সরকারিভাবে বাংলাদেশে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ২৫, বেসরকারিভাবে বলা হচ্ছে ৫০- এরও বেশি
১৯ জুলাই, ২০২৪: বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন আরও ১৮ জন ৷ সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ২৫ ছুঁয়েছে ৷ বেসরকারি সূত্রে দাবি, প্রায় ৫০ জনেরও বেশি এখনও প্রাণ হারিয়েছে সরকারের দমন নীতির জেরে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা খারিজ করে দেন আন্দোলনকারী ছাত্র-যুবরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এ বৃহস্পতিবার দিনভর সংঘর্ষের জেরে হতাহত হয়েছেন অনেকেই। সেই সঙ্গেই বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং ভবনেও ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মঞ্চের অন্যতম নেতা আসিফ মাহমুদের মন্তব্য, ‘‘গুলির মুখে কোনও সংলাপ হয় না। এই রক্তের সঙ্গে বেইমানি করার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।’’ সহ-সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ সালেহিন অয়নের হুঁশিয়ারি—‘‘রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে কখনও কাউকে আলোচনায় বসতে দেব না।’’
হাসিনা সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি বৈঠকে জানান, ‘‘আমরাও বর্তমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে নীতিগত ভাবে সহমত। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে বসব। তাঁরা যখনই বসতে চাইবেন, তা যদি আজ হয়, তা হলে আজই বসতে রাজি আছি আমরা।’’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টিভির অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অগ্নি সংযোগ করা হয় ঢাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সেতু ভবনেও। বাংলাদেশ জুড়ে বিভিন্ন থানা এবং পুলিশের গাড়িতেও ভাঙচুর করা এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই থমথমে পরিবেশ ঢাকা সহ বাংলাদেশ জুড়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাংলাদেশ জুড়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এরই মাঝে বাংলদেশে আটকে পড়া ভারতীয়রা দেশে ফিরছেন। ভারতের বহু পড়ুয়া বাংলাদেশে আটকে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার একটি নির্দেশিকা জারি করে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন। সতর্কবার্তায় বলা হয়, ভারতীয় সম্প্রদায় ও বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয় ছাত্রদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাঘুরি না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।' এদিকে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়দের কোনও জরুরি সহায়তার প্রয়োজন হলে হাইকমিশন এবং সহকারী হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
দেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে আতঙ্কে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি পড়ুয়ারা ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘রক্তপাত বন্ধে’র কাতর আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা ৷ তারমধ্যেই বেশ কিছু জায়গায় বন্ধ ইন্টারনেট সংযোগ ৷ ফলে অনেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারছেন না। রীতিমতো আতঙ্ক গ্রাস করেছে সে দেশের পড়ুয়াদের।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ লক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য প্রায় ৩ হাজার সরকারি চাকরি খোলা হয়। সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ বর্তমান কোটা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত। সর্বাধিক ৩০ শতাংশ ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য, ১০ শতাংশ অনগ্রসর প্রশাসনিক জেলাগুলির জন্য, ১০ শতাংশ মহিলাদের জন্য, ৫ শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য এবং ১ শতাংশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত । আন্দোলনকারীদের দাবি, এই সংরক্ষণের ফলে মেধা ছাত্রছাত্রীরা চাকরিতে যথেষ্ঠ সুযোগ পান না। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা পথে নামে। ধীরে ধীরে আন্দোলন বৃহত্তর আকার ধারণ করে। ঢাকা-সহ রংপুর, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। পরিস্থিতি সামাল দিতে আধা-সামরিক বর্ডার গার্ড নামিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।
Comments