ফের উত্তপ্ত বাংলাদেশ, ভেঙে ফেলা হল শেখ মুজিবের বাড়ি, দায় চাপানো হচ্ছে হাসিনার বিবৃতিকে

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ভারতে বসে বসে উস্কানিমূলক বিবৃতি দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে বিরত করতে হবে। ভারতকে এই মর্মে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। মহম্মদ ইউনূস পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকার তলব করেছে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় উপরাষ্ট্রদূতকেও।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের ছ’মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। সে দিন বাংলাদেশবাসীর উদ্দেশে একটি ভার্চুয়াল ভাষণ দেন হাসিনা। তবে ভার্চুয়াল ভাষণ শুরুর আগেই ফের জনরোষের মুখে পড়ে মুজিবুরের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি। হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তৃতার কথা সমাজমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পরেই বুধবার বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। সমাজমাধ্যমে ডাক দেওয়া হয়, ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির। রাত গড়াতেই বুলডোজ়ার এনে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণপুরুষের স্মৃতি ধ্বংসের কাজ। মুজিবের বাড়িতে তাণ্ডব, ভাঙচুর চালায় জনতা। পরে সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর পর বেশি রাতের দিকে বুলডোজ়ার, ক্রেন, ভ্যাকুয়ম মেশিন নিয়ে আসা হয়। রাতভর ‘অভিযানে’ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বাড়ির বেশির ভাগ অংশই। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির বাকি অংশ ভেঙে ফেলার কাজও শুরু হয়। যদিও বাংলাদেশের পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর কাউকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।
পাশাপাশি বুধবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গিয়েছে উন্মত্ত জনতার হামলা। নিশানায় ছিলেন হাসিনা-সহ আওয়ামী লীগের নেতারা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি চলে দেদার লুটপাটও। ধানমন্ডির ৫/এ-তে হাসিনার বাড়ি সুধা সদনেও আগুন ধরানো হয় বুধবার রাতে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আগুন জ্বললেও হামলার আশঙ্কায় তা নেভাতে যাননি দমকলকর্মীরা। রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধু মুজিব এবং হাসিনার ম্যুরাল ভেঙে দেন একদল বিক্ষোভকারী। সেখানকার আল বেরুনী হলের দেওয়ালে আঁকা বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতিও রং দিয়ে মুছে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। খুলনার ময়লাপোতা এলাকায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে ‘শেখ বাড়ি’। সেটি ছিল হাসিনার কাকার বাড়ি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ভোলা সদরের গাজীপুর সড়কে ‘প্রিয় কুটির’ নামে একটি বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। সেটি আওয়ামী লীগ নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাড়ি। কুমিল্লার মুন্সেফবাড়ি এলাকায় প্রাক্তন সাংসদ বাহাউদ্দীন বাহারের বাড়িতেও ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ। পিরোজপুরে জাতীয় সংসদের প্রাক্তন সদস্য একেএমএ আউয়াল এবং তাঁর ভাই তথা মেয়র হাবিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা।
এদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস। ইউনূসের দাবি, বুধবার রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে, যার দুটো অংশ আছে। একটা অংশ হল, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদের অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধমকির সুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে, গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।
তাঁর সাধের বাড়ি ধ্বংসের দৃশ্য দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ নিজের অনুগামীদের দেওয়া অডিও বার্তায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেছেন, ‘এর পরেও আমি যখন বেঁচে আছি তার মানে আমার কোনও বড় কাজ বাকি আছে৷ একই সঙ্গে কান্নাভেজা গলায় দৃঢ়তার সঙ্গে হাসিনা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইতিহাস কিন্তু বদলা নেয়! হাসিনার দাবি, উন্মত্ত জনতা শেখ মুজিবুরের বাড়ি ভাঙচুর করতে পারে, কিন্তু ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না৷’
Comments