পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে শাহবাজ শরিফ সরকার!
১৪ মে, ২০২৪: যা পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে শাহবাজ শরিফ সরকার। গত শুক্রবার থেকে উত্তাল পাক অধিকৃত কাশ্মীর। ভারতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চলা প্রবল বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে সমানে। সোমবারও বিভিন্ন শহরের দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাটে তেমন যান চলাচল করেনি।
চড়া রাজস্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ সঙ্কটের জেরে কয়েক দিন ধরেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষের মনে ক্ষোভের জন্ম হয়। জম্মু-কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি নামে একটি স্থানীয় সংগঠনের প্রায় ৭০ জন নেতাকে গ্রেফতার করার পর থেকেই বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাংশ। পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। পথে নেমে আসেন সাধারণ মানুষ। বার হয় প্রতিবাদী মিছিল। সেই মিছিল আটকাতে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীও সক্রিয় ছিল।বিক্ষোভকারীদের উপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। শূন্যে গুলি চালানোর পাশাপাশি জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। শুক্রবারে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোটে উড়েছে ভারতীয় পতাকা। পাশাপাশি, ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়ে সেখানে একাধিক পোস্টারও পড়েছে।
এদিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সমাজকর্মী আমজাদ আয়ুব মির্জা ভারতের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের উচিত এখন তাদের সমস্ত মনোযোগ পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে দেওয়া। গিলগিট-বাল্টিস্তান-সহ অধিকৃত অঞ্চলের স্বাধীনতার জন্য আমাদের সাহায্য করা উচিত। ভারত যদি এখন এগিয়ে না আসে, তবে আমরা স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণ সুযোগ হারাব।’’
এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ পাক প্রধানমন্ত্রী শরিফ বলেন, যারা নিজের হাতে আইন তুলে নেবে তাদের বরদাস্ত করা হবে না। হিংসাত্মক ঘটনার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আলোচনা, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং বিতর্ক চলাই হল গণতন্ত্রের অলঙ্কার। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকেন এদিন। সোমবারই পাকিস্তান সরকার অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য ৭১৮ কোটি টাকার সাহায্য ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে এক ক্যাবিনেট বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে মতামত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। এক জনসভা থেকে অমিত শাহ বলেন, ‘‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতেরই অংশ। সর্বদা সেটাই থাকবে। পিওকে ভারতেরই অংশ। আমরা সেটা ফিরিয়ে নেব।’’ ২০২৩ সালে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ বিল এনেছিল কেন্দ্র। সেই বিলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্যও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় ২৪টি আসন সংরক্ষণ করা হয়েছিল। বিল পেশের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর আমাদেরই অংশ।’’
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাতের সূত্রপাত। জম্মু ও কাশ্মীরের দখল নিয়ে সেই ১৯৪৭ সাল থেকে দু’দেশের মধ্যে অশান্তি চলছে। মাঝেমধ্যেই পিওকের নেতারা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার দাবি জানান। তার মধ্যে পিওকেতে তৈরি হওয়া নতুন উত্তেজনা সেই দাবিই আরও জোরালো করল বলে মত অনেকের।
Comentarios