কাটল না জট, হলনা বৈঠক, সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠনগুলিও নামতে পারে আন্দোলনে: বার্তা রাজ্যকে
কলকাতা, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪: রাত জেগে ধর্নায় বসা আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা রাত তিনটে বেজে ৪৯ মিনিটে বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে একটি মেল করেন। সেই মেলে বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়। স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে এখনও ধর্নায় বসে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দফায় দফায় ইমেল চালাচালি হয়েছে নবান্ন ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে। কিন্তু বৈঠক নিয়ে জট এখনও কাটেনি।
আন্দোলনরত ডাক্তারদের বুধবার দুপুরে পাল্টা ই-মেল পাঠায় নবান্ন। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ মেল করে ডাক্তারদের জানিয়েলেন, এ দিন সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনায় বসতে আগ্রহী সরকার। কিন্তু সেই বৈঠকেও আন্দোলনকারীদের দাবি মানার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি, ফলে জুনিয়ার চিকিৎসকরা বৈঠক করতে গেলেন না আজও।
সর্বশেষ ইমেলে জুনিয়র ডাক্তারেরা মূলত চারটি শর্ত দিয়েছিল। প্রথমত, অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদল থাকবে বৈঠকে। দ্বিতীয়ত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তার লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, আন্দোলনকারীরা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন আগে, সেই দাবিগুলির উপরেই বৈঠকে আলোচনা হতে হবে। চতুর্থত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, এই শর্তগুলি মেনে নিলে, তাঁরা বৈঠকে বসতে রাজি। ডাক্তারদের এই দাবির পর ফের নবান্ন থেকে একটি মেল পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব মেল পাঠিয়ে ডাক্তারদের জানান, সন্ধ্যে ৬টায় নবান্নে বৈঠকে বসতে আগ্রহী সরকার। তবে ৩০ নয়, ১২ থেকে ১৫ জনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সরকার কথা বলতে চায়।
জুনিয়র ডাক্তাররা যে চার দফা শর্ত দেন, তা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের বক্তব্য, এরকম শর্ত চাপিয়ে খোলা মনে আলোচনা করা হয়েছে। পালটা জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, বৈঠকে ১০ জন যেতে পারবেন বলে প্রথমে তো রাজ্যই শর্ত চাপিয়ে দেয়। পশ্চিমবঙ্গে মোট ২৬টি মেডিক্যাল কলেজ আছে। সেখান থেকে তো কমপক্ষে একজনকে যেতে দিতে হবে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে মেল এসেছে রাত ৩ টে ৪৯ মিনিটে। কখনও এরকম সময় মেল আসে? সেটা স্বাভাবিক? তার মানে এর পিছনে রাজনীতি আছে? জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে রাজনীতি যুক্ত আছে। আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের বিচার তাহলে লক্ষ্য নয়? রাজনৈতিক বিষয় আছে? জুনিয়র ডাক্তারদের থেকে বলব যে রাজনৈতিক প্ররোচনায় পা দেবেন না। অন্যদিকে, রাজ্য পুলিশের ডিজি জানিয়েছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। তাঁরা কাজে ফিরলেই সেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন। সন্ধ্যা ৭ টা ১৩ মিনিটে মুখ্যসচিব মনোজ পন্ত জানালেন, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। আমরা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। আজ যে মেল পেয়েছি, তাতে মনে হয়েছে যে কোনও শর্ত রেখে আলোচনা করা যায় না। খোলামেলা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ওদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
নবান্নে মুখ্যসচিব এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পরেই জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে কিঞ্জল নন্দ প্রতিক্রিয়া জানালেন তাঁদের সল্টলেকের ধর্নাস্থল থেকে। তিনি বললেন, ‘‘এই আন্দোলনে কোনও রাজনীতির রঙ নেই।’’ তাঁদের চার দফা শর্ত মানলে আলোচনায় যোগ দিতে কোনও আপত্তি নেই বলেও জানান কিঞ্জল।
ফলে জটিলতা কাটার বদলে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মধ্যে চলতে থাকা স্নায়ুর লড়াই আরও জটিল হল বলেই মনে করা হচ্ছে৷ এবার রাজ্যকে সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠনগুলি দিল বার্তা। কাজে ফেরা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিক্ষোভরত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দেশ জুড়ে ফের আন্দোলনে নামতে পারে তারা। ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (FORDA) এবং অল ইন্ডিয়া রেসিডেন্টস অ্যান্ড জুনিয়র ডক্টরস জয়েন্ট অ্যাসোসিয়েশন ফোরাম (AIJAF)-এর বক্তব্য, জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে রোগী মৃত্যুর যে হিসেব সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া হয়েছে ভুল। চিকিৎসক সংগঠন দু’টির অভিযোগ, চিকিৎসকদের কাজে ফেরাতে যেভাবে পরোক্ষ চাপ দেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত সব রাজ্যের রেসিডেন্ট ডক্টরস-রা বৈঠক ডাকতে চলেছে। এই বৈঠকেই ঠিক হবে পরবর্তী কর্মসূচি।
এদিকে আরজি কর ঘটনার প্রেক্ষিতে বিবেক জাগরণ যাত্রায় প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি যে পথে নামবেন সে কথা আগেই জান গিয়েছিল। ভাঙা হাতেই সিমলা স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পর্যন্ত মিছিলে সামিল অভিনেতা। হাতে প্লাস্টার , কিছু দিন আগে পর্যন্ত যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। যদিও তিনি এখন শুধু অভিনেতা নন বিজেপি নেতাও বটে। তবে আরজি কর আন্দোলনের ক্ষেত্রে রাজনীতির রঙ লাগাতে নারাজ তিনি।
Commentaires