দিনভর বিভিন্ন ঘটনা এবং মন্তব্যে উত্তাল রাজ্য তথা বাঙালি
কলকাতা, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪: সোমবার আরজি কর চত্বরে ছাত্রদের হস্টেলে ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এক চিকিৎসক-পড়ুয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে টালা থানায় এ বিষয়ে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ২২ অগস্ট থেকে আরজি করের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীটির দু’টি কোম্পানিকে। তাদের নিরাপত্তের ঘেরাটোপের এই হামলার ঘটনা। অবশ্যই ছাত্র হস্টেলে ভাঙচুরের অভিযোগ নতুন করে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে তুলে দিল প্রশ্ন।
এদিন সকালে আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের মামলার সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় শুনানিতেও বিস্তর প্রশ্ন উঠল। সিবিআই প্রশ্ন তুলল। রাজ্য পাল্টা যুক্তি দিল। তবে গোটা দেশ সুপ্রিম শুনানির দিকে তাকিয়ে থাকলেও আসল চাল টা তো দিলেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর কাণ্ডের দ্বিতীয় শুনানি শেষ হতেই প্রশাসনিক বৈঠকে নবান্নের সভাঘরে বৈঠকে সাধারনের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, “১ মাস ১ দিন হয়ে গিয়েছে এবার উৎসবে ফিরুন। সিবিআই তদন্ত শেষ করুক দ্রুত!” মুখ্যমন্ত্রীর উৎসবে ফেরার বার্তায় স্তম্ভিত অনেকেই। ডাক্তার তথা অভিনেতা কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনকে অস্বীকার করা, আমাদের আন্দোলনকে অসম্মান করা এটা মনে হয় সাধারণ মানুষ খুব ভালোভাবে মেনে নেবে না। উৎসব হবে কী হবে না, সেটা মানুষ ঠিক করবে, মানুষ সেই বিচার করবে উৎসব হবে নাকি পুজো হবে’।
মৃত মহিলা চিকিৎসকের দেহের সঠিক ময়নাতদন্ত হয়েছিল কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হয় আজ প্রধান বিচারপতির এজলাসে। মামলার একটি পক্ষ ছিলেন এক জনস্বার্থ মামলাকারী। এজলাসে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজিও, তিনিই এ ব্যাপারে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে এডুলজি বলেন, “দয়া করে ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি দেখুন। নির্যাতিতার পোশাক কি ডাক্তারকে দেওয়া হয়েছিল? জিন্স বা অন্যান্য পোশাক কি ছিল? যদি দেওয়া হয়, তবে সেগুলি কি সিল করা অবস্থায় ছিল?” তিনি জানান, সার্চ এবং সিজার করার পর কোনও এফআইআর রেজিস্ট্রি করা হয়নি। নির্যাতিতার জামাকাপড় ময়নাতদন্তে পাঠানোর পরে দেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত প্রসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “ভিডিয়োগ্রাফি কে করেছিলেন? কোনও তথ্য নেই। রাইটেব্ল সিডি ছিল না কি রিরাইটেব্ল কোনও সি়ডি ছিল? সেই বিষয়েও কোনও তথ্য নেই।” ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র প্রসঙ্গও তোলেন এডুলজি। এডুলজির দাবি, “(ময়নাতদন্তের সময়) সেখানে যে চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা সকলেই উত্তরবঙ্গ লবির।” “দাবি করা হচ্ছে, মৃতার পা ৯০ ডিগ্রি কোণে ছিল। কোমরের হাড় ভাঙা না হলে, এটা সম্ভব নয়।” সে ক্ষেত্রে এক্স-রে প্লেট কি দেওয়া হয়েছিল? প্রশ্ন তোলেন এডুলজি। তাঁর আরও দাবি, নির্যাতিতার সোয়াবের নমুনা ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষিত হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এডুলজি বলেন, “দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুধুমাত্র ১০ বার জিডি এন্ট্রি করা হয়েছে। পুরোটা পরে তৈরি করা হয়নি তো? অনেক রহস্য রয়েছে।”
সিবিআইয়ের তরফে সোমবার গুরুতর সংশয় প্রকাশ করা হয় আদালতে। সিবিআইয়ের বক্তব্য, “এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম ৫ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা ৫ দিন পরে গিয়েছি। তখন অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে।” সিবিআইয়ের তরফে আদালতে জানানো হয়, ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। তাই তারা সেটি এমসে পাঠাতে চায়। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তার মধ্যে সিবিআইকে ফের তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
তবে ”আগামীকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না রাজ্য সরকার"। কিন্তু তার পরেও কাজে যোগ না দিলে আমরা সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আটকাতে পারি না।” এমন জানিয়ে দেওয়া হল সুপ্রিম কোর্টের তরফে। এদিকে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার জন্য ফের একবার আবেদন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নের সভাঘর থেকে তিনি স্পষ্ট জানান, প্রয়োজনে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি তিনি। তিনি বলেন, "পাঁচ-দশ জনের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আসুন। আমরা কথা বলতে পারি।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংযোজন, ‘পুলিশ কোনও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি'।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর পুজোয় ফেরার বার্তা অমানবিক বললেও কম বলা হয়। আজকের ওয়ানলাইনার কিন্তু এটাই। সুপ্রিম শুনানির জিস্ট এই মন্তব্যের কাছে একেবারেই ফিকে। একজন মহিলা হয়ে এমন একটি স্টেটমেন্ট তিনি অবলীলায় দেন কী করে? মানুষ কি করবে, তার ভাবনা মানুষকে ভাবতে দিন দয়া করে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী! রাজ্য সরকার কী বুঝতে পারছেন না, এক মাস ধরে যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন চলছে, তা লোকদেখানো বা রাজনৈতিক মদতপুষ্ট নয়? পুজো সময়মতোই হবে, মা দূর্গা অসুর নাশ করতে আসেন। সমাজের যত কলুষিত ব্যাপার ধুয়ে মুছে সাফ করা হয় তাঁর আগমনবার্তায়। তা বলে এই আবহে পুজোয় ফেরার বার্তা? এবারের পুজো তো হবে বিচার চাওয়ার মোক্ষম সময়। গোটা রাজ্য তথা পৃথিবীর বাঙালিরা এই জঘন্য অপরাধ ও সেটা ধামাচাপা দেওয়ার যে কলঙ্কিত পর্ব, তার বিরুদ্ধে মা দুর্গার কাছে আবেদন জানাবে। পুজোর আনন্দ তো কারও থাকবেনা। পুজো হবে। মন্ডপেও সবাই যাবে, সমবেত হবে আরও একবার, অন্যভাবে প্রতিবাদে সামিল হতে। মুখ্যমন্ত্রী, আপনি কি সেটা আদৌ বুঝতে পারছেন? উৎসব এবার হবেনা। হবেইনা। দেখে নেবেন আপনি।
Comments