মহাসভায় তৃণমূল সুপ্রিমো এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক একের পর এক বাক্যবাণে বিঁধলেন

কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫: বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরাট সভা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমনের পাশাপাশি ২০২৬ এর বিধানসভা ভোটের নতুন ডাক দিলে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম থেকেই কার্যত বিজেপির টাইমলাইন বলে দিলেন তিনি। সুপ্রিমোর হুঙ্কার “খেলা হবে, খেলা আবার হবে’। ২০২৬ এর খেলায় আরও জোরে মারতে হবে।”
সাংগঠনিক ক্ষেত্রে দলের নেতা-নেত্রীদের ভূমিকা কী হবে? এদিনের মহাসভা থেকে তা স্পষ্ট করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ক'দিন আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনে দুই–তৃতীয়াংশ ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সেটা ছাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিলেন অভিষেক। তিনি বলেন, ১৯৫ থেকে ২০০ আসন নয়। ২১৫ আসনের বেশি আসন নিয়ে আসতে হবে। তার জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, "আমি দলের অন্দরে থাকা বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলাম। কেউ ছাড় পাবেন না।" মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীদের তিনিই দলবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন- এও বলেন আজ মহাসভায় অভিষেক। দলের নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলারক্ষার বার্তা দিয়েছেন অভিষেক।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে বলে দিলেন, "নতুন সংগঠন পিকের আইপ্যাক নয়। ওরা অন্য জায়গায় কাজ করে। এটা একটা নতুন টিম। সবাই জানে। এদের কো অপারেশন করতে হবে। এদের নামে উল্টোপাল্টা বলা বন্ধ করুন! তার কারণ, আপনাদের বুঝতে হবে, কাজটা সবাইকে মিলে একসাথে করতে হবে।’’ বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতা যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট যে, ‘ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি’ (আইপ্যাক)-র বিরুদ্ধাচরণ তিনি চাইছেন না। উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়েই তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা আইপ্যাক নিয়ে তাঁদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন। ভাবা হয়েছিল, ২০২৬ এ হয়ত আইপ্যাক ছাড়াই চলবে তৃণমূল। কিন্তু তা যে হবেনা, আজ তা স্পষ্ট করে দিলেন মমতা নিজেই।
আজ প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের চার্জশিটে তাঁর নাম প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘‘খবরে দেখাচ্ছে, আমার বিরুদ্ধে নাকি সিবিআই চার্জশিট দিয়েছে। দু’জায়গায় খালি আমার নাম লিখেছে। কে অভিষেক, বাড়ি কোথায়, কোনও পরিচয় লেখা নেই। সিবিআই ভাববাচ্যে কথা বলছে। ওদের এই ভয় আমার ভাল লেগেছে। অভিষেক আরও বলেন, ‘‘খবরে রটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমি নাকি বিজেপিতে যাব। খবরের সব মিথ্যা। আমার গলা কেটে দিলে সেই কাটা গলা দিয়েও বেরোবে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’।’’
বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে বিজেপিকে বিঁধে ভোটার তালিকা নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের সতর্ক করলেন দলনেত্রী। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মমতার নিশানায় ছিল ভারতের নির্বাচন কমিশনও। বাংলায় ভোটে জেতার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং আরও কিছু এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে এই রাজ্যের ভোটার তালিকায় ভিন রাজ্যের বাসিন্দাদের নাম ঢোকানো হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি এ দিন বলেন, ‘দিল্লি পারেনি, মহারাষ্ট্র পারেনি, বাংলায় আমরা ধরব, জবাব দেবো।’
আর হাতে গোবা কয়েকটা দিন। সামনের বছরই হতে চলেছে বিধানসভার ভোট। দেখার, তৃণমূল নিজের জায়গা আরও মজবুত করতে পারে, না কি বিজেপি কোমর বেঁধে নেমে বর্তমান সরকারকে টালমাটাল করে দে। আসল কথা বলবে সময়। সাধারণ মানুষ সেই অপেক্ষায়।
تعليقات