top of page

আমরা পেরিয়ে এলাম ৭৬ টা বছর, শুদ্ধিকরণের জন্য প্রয়োজন আরও বহু পথ চলা

স্বর্ণালী গোস্বামী

26 Jan 2025

ফিরহাদ হাকিমের এতটুকু গলা কাঁপল না, এই মন্তব্য করার সময়?

লেখাটা শুরু করার আগে একবার আজকের খবরে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম, বিভিন্ন খবরের পোর্টালগুলিতে। আজ সাধারণতন্ত্র দিবস বা গণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস। মানে কি? মূলত আজকের দিনেই আমাদের সংবিধান প্রণেতারা সংবিধান প্রতিষ্ঠা করে আমাদের দেশকে গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে মেলে ধরেছিলেন। তার প্রথম শর্ত হল দেশের প্রতিটি নাগরিকের কিছু অধিকার ও কর্তব্য পালনের মধ্যে দিয়ে দেশ এগোবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সাধারণ মানুষের ভোটের মাধ্যমে জিতে আসা দলীয় রাজনীতিবিদেরা, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের পরিষেবা দেবেন। আজকে, ৭৬ বছর পার করে এই মূল উদ্দেশ্য কী আদৌ পালিত হচ্ছে?

যে খবরটিতে চোখ আটকে গেল, তা হল- "আরজি করের নির্যাতিতা পরিবারের দয়ায় বা নির্যাতিতার বাবার দয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়" মন্তব্য করেছেন শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিম! আমাদের রাজ্যের এই মুহূর্তের জ্বলন্ত বিষয় আরজি করে নিহত চিকিৎসকের বিচার প্রক্রিয়ার প্রহসন। তায় মেয়রের এই মন্তব্য। কি মনে হয়? আমরা সাধারণতন্ত্র দিবসে নিজেদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারছি? নাকি দেশের বা রাজ্যের চালিকাশক্তি যেই সরকার, তারা নাগরিকদের মতামতের গুরুত্ব দিচ্ছেন? কোনওটাই নয়। যেমন আরজি করে ওই চিকিৎসক নিজের হাসপাতালে নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর অধিকার পেলেন না, তেমনই যারা তার মৃত্যু নিয়ে অনবরত নোংরা রাজনীতি করে গেল, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করলেন না। পাশাপাশি মেয়রের এই মন্তব্য গণতন্ত্রের উদযাপনের দিনে হাস্যকরভাবে বুমেরাং হয়ে যায় যখন তিনি বলেন, সেই পরিবারের দয়ায় মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারে বসেননি! মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার তো সাধারনের হাতেই রয়েছে মিস্টার মেয়র সাহেব! আপনি তা জানেন না?

মেয়র কী ওই নির্যাতিতার পরিবারকে রাজ্যের নাগরিকদের থেকে আলাদা করে দেখতে চাইছেন? যদি সেই পরিবার মুখ্যমন্ত্রীকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে নাও নিয়ে আসে, তাহলে কী মুখ্যমন্ত্রীর সেই পরিবারকে পরিষেবা দেওয়া বা সেই পরিবারের কথা শোনার দায় বর্তায় না? কোনও মানুষের কী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা দেশের প্রধামন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ার অধিকার থাকতে নেই কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে? কী বলেন মিস্টার মেয়র সাহেব? নাকি শুধু পুলিশ ও প্রশাসনকে ভয় দেখিয়ে এবং গুন্ডাগিরি করে রাজনৈতিক দল প্রতিবার ভোটে জিতে আসবে- এটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আসল নিয়ম?

ফিরহাদ হাকিমের এতটুকু গলা কাঁপল না, এই মন্তব্য করার সময়? তারপর হয়তো পেছন পেছন আসবে কুনাল ঘোষের এই মন্তব্যের সপক্ষে অকাট্য যুক্তি। মানে কিছুই বলা হয়তো সাজেনা বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে।

বসেছিলাম একটু পদ্ম সম্মান নিয়ে কিছু কথা লিখব। আসলে তেতো কথার দাঁড়িপাল্লাটাই আজকাল বেশি ওজন নিয়ে নিচ্ছে। সামান্য দু-একটা ভালো কিছু ভাবতে চাইলেও এমন কিছু ঘটনা বা উদাহরণ সামনে চলে আসছে যে তাই নিয়েই আলোচনা করা উচিত বলে মনে হচ্ছে। কিছুতেই কিছু পাল্টাচ্ছে না। কিছুতেই রাজনীতিবিদেরা, তথা দুষ্কর্ম করে বেড়ানো মানুষেরা সততার ধার মাড়াচ্ছেন না। কেউ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন। চান না। তাঁর বাক- স্বাধীনতা রয়েছে, তিনি বলতেই পারেন। তাঁর মনে হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, তিনি বলেছেন। তার উত্তরে এমন মন্তব্য করতে হবে, শহরের মেয়রকে? একজন বরিষ্ঠ নেতাকে? গণতান্ত্রিক দিবসের দিনে? নিজের কাছে নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন, এই সব মানুষেরা? ধিক্কার এই সমস্ত রাজনীতিবিদদের।

একের পর এক আরজি করে চিকিৎসকদের ঘাড়ে বন্দুক রাখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ঘাসে মুখ দিয়ে চলে? রাজ্যের শাসক দল ভাবছে, দ্যাখ কেমন লাগে! সাধারণ মানুষ ফুৎকারে উড়িয়ে ভাবছে, এই তো, আসল চেহারা বেরিয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাধারণ মানুষদের অধিকারের দাবি মেনে চলা সরকার? কী মনে হয়? সাধারণ মানুষ বোকা? আন্দোলন করলে আন্দোলনের মুখ যারা তাদের ওপর কোপ ফেলে রাজ্যের শাসক দল নিজের হাঁটু চাপড়াচ্ছেন? শিক্ষিত মানুষ সব বোঝে। সেই জন্যই তো রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা চারদিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা চলছে! সঠিক শিক্ষার স্বাদ পেয়ে গেলেই আবার একটা আরজি করের মত আন্দোলন হতে একটুও সময় লাগবেনা। সেটা সরকারে আসীন লোকজন বিলক্ষণ বোঝেন।

সাধারণ মানুষকে তাদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে দিন। আর সচেতন থাকুন প্রত্যেকে যেন নিজেদের কর্তব্য পালন থেকে বিরত না হয়। কর্তব্য পালন মানে কখনোই মুখ বুজে সমস্ত অন্যায় অন্যায্য বিষয়কে সাপোর্ট করা নয়। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের তাঁবেদার হওয়া নয়। দেশের, রাজ্যের, সমাজের, পরিবারের মানুষের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে জেনেও চুপ করে থেকে মাথা গুঁজে দিন গুজরান করা নয়। কর্তব্য মানে নিজের কাজ করার পাশাপাশি অন্যায়ের প্রতিবাদ করাও। প্রতিবাদ না করলে সঠিক কর্তব্য পালন করা হয়না। কাজেই কর্তব্য এবং অধিকার একে অপরের পরিপূরক, এমনটা মেনে চলতে হবে। ক'জন জানে এসব? ক'জন মানে এসব আজকের দিনে? তাই ৭৬ বছর পেরিয়ে এখনও আমাদের লড়াই করে যেতে হচ্ছে সাধারণতন্ত্রের সংজ্ঞার সঠিক মূল্যায়ন করতে। আশা করব, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধীরে ধীরে এই পচে- গলে যাওয়া সমাজের নতুন সূর্যোদয় ঘটাতে পারবে। এই আশা নিয়েই ৭৬ তম সাধারণতন্ত্র দিবসের লেখা শেষ করলাম।

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page