দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়, তবে সামগ্রিকভাবে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে

কলকাতা, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫: অনুমান সত্যি করে আরজি কর মামলায় আদালতের রায়ে শনিবার দোষী সাব্যস্ত হলেন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। প্রথমে কলকাতা পুলিশ এবং পরে সিবিআই— দুই সংস্থার তদন্তেই একমাত্র অপরাধী সঞ্জয়ই। সিবিআইয়ের পেশ করা প্রাথমিক চার্জশিটে একমাত্র সঞ্জয়কেই অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়। গত সপ্তাহে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার বিচার শেষ হয়। শনিবার শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস ওই রায় ঘোষণা করেন। তিনি জানান, দোষীর সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আরজি কর-কাণ্ডের দোষীর ফাঁসির পক্ষেই সওয়াল করেছে রাজ্য। সিবিআইও সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করে আদালতে।

তবে সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় খুশি নয় জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ লিফলেট ছাপিয়ে দাবি করেছে, 'বিচার পাওয়া যায়নি'। লিফলেটের দ্বিতীয় লাইনেই লেখা ‘বিচার কাঁদে নিভৃতে’। শেষ লাইনে লেখা ‘দেশের স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে কেন?’ আদালত যাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, সেই সঞ্জয় যে অপরাধী, তা নিয়ে সংগঠন সংশয় প্রকাশ করছে না। কিন্তু সঞ্জয় খুন-ধর্ষণে যুক্ত কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে লিফলেটের বয়ানে। মোট ২০টি প্রশ্ন তুলেছে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। সিংহভাগ প্রশ্নেই তদন্তপ্রক্রিয়ায় ‘ফাঁক’ থেকে যাওয়া সংক্রান্ত।

শনিবার সকাল থেকেই শিয়ালদা আদালতের সামনে ছিল একেবারে উপচে পড়া ভিড়। সেই ভিড়ে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তাররা যেমন ছিলেন তেমনি নাগরিক সমাজ থেকেই প্রচুর মানুষ ছিলেন। নাগরিক সমাজ এদিন রায় ঘোষণার পরে ফের দাবি তোলেন উই ওয়ান্ট জাস্টিস। বিভিন্ন প্রতিবাদ মঞ্চের তরফ থেকে বহু মানুষ এসেছিলেন শিয়ালদা আদালত চত্বরে। এদিন বিকালেও প্রচুর মানুষ ছিলেন শিয়ালদা আদালত চত্বরে। তাঁদের একটাই কথা, আসল সত্যিটা সামনে আসুক।
এদিকে আরজি কর ধর্ষণ-খুনের মামলায় শনিবার ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে শিয়ালদহ আদালত। রায় ঘোষণার পরেই বিচারককে আদালতে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা। পরে আদালতের বাইরে বেরিয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘বিচারককে ধন্যবাদ জানানোর ক্ষমতা নেই। উনি যে ভাবে বিষয়টি দেখেছেন, তাতে কৃতজ্ঞ। আমার মেয়ে তো আর কোনও দিন ফিরে আসবে না। সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা চাইছি। এতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। তাই মৃত্যুদণ্ডই চাইছি। আর যারা এই ঘটনায় যুক্ত, তাদেরও সাজা চাইছি।’’ নির্যাতিতার মা-ও সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে বলেন, ‘‘বায়োলজিক্যাল তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মামলা এখনও শেষ হয়নি। বাকি জড়িতেরা ধরা পড়লে তবেই মামলা শেষ হবে। আমরা ওই দিনটির অপেক্ষায় রয়েছি।’’
Comentários