৬টি সংগঠনের পক্ষ থেকে "অঘোষিত জরুরি অবস্থার অবসান হোক" - শীর্ষক অবস্থান ও সভা
কলকাতা, ২৭ জুন: ২৬জুন ২০২৩, গড়িয়া মোড়ে মোট ৬টি সংগঠন যথা- ALL INDIA LAWYERS ASSOCIATION FOR JUSTICE (AILAJ), WE THE PEOPLE OF INDIA, PUCL, পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ, গণফ্রন্ট এবং অরিজিৎ মিত্র স্মারক কমিটি -র পক্ষ থেকে "অঘোষিত জরুরি অবস্থার অবসান হোক" - শীর্ষক অবস্থান ও সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আমরা জানি ১৯৭৫ এর ২৫জুৃনের মধ্য রাত্রে ভারতবর্ষের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। যা আজও ভারতবাসী কালা দিবস হিসাবেই স্মরণ করে আসছেন।
বর্তমানে ঘোষিত জরুরি অবস্থা চালু না থাকলেও দেশের শ্রমিক, কৃষক তথা সমগ্র দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করার জন্য একদিকে যেমন নিত্য নতুন আইন প্রনয়ণ করা হচ্ছে অপরদিকে ন্যায় বিচার ও গণতন্ত্রের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের উপর নামিয়ে আনা হচ্ছে এক ভয়ঙ্কর আক্রমণ। প্রতিবাদীদের বিনা বিচারে বন্দী করে রাখা হচ্ছে বছরের পর বছর।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য যখন আকাশছোঁয়া, মানুষ যখন অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তখন ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নতুন সংসদভবন নির্মাণ করা হল। যা আমাদেরই, সরকারকে প্রদেয় রক্ত জল করা করের টাকায় গঠিত তা বলাই যায়। এটাও লক্ষ্য করা গেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন না দেশের দলিত রাষ্ট্রপতি। সাধু সন্ন্যাসীদের নিয়ে যজ্ঞ করে রাজদণ্ড হাতে উদ্বোধন করা হল নতুন সংসদ ভবন। এর মধ্য দিয়ে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ, প্রজাতান্ত্রিক মৌলিক বিষয়গুলিকে ক্ষুন্ন করা হল।
একই দিনে দেশকে পৃথিবীর বুকে যে সকল কুস্তিগিররা গৌরবান্বিত করেছিলেন তাঁদের উপর নামিয়ে আনা হল নির্মম বর্বরোচিত আক্রমণ এবং তাঁদেরকে বেআইনিভাবে গ্রেফতারও করা হল। অপরদিকে মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থার অভিযোগে অভিযুক্ত কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভুষনকে নিয়ে দেশের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করা হল। ব্রিজ ভুষনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করা হল না। যা দেশের নারী সমাজের প্রতি এক চরম অবমাননাকর নিদর্শন হিসাবে প্রতিপন্ন হল। বিভিন্ন রাজ্যে দলিত, সংখ্যালঘুদের উপর চলছে অবর্ণনীয় অত্যাচার।
ইতিমধ্যে এক ভয়াবহ রেল দূর্ঘটনায় শত শত মানুষ মারা গেলেন। যার জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারিকরণের নীতি (দেশের রেল, তেল, ব্যাঙ্ক, বীমা, জল, জঙ্গল, জমি আজ সবই বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে)। এই নীতির কারণেই রেলের রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি এবং একের পর এক দূর্ঘটনা বেড়ে চলেছে এবং বেড়ে চলেছে সাধারণ মানুষের মৃত্যু মিছিল।
সাম্প্রতিককালে যথেষ্ট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মণিপুরের হিংসা। মণিপুরে জনজাতিদের মধ্যে দাঙ্গা বাধিয়ে শাসক দল ফায়দা লোটার চেষ্টা চালাচ্ছে। শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এবং গৃহহারা হচ্ছেন। দেশজুড়ে সাম্প্রদায়গত, জাতিগত দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্র চলছে। ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত হরণ করা হচ্ছে।
এমন বহু বহু নিদর্শন রয়েছে যা সবটা তুলে ধরা সম্ভবপর নয়। এই সমস্ত বিষয়কেই আমরা অঘোষিত জরুরি অবস্থা বলছি, কেননা এইভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ভারতের সাধারণ মানুষ কোন অতলে তলিয়ে যাবে তা ভাবলেই শিহরিত হতে হয়। তাই এই সভায় আহ্বান জানানো হয়েছে - অঘোষিত জরুরি অবস্থার অবসানে দেশপ্রেমিক,গণতান্ত্রিক মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এই সভায় বক্তব্য রাখেন --
১) ডাঃ শামসুল আলম
২) তপন দাস ( প্রাক্তন বিচারক)
৩) অভিজিৎ দত্ত (আইনজীবী)
৪) দিবাকর ভট্টাচার্য্য ( আইনজীবী)
৫) মৃদুল বোস ( যাদবপুর ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন অধ্যাপক)
৬) অমলেন্দু ভূষণ চৌধুরী - বিশিষ্ট সমাজকর্মী
৭) অসিত বরন রায় (সমাজকর্মী)
৮) অম্লান ভট্টাচার্য ( মানবাধিকার কর্মী)
৯) ডাঃ বর্ণালীরায় ( লেখিকা)
১০) প্রদ্যোত নাথ ( সমাজকর্মী)
১১) প্রবীর পাল (সমাজকর্মী)
এছাড়াও সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন নীতীশ রায়, মীরা চতুর্বেদী।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন --
ডাঃ অভিজিৎ সাহা,সাংবাদিক হাফিজুর রহমান,আইনজীবী অমিতাভ ঘোষ, সোমনাথ গুহ, গৌতম দাস, নিত্যানন্দ ঘোষ, শীলা দে সরকার, অনুপ চ্যাটার্জী, স্বপন রায় চৌধুরী, তরুন সরকার, অশোক সেনগুপ্ত, দিলীপ ঘোষ, তীর্থঙ্কর মিত্র, অবসরপ্রাপ্ত পরিবহনকর্মী শিবশঙ্কর দে, বাবুন চ্যাটার্জী, কবি প্রদীপ নন্দী প্রমুখ।
Edited By
Swarnali Goswami
Comments