top of page

উল্লাস করার দিন এখন, সরকারে আসীন বিধায়ক- মন্ত্রীদের উল্লাসের সময়!

স্বর্ণালী গোস্বামী

14 Jul 2024

আপনাদের মনের ওপর কোনও প্রভাব পড়েনা? পড়েনা। অবশ্যই পড়েনা। জাস্ট ইগনোর করার মত একটা ব্যাপার। বা বড়জোর মজা লোটা যায়

গতকালই প্রকাশিত হল উপনির্বাচনের ফলাফল। যদিও রাজ্যের ফলাফল কি হবে তা আঁচ করা গিয়েছিল আগে থেকেই, তবে দেশে কিন্তু ইন্ডিয়া জোট বেশ ভালো ফল করেছে তা স্বীকার করতেই হবে এবং এটাও স্বীকার করতে হবে, বিজেপির একচ্ছত্র আধিপত্য আস্তে আস্তে টলোমলো হতে শুরু করেছে।

তবে শুধুই রাজনীতি নিয়ে আজ আলোচনা করব না। বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যে হাড়হিম করা ঘটনা ঘটছে। তাই নিয়ে কিছু বলা হয়নি, তাই সেই বিষয়েই আজ একটু কথা বলব। আমরা অনেকেই ছোটবেলায় বড়দের ভয় দেখাতে দেখতাম। এটা করে নাও বা খেয়ে নাও, দুষ্টুমি করোনা ইত্যাদি ইত্যাদি, নইলে পুলিশ আসবে, তোমায় ধরে নিয়ে যাবে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আদৌ কি বাচ্চারাও আর পুলিশকে ভয় পাবে? রাজ্যে পুলিশের ভূমিকা কী? নিত্যদিন লোকজন ধরে ধরে যাকে পাচ্ছে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলছে, পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারছেনা! ধরে- পাকড় হচ্ছে, কিন্তু তার স্থায়িত্ব কতটুকু? নইলে জয়ন্ত সিং- এর মত গুন্ডা তিন তিন বার পুলিশ কাস্টডিতে ঢুকেও ছাড়া পায় এবং ফের সমাজে ত্রাস হয়ে ফিরে আসে কিভাবে?

আমি ইসলামপুরের মেয়ে। বাবার চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলেও বড় হয়েছি ওই শহরেই, সেখান থেকেই বাবা রিটায়ারমেন্ট নিয়েছে। চোপড়ায় আমরা তেমন যেতাম না। ওখানে প্রথম থেকেই অসামাজিক কাজকর্ম হত বলে তেমনভাবে কোনও দিন যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যে ঘটনা ঘটল কিছুদিন আগে, সকলের সামনে নির্যাতন করা হল যুবক- যুবতীকে পিটিয়ে মেরে, এমনটাও ভয়াবহতা কোনওদিন শুনিনি। আমাদের এলাকা শান্ত ছিল বরাবরই, যতদিন ওখানে ছিলাম। কিন্তু এ কি হচ্ছে, দিনদিন? গতকাল উপনির্বাচনের রেজাল্ট বেরোনোর পর একটি দোকানে এক তৃণমূল নেতাকে সরাসরি গুলি করা হল! শ্রীকৃষ্ণপুরে গিয়েছিলাম একবার, ঘুরতে। গ্রাম্য পরিবেশ, খুব ভালো লেগেছিল। পান বরজে ঘুরেছিলাম আমরা বেশ কিছুক্ষন। সেখানে এসব কী হচ্ছে? কী ভূমিকা পুলিশের? কি'করে এত সাহস পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা?

আমাদের এদিকে আড়িয়াদহ এখন খবরের শিরোনামে। মা- ও ছেলেকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা! সামান্য কথা কাটাকাটির এই পরিণতি? কেন হবে? ২০২১ সালের দু'টো ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কী পাশবিক অত্যাচার!!! কিভাবে করে মানুষ? কেন করে? এরা মানসিক বিকারগ্রস্ত নয়? না নয়। এরা গুন্ডা। পার্টির (সে যে কোনও পার্টির হতে পারে, হলফ করে বলতে পারি। আজ এই রাজ্যে তৃণমূল বলে তৃণমূলের পোষা গুন্ডা। কেন উত্তরপ্রদেশে দেখিনি আমরা? সেখানে সরকারে কারা ছিল? বিজেপি নয়?) তাঁবেদারি করা গুন্ডা। সমাজে ত্রাস তৈরি করে রাখাই যাদের কাজ। কেন হবে? পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কেস করেছে। সেই ভিডিও দু'টো এতদিন পর প্রকাশ্যে এল কেন? সেই সময় কেন কেউ প্রকাশ করেনি? পুলিশের দায় নেই, সেই তথ্য বাইরে আনার? নেই। কারন যে পুলিশ সত্য উন্মোচন করতে যাবে, তার ঘাড়ের ওপর খাঁড়া ঝুলবে। কে চায় বলুন তো, পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে ভূতে কিলোতে? এমনিতেই তাদের অশান্তির চাকরি।

