রাজস্থানে ৪,৫০০ বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, ভারতবর্ষের ইতিহাসে যোগ করতে পারে অন্যমাত্রা
- The Conveyor
- Jun 28
- 2 min read

২৮ জুন,২০২৫: রাজস্থানের দীগ জেলার বাহাজ গ্রামে ৪,৫০০ বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন খুঁজে পেল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। গত প্রায় আড়াই বছর ধরে রাজস্থানের দীগ জেলার বাহাজ গ্রামে খননকার্য চালানো হচ্ছিল। খোঁজ মিলেছে প্রায় ২৩ মিটার গভীর একটি নদীর খাতের, যার সঙ্গে ঋগ্বেদের উল্লিখিত সরস্বতী নদীর যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মহাভারত যুগের তথা শুঙ্গ যুগের ইতিহাস আবিষ্কৃত হয়েছে এই খননকার্যে জানিয়েছেন এএসআই-এর খননপ্রধান পবন সরস্বত। যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে অন্যমাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মিলেছে আটশোর বেশি ভূতাত্ত্বিক নির্দশন। ২০২৪ এর জানুয়ারির ১০ তারিখ থেকে শুরু হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁড়াখুড়িতে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সামনে এসেছে। এই স্থান থেকে প্রচুর পরিমাণে রূপা ও তামার মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে, সেই সাথে ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গেছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (ASI) তরফে জানানো হয়েছে, এই নদীখাতটি প্রাচীন মানব বসতির জন্ম দিতে সাহায্য করেছিল এবং সরস্বতী অববাহিকা সংস্কৃতির সঙ্গে বাহাজকে যুক্ত করেছিল। এএসআই-এর খননপ্রধান পবন সরস্বত জানিয়েছেন, “এই জলপ্রবাহের প্রমাণ সরস্বতী উপত্যকা, ব্রজ ও মথুরা অঞ্চলের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী ছিল, এটা প্রমাণ করে।” উদ্ধার হয়েছে ৮০০-র বেশি প্রত্নসম্পদ—যার মধ্যে রয়েছে প্রাচীন মৃৎপাত্র, ব্রাহ্মী লিপির আদিম সিলমোহর, তাম্র মুদ্রা, যজ্ঞ কুণ্ড, মৌর্য যুগের মূর্তি, শিব ও পার্বতীর মাটির মূর্তি, পশুর হাড় দিয়ে তৈরি সূচ, চিরুনি ও ছাঁচ। এমনকি, একটি মানব কঙ্কালও পাওয়া গিয়েছে, যার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে ইজরায়েলে। কোন আমলের মানুষ তারা, তা জানা যাবে সেই পরীক্ষায়। পশুর হাড় দিয়ে তৈরি সূচ, চিরুনি ও ছাঁচ প্রমাণ করে, প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে হাড়ের সরঞ্জাম ব্যবহার হত।

এই খননে মিলেছে পাঁচটি ভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ের স্তর: যার মধ্যে রয়েছে হরপ্পার আগের যুগ, মহাভারত যুগ, মৌর্য যুগ, কুষাণ যুগ এবং গুপ্ত যুগ। মহাভারত যুগের স্তরে পাওয়া গেছে আয়তাকার ও গোল যজ্ঞ কুণ্ড, পোড়ামাটির পাত্র ও যজ্ঞের চিহ্ন। যা সেই সময়ের পূজা-পদ্ধতির সাক্ষ্য বহন করে। পাওয়া গেছে ১৫টিরও বেশি যজ্ঞ কুণ্ড, যা বেদ ও উত্তরবেদ যুগের ধর্মাচরণের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।এছাড়াও খননের সময় পাওয়া গেছে শিব-পার্বতীর পোড়ামাটির মূর্তি, যা শক্তি ও ভক্তি ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন। পাওয়া গেছে মৌর্য যুগের মাদার গডেস-এর মূর্তির অংশ, গুপ্তযুগীয় স্থাপত্যে ব্যবহৃত কাদামাটির দেওয়াল ও স্তম্ভ এবং ধাতুবিদ্যার চুল্লি, যা তামা ও লোহার ব্যবহার নির্দেশ করে। খননকাননে মাটির স্তম্ভ, স্তরযুক্ত পরিখা প্রাচীর দিয়ে তৈরি ভবন এবং প্রাচীন চুল্লি আবিষ্কার হয়েছে। এই আবিষ্কারগুলি সেই যুগের মানুষের মধ্যে উন্নত স্থাপত্য জ্ঞানের ইঙ্গিত দেয়। গবেষকরা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রাহ্মী লিপি সম্বলিত প্রাচীনতম বেশ কিছু সীলমোহরও খুঁজে পেয়েছেন, যা ভারতের ভাষাগত ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যোগ করেছে। মহাজনপদ যুগের বালি, মাটি এবং তামার মুদ্রায় ভরা ছোট ছোট পাত্রও আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রায় ২৩ মিটার গভীরে পৌঁছনো এই খনন রাজস্থানে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গভীর প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযান।
রাজস্থানের ভরতপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দিগ জেলা। গবেষণার কাজে গিয়ে সেখানকার বাহজ গ্রামে লুকিয়ে থাকা ইতিহাসের একটু একটু সন্ধান পেয়েছিলেন এএসআই-এর কর্মী, আধিকারিকরা। সরকারের অনুমতি নিয়ে খননকাজ করতেই চোখের সামনে ইতিহাস দেখলেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই এএসআই সংস্কৃতি মন্ত্রকে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই এলাকাকে ‘জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষিত অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। জয়পুরের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের ডিরেক্টর বিনয় গুপ্তা জানিয়েছেন, "সরকারের অনুমতি পাওয়ার পর সেই ২০২৪ জানুয়ারিতে আমরা খননকাজ শুরু করি। তাতে এই সাফল্য এসেছে। আগামিদিনেও আমাদের কাজ চলবে।” এসব প্রাচীন সামগ্রী আপাতত জয়পুরের এই সংগ্রহশালায় রাখা হয়েছে। পরীক্ষা করা হবে।













Comments