top of page

চাকরিহারা শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ নিয়ে নিজেদের পক্ষে সাফাই পুলিশ কর্তাদের




কলকাতা, ১৬ মে, ২০২৫: বিকাশভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলন ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে যায় বৃহস্পতিবার রাতে। চাকরিহারা শিক্ষকদের দফায় দফায় বিক্ষোভে উত্তাল হয় বিকাশ ভবন চত্বর। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। বিকাশ ভবনের সামনে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়েছিল, কেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়েছিল, সাংবাদিক বৈঠক করে বিশদে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার। বৈঠকে রাজ্যের এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিমও।

সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশের তরফে জানানো হয়, ‘সাত ঘণ্টা ধৈর্য ধরেছিল পুলিশ, কিন্তু আন্দোলনকারীরা সরেননি’। একইসঙ্গে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা দশদিন ধরে রোটেশন করে শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করছেন। পুলিশ কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। গতকাল তাঁরা ব‍্যারিকেড ভাঙে। জোর করে গেট ভেঙে বিকাশ ভবন চত্বরে ঢুকে পড়েন। পুলিশের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করতে বলা হয়েছিল। পুলিশ সচেতন ভাবে কিছু করেনি। পুলিশ ধৈর্য দেখিয়েছে। পুলিশ বল প্রয়োগ করেনি। তারা চাকরি হারিয়েছে তাই বারবারই পুলিশ তাঁদের বুঝিয়েছে। আন্দোলনকারীদের পুলিশ বলেছিল এখানে সরকারি কর্মচারীরা বাড়িতে ফিরতে চাইছেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। যার ফলে ভিতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বহু সরকারি কর্মী। অনেকের বাড়িতে অসুস্থ মা, বাচ্চা রয়েছে, তাঁরা বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন। এক তরুণী বাধ‍্য হয়ে ঝাঁপ দেন। তাঁর পা ভেঙেছে।”

জাভেদ শামিমের স্পষ্ট বার্তা, চাকরি যাওয়ার বিষয় নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না। কিন্তু, চাকরিহারা যে কষ্টে রয়েছেন, সেটা বুঝতে তাঁদের অন্তত কোনও অসুবিধা হয় না। তিনি বলেন, 'পুলিশ চাকরিহারাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সেই কারণেই আন্দোলনে কখনওই কোনও বাধা দেওয়া হয়নি।' তিনি বলেন, 'পুলিশ প্রোঅ‍্যাকটিভ হয়েছে রাত আটটার পর। অফিস ছুটির দু'ঘণ্টা পর। আমাদের আন্দোলন ভেস্তে দেওয়ার কোনও লক্ষ‍্য নেই। আজও (আন্দোলন) করছেন। আইন মেনে করুন।'

এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার বলেন, 'আমরা অনুরোধ করি শান্তিপূর্ণ অবস্থান করুন। যাঁরা আটকে আছেন তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হোক। মাইকিং করা হয় সেই মর্মে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতে কর্ণপাত করেননি। সাত ঘণ্টা পরে এই ধরনের আন্দোলন গণতান্ত্রিক থাকতে পারে না। যখন ভেতরের সরকারি কর্মচারীদের বার করার কাজ শুরু হল তখন বোতল ইট ছুঁড়ে দিল। তারপরই পুলিশের তরফে বল প্রয়োগ করা হয়েছে। আইন এবং অধিকার সকলের জন‍্য। তাই আইন ও অধিকার সকলের মানা উচিত।'

উল্লেখ্য, গতকাল দুপুর থেকে বিক্ষোভ চলার পর সন্ধ‍্যেয় মারাত্মক আকার ধারণ করে আন্দোলন। পুলিশকে ‘গো ব‍্যাক’ স্লোগান দেয় আন্দোলনকারীরা। বিকাশ ভবনের শতাধিক কর্মী ভিতরে আটকে ছিলেন। এক পর্যায়ে মূল ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায়। তৃণমূল নেতা তথা বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বিকাশ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে। সব্যসাচীর গাড়ির সামনে অনেকে শুয়ে পড়েছিলেন। রাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে বিক্ষোভকারীদের অনেকেই আহত হয়েছেন। অভিযোগ, কারও মাথা ফেটে গিয়েছে, কারও পায়ে আঘাত লেগেছে। বিকাশ ভবনের সামনে আজও অবস্থান বিক্ষোভ জারি রেখেছেন চাকরিহারা 'যোগ্য' শিক্ষক শিক্ষিকারা।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়। বারে বারে বলপ্রয়োগ করে এইভাবে আন্দোলনের মুখ বন্ধ করার এই প্রয়াস কেন? কেন অন্য উপায় অবলম্বন করে সুরাহা করা হচ্ছেনা? অন্য কি উপায়ে আন্দোলনের সমাধান সম্ভব, তা তো পুলিশ মহলই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এভাবে চাকরিহারা শিক্ষকদের ওপর জুলুম করার প্রবণতা মোটেও ঠিক কাজ হচ্ছেনা, সে পুলিশ যতই নিজেদের করব্যের দোহাই দিক না কেন।



এদিকে আজ শুক্রবার রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আপাতত ২৫ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘভাতা দিয়ে দিতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে সকল কর্মচারীকে এই পরিমাণ ডিএ দিতে বলা হয়েছে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এ কথা জানিয়েছে। আগামী অগস্ট মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

 
 
 

Comments

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating

Top Stories

প্রতিদিনের খবর এবং বিভিন্ন ফিচার ভিত্তিক লেখা, যেখানে খবরের সত্যতা তথা লেখনীর উৎকৃষ্টতা প্রাধান্য পায়। ফিচার ছাড়াও যে কোনও রকম লেখনী শুধুমাত্র উৎকৃষ্টতার নিরিখে গুরুত্ব পাবে এই সাইটে

Thanks for subscribing!

  • Whatsapp
  • Youtube
  • Instagram
  • Facebook
  • Twitter

The Conveyor

bottom of page