গ্রেফতার সন্দেশখালির মূল আলোচ্য অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান

কলকাতা, ২৯ ফেব্রুয়ারি: গ্রেফতার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। এই বিষয় নিয়ে ক'দিন আগেই নিজের যুক্তি খাড়া করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আদালত যদিও পর্যবেক্ষণ করে, পুলিশ শাহজাহানকে ধরতেই পারে। তারপরেই এই সাফল্য পুলিশের। গত ৫ জানুয়ারি থেকে সর্বাধিক আলোচিত এই তৃণমূল নেতাকে মিনাখাঁ থানার বামুনপুকুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বসিরহাট মহকুমা আদালতে শাহজাহানকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ। আদালত তাকে ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। এ দিকে এই খবর সন্দেশখালিতে পৌঁছতেই উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা। একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান মহিলারা।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। কয়েকদিন পরই সন্দেশখালিতে শাহজাহান, তার ঘনিষ্ঠ শিবু, উত্তমদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়। মারধর, হুমকি, অত্যাচার, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনায় সরাসরি যুক্ত ছিল শাহজাহান বাহিনী, এমনটাই অভিযোগ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। উত্তম এবং শিবুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অজিত মাইতিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে শাহজাহান এতদিন অধরা ছিল।
শাহজাহানের গ্রেফতারির জন্য পরোক্ষে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কৃতিত্ব দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘আদালতের বাধা ছিল, পুলিশ কাজ করতে পারেনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে আদালত বাধা সরিয়েছে। পুলিশ যা করার করেছে।" অপরদিকে শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির কৃতিত্ব নিজের দলকে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপি এবং সন্দেশখালির মহিলাদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, "সরকার অস্বীকার করছিল। এমনকি তারা স্বীকারও করছিল না যে এরকম কিছু ঘটেছে। আমি আগেই বলেছি যে আমরা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে সরকারকে বাধ্য করব।" পাশাপাশি বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাটে পৌঁছেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং বসিরহাটের প্রাক্তন বাম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। বেলায় ন্যাজাটেই সভা করবে বামফ্রন্ট। সেখানেই সেলিম শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বলেন, “তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা, জমি লুঠেরা শাহজাহানকে মানুষের চাপে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।"
বুধবার বেশি রাতে মিনাখাঁ থানার বামনপুকুর থেকে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। তার পরেই বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। সেই বৈঠকেই নিরাপদ সর্দারের এফআইআরে তারিখ ভুল কবুল করলেন এডিজি সুপ্রতিম। সরকারি কাগজে সিপিএম নেতা নিরাপদ সর্দারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল ৯ ফেব্রুয়ারি। আর যে অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের হয়, তা থানায় জমা পড়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের জামিনের মামলায় মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে ‘ভর্ৎসিত’ হতে হয়েছিল সন্দেশখালি থানার পুলিশকে। অভিযোগ দায়েরের আগের দিন কী ভাবে এফআইআর করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আদালত। ‘অনিচ্ছাকৃত’ ত্রুটির কথা জানিয়ে এডিজি এ-ও বললেন যে, সেই ভুলের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে। আদালতে তা পেশ করা হবে। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট অফিসারদের থেকে এ বিষয়ে বিভাগীয় রিপোর্টও তলব করা হয়েছে।
Comments