিততেই হবে। সেটা করেও দেখালেন। তৃতীয় পদক না পাওয়া সত্ত্বেও অবশ্য প্যারিসে অলিম্পিক্সে মনু‘স্মৃতি’ লিখে দিয়ে গেলেন তিনি। টোকিয়োয় হৃদয়ভঙ্গের পরে প্রায় চার সপ্তাহ নিজের পিস্তলের দিকে ফিরেও তাকাননি। কেরলে ছুটি কাটানোর সময় পরিবারের সবাই এলাকা ঘুরতে বেরোলেও একা রিসর্টে ছিলেন তিনি। রিসর্টের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা একটি কেটলি দেখে শ্যুটিংয়ের প্রতি নিজের ভালোবাসা খুঁজে পান মনু। তাতে ভরতি ছিল জল। তিনি বলেছিলেন যে সেটাকে শ্যুটাররা ‘হোল্ডিং প্র্যাকটিস’ বলে থাকেন। হাত যাতে স্থির থাকে এবং হাতের যাতে শক্তি বজায় থাকে, সেজন্য ওরকম প্র্যাকটিস করা হয়। আর সেটা দেখেই তিনি অনুভব করেছিলেন যে তাঁকে ফের শ্যুটিং রেঞ্জে ফিরতে হবে।
এদিকে হরিয়ানার বছর বাইশের সুন্দরীর এখন মারকাটারি চাহিদা। বাজারে এখন শুধুই মনু ম্যানিয়া। এনডোর্সমেন্টের জন্য় ব্র্যান্ডগুলি চাইছে মনুকে প্রচারের মুখ করতে। মনুও স্বাভাবিকভাবেই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেন। আগে লাখ টাকায় যে কাজ করতেন মনু, তার জন্য় এখন নেবেন কোটি টাকারও বেশি। অলিম্পিক্সে জোড়া পদক জেতার পর মনুর ব্র্য়ান্ড ভ্য়ালু বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় গুণ, জানালেন মনুর ব্র্য়ান্ড ম্য়ানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা আইওএস স্পোর্টস অ্য়ান্ড এন্টারটেন্টমেন্ট সংস্থার ম্য়ানেজিং ডিরেক্টর নীরব তোমার।
কৃষক পরিবারের সন্তান সরবজ্যোত সিং ১০ মিটার পিস্তল মিক্সড ইভেন্টে মনু ভাকেরের সঙ্গে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। ২০১৯ থেকে জাতীয় স্তরে সরবজ্যোত এবং মনু টিম ইভেন্টে একসঙ্গে খেলেছেন, প্রচুর সোনাও জিতেছেন। শুধু তাই নয়, জুনিয়র বিশ্বকাপ এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জুটিতে সোনা জিতেছেন তাঁরা। একসঙ্গে খেলার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের। অন্যদিকে স্বপ্নিল কুসালের এই অলিম্পিক প্রথম অলিম্পিক। প্রথমবারেই পদক জয়। ক্রিকেটের মহেন্দ্র সিং ধোনির অনুগামী তিনি নিজেও যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার ছেলে। ধোনির মতই তিনিও ভারতীয় রেলে চাকরি করেন। এমন কি রেলের টিকিট কালেক্টর তিনি, ধোনি ঠিক শুরুতে যেমন ছিলেন। বহুদিন ধরে প্রমোশনের অনুরোধ করা সত্ত্বেও রেল স্বপ্নিলের কথায় কর্ণপাত করেনি। কিন্তু অলিম্পিকসে পদক জয়ের পর পরই স্বপ্নিলকে রেল ডাবল প্রমোশন দিয়ে দিয়েছে।
যেতে যেতে আরও একটা বিষয়ের উল্লেখ করতে হবে এই অলিম্পিকসে। রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন এবং ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এ বারই প্রথম অলিম্পিক্সে ইন্ডিয়া হাউস গড়ে তোলা হয়েছে। ভারতের আবহ তৈরির জন্য বেশ কিছু বিষয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে ইন্ডিয়া হাউসে। সেখানে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ভাস্কর্য তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে যোগা সেশন, বলিউডের গানের সঙ্গে নাচ এবং কর্মশালা আয়োজন করা হচ্ছে সেখানে। ইন্ডিয়া হাউসে বিরিয়ানি, মাটন কারি, দইভাত-সহ অনেক রকম ভারতীয় খাবার রয়েছে। বাড়ি থেকে বহু দূরে থেকেও এখানে ঘরের স্বাদ পাচ্ছেন খেলোয়াড়রা। বিশ্ব ক্রীড়ার মানচিত্রে দেশ এবং ভবিষ্যতে দেশের মাটিতে অলিম্পিক আয়োজনের আকাঙ্ক্ষা নিয়েই ইন্ডিয়া হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে।