রাজ্য বাজেট পেশ, লোকসভা ভোটের আগে কল্পতরু রাজ্য সরকার
কলকাতা, ৮ ফেব্রুয়ারি: আজ বৃহস্পতিবার বাজেট পেশ হল রাজ্যে। রাজ্য বাজেট পেশ করলেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকার বাজেটে একাধিক চমক রেখেছে স্বাভাবিকভাবেই। তার মধ্য়ে অবশ্য়ই বলতে হবে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের বরাদ্দ বৃদ্ধি ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ-র ৪ শতাংশ বৃদ্ধি। এবারের বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য একাধিক ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি নতুন ভোটার থেকে মৎস্যজীবী বা শ্রমিক শ্রেণির কথাও ভাবা হয়েছে, আলু চাষিদের জন্যও ঘোষণা করা হয়েছে নতুন প্রকল্পের।
বলা যায় সমাজের সব স্তরের হাতেই কিছু বেশি অর্থের সমাগম হবে এই বাজেটে, এমনই পরিকল্পনা করে বাজেট পেশ করা হয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডার বৃদ্ধি পেয়ে হচ্ছে এক হাজার টাকা। এর পাশাপাশি তফসিলি জাতি ও জনজাতির মহিলাদের মাসে পাওনা এক হাজার থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। ছাড় দেওয়া হয়েছে পরিবারের মধ্যে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের স্ট্যাম্প ডিউটিতে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য বাজেটে নতুন করে আরও ৪ শতাংশ ডিএ-র ঘোষণা করা হয়েছে। যা কার্যকর হবে আগামী মে মাস থেকে। চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ 'সি' এবং গ্রুপ 'ডি' কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করা হল বাজেটে। সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ, গ্রিন পুলিশের মাসিক পারিশ্রমিক ১,০০০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনার মৎস্যজীবীদের বছরের দু'মাস এপ্রিল থেকে জুনের মাঝামাঝি সময়ে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের মাসিক ৫,০০০ টাকা প্রদান করা হবে। পড়ুয়াদের আগে দ্বাদশ শ্রেণীতে যা সাহায্য করা হত, তা এগিয়ে একাদশ শ্রেণিতেই ১০,০০০ টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার পাশাপাশি তারা স্মার্ট ফোনও পাবে। নতুন কৰ্মশ্রী প্রকল্পে জব কার্ড থাকলে বাংলার শ্রমিকেরা বছরে ৫০ দিন কাজের সুযোগ পাবেন রাজ্য সরকারের তরফে। মিড ডে মিলের রাঁধুনিদের মাসিক ভাতা বেড়ে ১৫০০ টাকা হল। যে পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যের 'শ্রমিক পোর্টাল'-এ নথিভুক্ত আছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গেমসে যাঁরা পদক পেয়েছেন, তাঁদের এবার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী পুলিশি প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য সরকারি দফতরে চাকরির সুযোগ থাকছে। শিক্ষানবীশদের মাসিক ভাতাও বাড়ানো হচ্ছে।
চারটি (সাঁওতালডিহি, বক্রেশ্বর ও দুর্গাপুর) অত্যাধুনিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বা সুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল পাওয়ার ইউনিট তৈরি করা হবে, যা পিপিপি মডেলে তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুড়িগঙ্গার নদীর উপর আট নম্বর লট থেকে সাগরদ্বীপের কচুবেড়িয়ার মধ্যে ৩.১ কিলোমিটারের 'গঙ্গাসাগর সেতু' তৈরি করা হবে। বাইপাসের মেট্রোপলিটন থেকে মহিষবাথান পর্যন্ত চার লেনের সাত কিমি দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্যসড়কে ৬৪০ মিটারের চার লেনের সেতু তৈরি করা হবে। মোটর ভেহিকেল অ্যাক্টসের আওতায় নথিভুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে 'লাইফটাইম ট্যাক্স'-র কর কমানো হচ্ছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের শুধুমাত্র বকেয়া কর আদায় করা হবে (পুরনো বিতর্কিত লাক্সারি ট্যাক্স)। জরিমানা ও সুদের ক্ষেত্রে ছাড় দেবে রাজ্য।
বাজেটের প্রশংসা করে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় বললেন, 'আমরা স্বনির্ভর বাংলার পথ তৈরি করছি'। তাঁর মতে, 'বাংলার সিঙ্গল ইঞ্জিন সরকার ডবল ইঞ্জিন সরকারের থেকে অনেক শক্তিশালী'। এদিকে বাজেট শেষে বিধানসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বেরোনোর সময় 'চোর চোর' স্লোগান দিলেন শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়ক। পাল্টা 'মুখ্যমন্ত্রী জিন্দাবাদ' স্লোগান দিতে দেখা গেল তৃণমূল সমর্থিত বিধানসভার কর্মী ইউনিয়নের সদস্যদেরও।
Comentarios