মেদিনীপুরকাণ্ডে জুনিয়র-সিনিয়র নির্বিশেষে ১২ জন চিকিৎসক সাসপেন্ড! হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে রাজ্য

কলকাতা ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫: মেদিনীপুরকাণ্ডে জুনিয়র-সিনিয়র নির্বিশেষে ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরে ‘বিষ স্যালাইন’ কাণ্ডে ডাক্তারদেরই কাঠগড়ায় তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১২ জন চিকিৎসকের শাস্তি নিয়ে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের অন্যতম নেতা দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘কর্নাটক সরকার স্যালাইন প্রস্তুতকারক সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করার পরেও তারা এই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ করত। আর সাসপেন্ড হলেন চিকিৎসকেরা। বাহ বাহ! এ তো একেবারে হীরক রাজ্য!’’
পাশাপাশি স্যালাইন-কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। গত ১০ ডিসেম্বর ড্রাগ কন্ট্রোলার একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার পরেও কেন হাসপাতালে হাসপাতালে সেই স্যালাইন ব্যবহার হল, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়ে। হাই কোর্ট ইতিমধ্যেই স্যালাইন-কাণ্ডে রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতর এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যও রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি প্রশ্ন তুললেন, ‘‘গিনিপিগের মতো মানুষের শরীরে পরীক্ষার জন্যই কি ওই স্যালাইন হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয়নি এত দিন?’’ মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও বিজয় সিংহল বলেন, “২০১৫ সালের জুন মাসে আলিপুরদুয়ারের চিকিৎসক এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। যেহেতু তিনি মুখ খোলেন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় রাজ্য। কর্নাটকে এই কোম্পানিকে তিন বছর ব্যান করে দেওয়া হয়। তারপরে এই রাজ্য ওই কোম্পানিকে কাজের সুযোগ দেয়।” রাজ্যকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। ৩০ জানুয়ারি পরের শুনানি।
এদিকে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘটনায় গাফিলতি ডাক্তারদের বলেই বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মমতা। এই ঘটনায় হাসপাতালে আরএমও, এমএসভিপি-র সিনিয়র চিকিৎসক এবং জুনিয়র চিকিৎসক মিলিয়ে একসঙ্গে ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করল রাজ্য সরকার৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একই স্যালাইনে তো অন্য জায়গায় কিছু হয়নি। এখানে গাফিলতি হয়েছে, এমএসভিপি বা হেড অফ ডিপার্টমেন্ট কোথায়? সরকার কি স্যান্ডুইচ হবে নাকি সঠিক তথ্য দেবে। যা ঘটেছে তাই বলেছি।" তিনি বলেন, এই স্যালাইন অনেক রাজ্যে এখনও চলছে। এর মধ্যে অন্য কাহিনী থাকতে পারে।" মুখ্যমন্ত্রীর জানালেন, ‘‘সিনিয়র চিকিৎসক ও সিআইডি রিপোর্ট মিলে গিয়েছে। মানুষ জানতে চায় আমরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছি।"
মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ‘কড়া বার্তা’ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য প্রশাসনের উদ্দেশে মমতার এ-ও নির্দেশ যে, অপারেশন থিয়েটারের বাইরের দরজা তো বটেই, ভিতরেও সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। যাতে বোঝা যায়, কারা ডিউটি করছেন, কারা করছেন না বা কারও কাজে কোনও ‘গাফিলতি’ হচ্ছে কিনা।
অপরদিকে আরজি করের আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম আশফাকুল্লা নাইয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। জানা গিয়েছে, ভুয়ো ডিগ্রি ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর ডিগ্রি বিষয়ক নানা নথি চেয়ে চিকিৎসক আশফাকুল্লা নাইয়াকে চিঠি দিল ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল। সাত দিনের মধ্যে তাঁকে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি তা না হয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের কথাও স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে তথা আশফাকুল্লা নাইয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালানোর প্রতিবাদে ফের পথে নামলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বেলগাছিয়া রোড, এপিসি রোড, বিটি রোড আটকে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভের জেরে দমদম চিড়িয়া মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত বন্ধ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধহয়ে যায় শ্যামবাজার থেকে খান্নার দিকের রাস্তাও। গোটা শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় মানববন্ধন করে আটকে দেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা।
Comments