কিন্তু এমনটাতো হওয়ার কথা ছিলনা? আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল তাদের হাতে ন্যস্ত। কী হল? কেন হল? তিল তিল করে একটা ক্ষেত্র যার মাধ্যমে সমাজ নিরাপত্তা বেষ্টিত হয়ে থাকার কথা, সেই ক্ষেত্রটিই মেরুদন্ডহীন হয়ে গেল!

হঠাৎ করে রাজ্য সরকার হকার উচ্ছেদে নেমে পড়লেন। কেন? হঠাৎ কেন? এমন নির্দয়ভাবেই বা কেন? চোখের সামনে যেতে- আসতে দেখা দোকানগুলো ভেঙে- চুরে শেষ করে দিল। কই সব জায়গায় তো এমন গা- জোয়ারি চলছেনা? কেন? কিছু কিছু এলাকার দোকানদারেরা আলাদা করে কী দোষ করল? পরে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। সময় দেওয়া হবে। আগে তা ভাবা হয়নি কেন? ৩০/ ৪০ বছরের পুরোনো দোকান হঠাৎ করে ভাঙা পড়বে কেন? এটা তো সেই ২০১১ সালেই করা উচিত ছিল। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই সরকারি জমিতে দোকান করা উচিত নয়। তাই যদি তৃণমূল সরকারের নীতি হবে, তাহলে এতদিন পর লোকসভা নির্বাচনের ঘোর কাটতে না কাটতেই এই আচরণ কেন? উত্তরপ্রদেশের বুলডোজার রাজ নিন্দনীয় হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে হলে ধোওয়া তুলসীপাতা? উত্তর দেবার দায় কার? এই দল ওই দলের ঘাড়ে দোষ চাপায়, ওই দল এই দলের ঘাড়ে। দিন চলছে এই ভাবেই। মুদ্রার এ পিঠ আর ওপিঠ।

আমাদের সাধারণ মানুষের তো সমানে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্নভাবে। উত্তর দেবার দায় কার? কাজ করার দায় কার? যে দল সরকারে থাকবে, তাদের নয়? কেন শুধু শুধু মিডিয়াকে দোষারোপ করা হবে, সত্য সামনে আসলে? মিডিয়া তো বানিয়ে কিছু করছে না? হয়তো কিছু মিডিয়া একটু বাড়িয়ে বলে, কিন্তু তাই বলে ঘটনাটা তো মিথ্যে হয়ে যাবেনা? সরকারের পদে আসীন মন্ত্রীদের গলা শুকিয়ে আসেনা? ভিডিও দু'টো তো চোখে দেখা যায়না। একটা বাচ্চা ছেলে এবং একজন মহিলার ওপর কী পাশবিক অত্যাচার! আপনাদের মনের ওপর কোনও প্রভাব পড়েনা? পড়েনা। অবশ্যই পড়েনা। জাস্ট ইগনোর করার মত একটা ব্যাপার। বা বড়জোর মজা লোটা যায়। যতবার বাড়ি পড়ছে, ততবার হাততালি দিলে উল্লাস করা যায়। সাঁড়াশি টা ধরে টান মারলে উল্লাসে হাসির ফোয়ারা বইয়ে দেওয়া যায়। তারপর ক্লাবের ছেলেগুলোকে বীরত্বের জন্য সাবাসী দেওয়া যায়। বছর বছর আরও ক্লাবের অনুদান বাড়িয়ে দেওয়া যায়। আর হকারদের দোকানগুলো ঠিকঠাক ভাঙার জন্য পুলিশদের বাহবা দেওয়া যায়। তাই না?

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page