চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভ দমনে লাঠি, লাথি! ছিঃ
- The Conveyor
- Apr 9
- 2 min read

কলকাতা, ৯ এপ্রিল, ২০২৫: শুধু লাঠিপেটাই নয়, লাথিও খেলেন শিক্ষকেরা! একদিকে চাকরি যাওয়ার যন্ত্রণা, অন্যদিকে সেকথা জানাতে গিয়ে পুলিশের লাঠির মুখে চাকরিহারা শিক্ষকরা। অভিযোগ, পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পালটা পুলিশের তরফে দাবি করা হয়, বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে একাধিক পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন।
উল্লেখ্য, আজ যে রাজ্যজুড়ে জেলায় জেলায় ডিআই অফিস অভিযান ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে, সেকথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন এসএসসি-র ২০১৬ সালের বাতিল হওয়া প্যানেলে থাকা শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীরা। সেই মতোই বিভিন্ন এলাকায় ডিআই অফিসের উদ্দেশে অভিযান শুরু করেন চাকরিহারারা। কসবায় ডিআই অফিসের গেট ভেঙে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা৷ পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি৷ পাল্টা শিক্ষকদের উপরে বেদম লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ পরবর্তীতে, চাকারিহারা ও পুলিশের মধ্য়ে রীতিমতো সংঘর্ষ বেধে যায় বিভিন্ন জায়গায়। রাজ্য়ের নানা প্রান্ত থেকে অশান্তির খবর আসতে থাকে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁরা গণতান্ত্রিক পথে শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় তাঁদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। অন্যদিকে, পুলিশের অভিযোগ - তারা মোটেও আগে লাঠিচার্জ করেনি। বিক্ষোভকারীরাই প্রথমে হামলা চালিয়েছেন। তা প্রতিহত করতেই নাকি হালকা লাঠি চালাতে হয়েছে।
দু'পক্ষের এই দাবি ও পালটা দাবির মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। নিন্দা শুরু হয় সব মহলে। সূত্রের দাবি - বিষয়টি নবান্নও ভালো চোখে দেখছে না। স্কুল শিক্ষকদের উপরে লাঠিচার্জের ঘটনাও রাজ্য সরকার সমর্থন করে না বলে জানালেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ৷ তবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করার জন্যই পুলিশ বাধ্য হয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যসচিব৷ একই দাবি করেছেন কলকাতার নগরপাল মনোজ ভার্মাও৷
বুধবার চাকরি ফেরানোর দাবিতে এবং ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার ওমএমআর শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশের দাবিতে জেলায় জেলায় ডিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।
এদিকে আজ দুপুরে ১টা ২০ নাগাদ রাজ্যের প্রত্যেক পুলিশ সুপারের উদ্দেশে কড়া নির্দেশিকা জারি করলেন রাজ্যের এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। তিনি তাঁর বার্তায় অত্যন্ত কঠোরভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও পরিস্থিতিতেই চাকরিহারা শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জ করা যাবে না। যদি কোথাও আন্দোলন, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ হয়, তাহলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে একেবারে শান্তিপূর্ণভাবেই সমস্য়ার সমাধান করতে হবে।
চাকরিহারাদের দাবি ছিল, স্কুল পরিদর্শককে দেখা করতে হবে। তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন চাকরিহারারা। কিন্তু অফিসে ছিলেন না স্কুল পরিদর্শক।
অপরদিকে বুধবার ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ঘটনায় ‘বিজেপি-সিপিএমের যৌথ ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে রাস্তায় নামল তৃণমূলের ছাত্র-যুব সংগঠন। কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল হল। কসবায় স্কুল পরিদর্শকের দফতরের সামনের ঘটনার পর চাকরিহারাদের ‘ধৈর্য’ ধরার আবেদন করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁদের ‘সংযত’ হতে বললেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও। ব্রাত্য জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই তাঁর নেতৃত্বে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে চাকরিহারাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এক দিকে বৈঠক, অন্য দিকে ধ্বংসাত্মক আন্দোলন, দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না।’’ রাজ্য সরকার মানবিক ভাবে চাকরিহারাদের পাশে রয়েছে জানিয়ে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি।’’
সরকারের তরফে ‘যোগ্য’ চাকরিহারা প্রার্থীদের ‘বিভ্রান্ত’ করা হচ্ছে। বিভ্রান্ত না হয়ে লড়াই করতে যাওয়ার জন্যেই তাঁদের লাঠিপেটা করা হয়েছে বলে দাবি সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের। বুধবার বিকাশ বলেন, ‘এখানে যোগ্য-অযোগ্যের বিষয় নেই। সবাই দুর্নীতির শিকার।’
Comments