উৎক্ষেপণ করা হল রুশ মহাকাশযান 'লুনা ২৫', লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ
১১ অগাস্ট: উৎক্ষেপণ করা হল লুনা-২৫। রুশ মহাকাশযান 'লুনা ২৫'-এর লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গিয়ে অবতরণ করা। শুক্রবার সকালে পূর্ব রাশিয়ার ভসথোচ্নি উৎক্ষেপণকেন্দ্র থেকে লুনা-২৫ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ইসরোর তরফে এক টুইট বার্তায় রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস-কে অভিনন্দন জানানো হয়। লেখা হয়, আমাদের মহাকাশ যাত্রায় আরও একটি মিটিং পয়েন্ট পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। চন্দ্রযান ৩ এবং লুনা ২৫ যাতে তাদের লক্ষ্য পূরণে সফল হয়। ভারতের চন্দ্রযান ৩-কে কড়া টক্কর দেবে রাশিয়ার লুনা ২৫। উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের পর এই প্রথম চাঁদের উদ্দেশে মহাকাশযান পাঠাল রাশিয়া।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৩ অগস্ট চাঁদের মাটিতে নামবে লুনা-২৫-এর ল্যান্ডার। উৎক্ষেপণের পাঁচ দিনের মধ্যে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছবে লুনা-২৫। তার পর চাঁদের কক্ষপথ ধরে পৃথিবীর উপগ্রহের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি পৌঁছতে আরও পাঁচ থেকে সাত দিন সময় নেবে। অর্থাৎ মাত্র ১২ দিনে চাঁদে পৌঁছবে রুশ ল্যান্ডার। এই আবহে মনে করা হচ্ছে, ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর কিছু আগেই এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখতে পারে। ফলে চাঁদকে কেন্দ্র করে ভারত বনাম রাশিয়ার টক্কর দেখতে চলেছে বিশ্ব।
ইসরোর পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২৩ অগস্ট বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতরে নিয়ে ‘পাখির পালকের মতো অবতরণ’ (সফট ল্যান্ডিং) করার কথা চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রমের। অর্থাৎ, লুনা-২৫ এবং চন্দ্রযান-৩-এর চাঁদে নামার সময় প্রায় একই। কাজেই প্রথম দেশ হিসেবে কে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে আগ্রহ। ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান-৩ কিছু ছবি পাঠিয়েছে। তা ইসরো আগেও প্রকাশ করেছে। গতকালও তারা দুটি ছবি পোষ্ট করেছে ইসরোর ট্যুইটার হ্যান্ডেলে।
রাশিয়া অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, ল্যান্ডিংয়ের সময় প্রায় একই হওয়া সত্ত্বেও ভারতের চন্দ্র অভিযানের পথে রুশ ল্যান্ডার কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না। চন্দ্রযান-৩ এবং লুনা-২৫-এর একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ারও কোনও আশঙ্কা নেই।
কিন্তু এত কম সময়ে কীভাবে রাশিয়ার চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছুঁতে সক্ষম হবে? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে। চন্দ্র অভিযানের ক্ষেত্রে ভারত এবং রাশিয়ার মূল ফারাক প্রযুক্তিতে। কম খরচে অপেক্ষাকৃত বেশি পথ ঘুরে ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদে পৌঁছবে। রাশিয়ার প্রযুক্তি অনেক উন্নত এবং বেশি খরচসাপেক্ষ। কম জ্বালানি খরচ করে মাধ্যাকর্ষণের শক্তির মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে ইসরো। সেই কারণেই অভিযানে এত বেশি সময় লাগছে। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রমের ওজন ১,৭৫২ কেজি। রুশ ল্যান্ডারের ওজন মাত্র ৮০০ কেজি। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমে চন্দ্রযান-৩ গবেষণার জন্য নানা তথ্য সংগ্রহ করবে ১৪ দিন ধরে। রুশ ল্যান্ডার চাঁদে থাকবে অন্তত এক বছর। লুনা-২৫-এর ভর ১.৮ টন। পেটের মধ্যে ৩১ কেজি ওজনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বহন করছে এই ল্যান্ডার। চাঁদের মাটির অন্তত ৬ ইঞ্চি গভীর থেকে পাথুরে উপাদান সংগ্রহ করবে লুনা-২৫।
Comments