জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মতো মঙ্গলবার বিকেলেই কলকাতা পাচ্ছে নতুন পুলিশ কমিশনার
কলকাতা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪: জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের সেই দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল চারটে পর্যন্ত কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে থাকবেন বিনীত। তারপর নয়া পুলিশ কমিশনার পাবে কলকাতা।
বিক্ষোভস্থলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ডাক্তারদের প্রতিনিধি দেবাশিস হালদার বলেন, “আন্দোলনকারীদের কাছে নতস্বীকার করল রাজ্য সরকার। ৩৮ দিন পর আমাদের জয়। এই জয় সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক, নার্স সকলের। সবাই মিলে পাশে না থাকলে এই জয় সম্ভব ছিল না। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।” তিনি আরও বলেন, “আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত ধর্না বিক্ষোভ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেব। সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর আমরা আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেব।”
দীর্ঘ বৈঠক এবং মিনিটস পর্ব শেষে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। আর কী করব! জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে আবেদন করেছি। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি হচ্ছে। এই অবস্থায় ওঁরা কাজে ফিরুন। আবেদন করেছি।’’ শুধু বিনীত নন, জুনিয়র ডাক্তাররা যাঁদের যাঁদের সরানোর দাবি তুলেছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরানো হয়েছে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) অভিষেক গুপ্তাকেও। শুধুমাত্র রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে নিজের পদে রেখেছেন। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করেননি।
সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামিকাল বিকেল ৪টের পর সিপি পদে বদল আনব। নতুন সিপি-কে দায়িত্বভার বিনীত (গোয়েল) দেবে। যত ক্ষণ না আদালতে মামলার শুনানি হচ্ছে, তত ক্ষণ এই রদবদল হবে না। পুলিশে আরও কিছু রদবদল হবে। সেটা মুখ্যসচিব বিকেলের পর ৪টের পর জানিয়ে দেবেন নোটিস দিয়ে।’’ মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে এ-ও জানিয়েছেন, বিনীত গোয়েল একটি পদে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁকে ওই পদেরই দায়িত্বে আনা হচ্ছে।"
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ফেরার পথে ডাক্তারদের এক প্রতিনিধি জানান, প্রিন্সিপাল স্বাস্থ্য সচিবকে সরানোর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে নিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা জানিয়েছেন তিনি। ডাক্তারদের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, শুধু মাত্র টাস্ক ফোর্স গঠন করে এই সমস্যার সমাধান হবে না। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি, থ্রেট কালচার তৈরি হয়েছে তা সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই মমতা বলেন, "জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ৪২ জন সই করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মিনিটসে্ সই করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি চিকিৎসকেরা এসেছেন বলে। আমরা খুশি, তাঁরাও খুশি। ওঁরা বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন। সেই সুযোগ দিয়েছি। আমরাও আমাদের বক্তব্য রেখেছি।"
ডাক্তারদের তরফে আশফাকুল্লা নাইয়া জানান, "পুলিশ কমিশনারের বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার পদত্যাগের বিষয়ে রাজি হয়েছেন। তবে তবে স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ নিয়ে এখনো সমস্যা রয়েছে।’ কর্মবিরতি তোলা নিয়ে কিছু বলেননি চিকিৎসকরা।কয়েকটি দাবিতে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে বিস্তারিত তাঁরা ধরনামঞ্চে গিয়েই বলবেন।"
প্রসঙ্গত সোমবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকের ডাক পেয়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তরেরা। বেশ কয়েকটি চিঠি চালাচালির পর সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে পোঁছন তাঁরা। মিটিংয়য়ের কার্যবিবরণী বা মিনিটসে দুপক্ষের সই থাকবে বলে জানানো হয়েছিল। জুনিয়র ডাক্তারেরা দুজন স্টেনোগ্রাফার নিয়ে যান নিজেদের পক্ষ থেকে। সকলে সই করার পর সেটা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিকেল ৫টায় বৈঠকের সময় নির্ধারিত হয়। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় বৈঠক। রাত পৌনে ন’টা নাগাদ শেষ হয় বৈঠক। তারও পরে মিনিটস লেখার কাজ সম্পন্ন হলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১২টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরোন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
Comments