যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে 'আতঙ্কপুর' আখ্যা দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়
কলকাতা, ১৬ আগস্ট: সিপিআই (এম এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার ১৫ই অগাস্ট এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে মুখ্যমন্ত্রীর 'আতঙ্কপুর' আখ্যা দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীন, সংকীর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছে সিপিআইএমএল। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর অযাচিত, উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্য ফিরিয়ে নিতে হবে, নাবালক ছাত্রের হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে এবং ছাত্র মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনার সুযোগ নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলির ওপর পুলিশী হামলা নামিয়ে আনা চলবে না।
এদিন তাঁরা প্রেস বিবৃতিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দীর্ঘকাল উপাচার্যহীন রেখে আচার্য হিসাবে রাজ্যপালের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা ও ক্যাম্পাসকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত করার অভিসন্ধির বিরুদ্ধে শিক্ষক-ছাত্র- কর্মচারী- অভিভাবকদের ঐক্য গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে নবাগত প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে সিপিআইএমএল শোকস্পৃষ্ট ও ছেলেটির পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। এই মর্মন্তুদ ঘটনার দ্রুত বিচারবিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি চেয়ে এআইএসএ সহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি জোরালো দাবি তুলেছে এবং ক্যাম্পাসের মধ্যে ও বাইরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধর্ণা-বিক্ষোভ, মিছিল সংগঠিত করে চলেছে। ছাত্র মৃত্যুর দায় অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায় বলেই তাদের অভিযোগ।
এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের অপদার্থতার নিন্দা না করে, শিক্ষামন্ত্রীর নির্লিপ্ততা চিহ্নিত না করে মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন, অনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে আতঙ্কপুর আখ্যা দিয়েছেন। প্রণালীবদ্ধ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে দেশের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষকে কলঙ্কিত করার প্রয়াস নিয়েছেন। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ, ঐতিহ্যশালী বাম ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসকে কালিমালিপ্ত করতে মুখ্যমন্ত্রীর এই অনীতিনিষ্ঠ ও সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সিপিআইএমএল।
পাশাপাশি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিকল্পিতভাবে উপাচার্যহীন রাখার অপকৌশল নিয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে রাজ্যপাল পঠন-পাঠনের উৎকর্ষ রক্ষা, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বকেয়া কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদানে বিন্দুমাত্র উদ্যোগ না নিয়ে, ছাত্র মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়কে অভিব্যক্ত করলেন। এখন কেন্দ্রীয় সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ইউজিসি ও রাজভবন যেন সিবিআই আর ইডি-র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শুধুমাত্র যাদবপুর নয়, বাংলার ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের বিলুপ্তি ঘটিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের মান্যতা ও ছাত্রদের রাজনীতি করার অধিকার হরণ করতে এবং নিরঙ্কুশ দক্ষিণপন্থী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
Edited By
Swarnali Goswami
Comments