‘পোস্টিং’ বিতর্ক নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন দেবাশিস হালদার ও আসফাকুল্লা নাইয়া
- The Conveyor
- May 30
- 2 min read

কলকাতা, ৩০ মে, ২০২৫: ‘পোস্টিং’ বিতর্ক নিয়ে শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম দুই মুখ দেবাশিস হালদার, আসফাকুল্লা নাইয়া। আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী তিন জন জুনিয়র চিকিৎসকদের দূরবর্তী স্থানে পোস্টিং করা হয়েছে। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ বলে অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। এবারে তাঁরা আইনের দ্বারস্থ হলেন। আদালত সেই আবেদন শুনতেও রাজি হয়েছে৷
আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে দেবাশিসরা জানান, তাঁরা পোস্টিং মেনে ডিউটিতে জয়েন করবেন৷ এদিকে চলবে তাঁদের আইনি লড়াই৷ অন্যদিকে, অনিকেত মাহাতো জানিয়েছেন, তিনি জয়েনও করবেন না, বেতনও নেবেন না৷ এঁদের দাবি, নিয়ম মেনে কাউন্সেলিংয়ের পরেও তাঁদের পছন্দের জায়গায় ‘পোস্টিং’ দেওয়া হয়নি। আরজিকর আন্দোলনের সময় ছিলেন অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতো, আশফাকুল্লা নাইয়া প্রমুখ। সম্প্রতি তাঁদের পোস্টিং ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, এই তিন চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে সিনিয়র রেসিডেন্ট নিয়োগের কাউন্সেলিংয়ের মেরিট লিস্ট না মেনে দূরবর্তী স্থানে পোস্টিং করা হয়েছে। সিনিয়র রেসিডেন্টদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পরে তিন বছরের ‘বন্ড’ থাকে। সেই বন্ড অনুযায়ী সরকারের তরফে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কোথায় কাকে নিয়োগ করা হবে, কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এবং মেধাতালিকার ভিত্তিতে তা ঠিক করা হয়। মেধাতালিকায় থাকা চিকিৎসকেরা পোস্টিংয়ের জন্য বেছে নিতে পারেন পছন্দের জায়গা। যাঁদের নাম তালিকার উপরের দিকে থাকে, তাঁরা আগে সুযোগ পান। কিন্তু অভিযোগ, দেবাশিসদের ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া মানা হয়নি। সেই কারণে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন দেবাশিস, আসফাকুল্লারা৷
দীর্ঘ দুমাস এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে রেখে একদিকে স্বাস্থ্য পরিষেবার যেমন বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে তেমনি আন্দোলনকারীদেরকে শনাক্ত করে তাঁদের প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণ পদক্ষেপ হিসেবে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় সিনিয়র রেসিডেন্টদের কাছে নিয়ম মেনে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁরা কোথায় বদলি চান। তবে ওই চিকিৎসকরা পছন্দের জায়গায় ‘পোস্টিং’ পাননি। এরপরেই বদলি নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানান চিকিৎসকরা। পছন্দের ‘পোস্টিং’ না দেওয়া নিয়ে ‘অনৈতিক’ কাজের অভিযোগ তুলে ডব্লিউবিজেডিএফ-এর তরফে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানেই বসেছিলেন দেবাশিসরা। লিখিত অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও কোনও সুরাহা হয়নি। উল্টে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ াণ হয়েছে, তাঁরা গ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতে চাননা। যেটা সত্যি নয়। তাই দুই চিকিৎসক প্রতিহিংসামূলক পোস্টিং গ্রহণ করছেন, অথচ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন, এবং অনিকেত পোস্টিং নিচ্ছেন না পাশাপাশি বেতনও নেবেন না।
আজ শুক্রবার দুজন চিকিৎসক রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁদের মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন বিচারপতি। আগামী ৫ জুন মামলার পরবর্তী শুনানি। জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ডব্লিউবিজেডিএফের তরফে জানানো হয়েছে অনিকেতও আদালতের দ্বারস্থ হবেন। সরকারের তরফ থেকে দৃষ্টিকটুভাবে এহেন আচরণ কী স্বৈরাচারের দৃষ্টান্ত নয়? এমন অনৈতিক পোস্টিং- এর কারন জানতে চাওয়া হলেও গা জোয়ারিভাবে স্বাস্থ্য ভবন থেকে বলা হচ্ছে যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। লিখিত অভিযোগের কোনও উত্তর দেওয়া হচ্ছেনা। মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছিলেন, সরকারের তরফ থেকে কোনও শাস্তি নেওয়া হবেনা। তাহলে এমন কেন করা হচ্ছে, তার জবাব কে দেবে? তবে আইনি পদক্ষেপ যখন নেওয়া হচ্ছে, সেখান থেকেই আশা করা যায় কিছু সুরাহা বেরিয়ে আসবে।
Comments