মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে, মৃত ২, আহত ২০

কলকাতা, ৩০ জুলাই: ফের ট্রেন দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার ভোরে দুর্ঘটনার কবলে হাওড়া থেকে মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস। ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক ভাবে খবর, দুর্ঘটনার জেরে বেলাইন হয়ে গিয়েছে ট্রেনের অন্তত ১৮টি কামরা। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ জন যাত্রীর এবং আহত ২০ জন। আহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। রেলের তরফে ইতিমধ্যেই উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে দুর্ঘটনাস্থলে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ।
একটি মালগাড়ির সঙ্গে ধাক্কার জেরেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ পূর্ব রেল। খেলনা গাড়ির মতো রেললাইনে ছিটকে পড়ে ট্রেনটির ১৮টি বগি। দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে ট্রেনের বগিগুলি ও ইঞ্জিন। ট্রেনের যে ১৮টি কামরা লাইনচ্যুত হয় সেগুলির মধ্যে ১৬টি যাত্রীবাহী, একটি পাওয়ার কার ও একটি প্যান্ট্রি কার। দুর্ঘটনা ঘটে রাজাখারসওয়ান ও বরাবাম্বু রেল স্টেশনের মাঝে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের ট্রেন ম্যানেজার মহম্মদ রেহান জানান, "পৌনে চারটে নাগাদ লাইনচ্যুত হয় ট্রেনটি। দুর্ঘটনার জেরে বহু মানুষ আহত হয়েছেন। হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস ১২০ কিলোমিটার বেগে যাচ্ছিল। আগে থেকেই ডাউনলাইনে বেলাইন পড়েছিল একটি মালগাড়ির কয়েকটি কামরা। মালগাড়ির ওই কামরাগুলির সঙ্গে ধাক্কা লেগেই দুর্ঘটনা ঘটে। আপলাইনে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। বাতিল হয়েছে ৫ টি ট্রেন। হাওড়া-টিটলাগড়-কান্তাবাঞ্জি এক্সপ্রেস, খড়গপুর-ঝাড়গ্রাম-ধানবাদ এক্সপ্রেস, হাওড়া-বারবিল-হাওড়া জন শতাব্দী এক্সপ্রেস, টাটানগর-ইটওয়ারি এক্সপ্রেস, শালিমার-এলটিটি এক্সপ্রেস"।
ইতিমধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একাধিক স্টেশনে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। হাওড়া স্টেশনের জন্য ৯৪৩৩৩৫৭৯২০ ও ০৩৩২৬৩৮২২১৭, টাটানগর স্টেশনের জন্য ০৬৫৭২২৯০৩২৪, চক্রধরপুর স্টেশনের জন্য ০৬৫৮৭ ২৩৮০৭২, রৌরকেলা স্টেশনের জন্য ০৬৬১২৫০১০৭২ ও ০৩৩২৬৩৮২২১৭ এবং রাঁচি স্টেশনের জন্য ০৬৫১২৭৮৭১১৫ হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ জানিয়েছেন, "মঙ্গলবার ভোর ৩টে ৪৩মিনিটে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল ট্রেনটি। উদ্ধারকাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আহত যাত্রীদের চক্রধরপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৮০ শতাংশ যাত্রীকে বাসে চক্রধরপুর স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ যাত্রীকে একটি বিশেষ ট্রেনে চক্রধরপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ চক্রধরপুর থেকে একটি বিশেষ ট্রেন যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেবে"।
রেলের একটি মহল থেকে দাবি করা হয়েছে, যে লাইন দিয়ে মুম্বই মেল যাচ্ছিল, তার উলটো দিকের লাইন দিয়ে একটি মালগাড়ি আসছিল। কোনও কারণে সেটির চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। দুটি লাইনের মধ্যে পড়েছিল তিনটি কামরা। একটি কামরা একেবারে মুম্বই মেলের লাইনের ধার ঘেঁষে পড়েছিল। আর তার জেরেই সম্ভবত দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ওই মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে। দাবি, যে সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে হাওড়া-মুম্বই মেল, সেইসময় সম্ভবত ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছুটছিল। সেই পরিস্থিতিতে মুম্বই মেলের চালক ব্রেক কষে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করলেও ধাক্কা এড়ানো যায়নি।
ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনায় যাত্রী সুরক্ষায় রেলের উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে শোকপ্রকাশ করেছেন তিনি। দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Comments