আসছে নতুন করে সেজে ওঠার সময়
গরমটা বেশ ভালোই পড়েছে। ৩৫ ডিগ্রির চেয়ে বেশিই চলছে কয়েকদিন ধরে। আরও কিছুদিন চলবে এমনটাই পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। আসলে চৈত্রের এই প্রখর তাপ বোধহয় এখন এই সময়ে দাঁড়িয়ে কিছুটা অসহনীয় মনে হয়। কিন্তু এই সময়ে এমনটাই তো হওয়ার কথা। তবে বৃষ্টি একটু না হলেই নয়, তাও ঠিক। আসলে এই লেখা বা লিখতে বসা একটু অন্য রকম। নতুন এই বিভাগ শুরু করেছি আমি শুধুমাত্র রবিবারের জন্য। তাই আমার পরিচিত জায়গা থেকে বেরিয়ে একটু গল্পের ছলে কিছু কথা লিখব এই বিভাগে। বলতে পারেন নিজস্ব কিছু চিন্তা ভাবনা, নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতা, কিছুটা অতীতচারণও করতে ইচ্ছে হয়েছে এই বিভাগে, যা আমি অন্যান্য জায়গায় করিনা। এমনভাবে বলব, যা সকলেই বুঝবে।
এই সময়টা আমাদের ছোটবেলায় ছিল বাড়ির বইপত্তর, খুচরো জিনিস রোদে দিয়ে ঝরঝরে করে নেবার সময়। সামনেই আসছে পয়লা বৈশাখ। নতুন বছরে আমরা যেমন সেজে উঠব, তেমন বাড়ির অবহেলিত জিনিসপত্তরগুলিও ঝাড়পোঁছ করে সেজে উঠত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে। আরও এক বছর নিজ জায়গায় সঠিকভাবে রয়ে যাবার রসদ সংগ্রহ করে নিতে তারা এই সময়েই। মা ছিলেন এই সব ব্যাপারে যথেষ্ট বিচক্ষণ। বাড়ির কোনও জিনিসের অবহেলা করতে দেখিনি তাঁকে। প্রতিটা জিনিস তার নিজ নিজ মহিমায় যেন টিকে থাকতে পারে সেদিকে মায়ের দৃষ্টি ছিল সজাগ। তো এই প্রখর রোদ আমাদের ছেলেবেলায় কাজে লাগাতে দেখেছি মাকে।
বাড়ির চাদর- পর্দা কেচে নতুন বা পরিষ্কার ভাবে সেজে উঠত বাড়ি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে। সঙ্গের ছিল মায়ের নতুন জামা বানানোর তাগিদ। বিশেষ করে আমারই এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার, বলা ভালো একাধিপত্য ছিল। কারণ মেয়েদের পোশাক বিভিন্ন রকমভাবে সেলাই করে নিজের মেয়েকে সাজাতে মা যথেষ্ট ভালোবাসতেন। তবে এমনটা নয় যে শুধুই জামা বানিয়েই মা নিশ্চিন্ত হতেন, তাতে নিজের মত করে এম্ব্রয়ডারি করাও ছিল তাঁর নিজস্ব সৃষ্টিশীলতার একটি অন্যতম গুণ। তো, এই সময় মানেই ছিল নতুন ভাবে সেজে ওঠার একটা সময়।
বর্তমানে আমার তেমনভাবে কাজকর্ম না থাকলেও চেষ্টা থাকে সেই নতুনভাবে চারদিক সাজিয়ে তোলার আঘ্রানটা যেন রাখতে পারি। সব কিছু নতুন হতেই হবে, এমনটা আমিও মানিনা, কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের মনকে একটা আলাদা প্রশান্তি দেয়, যেটা আমি আগেও উপলব্ধি করতাম এবং এখনও করি। তাই কিছু নতুন জিনিসের আগমন ঘটার পাশাপাশি বাড়ির সবকিছু পরিচ্ছন্ন হয়ে সেজে ওঠে, যা মনকে আরাম দেয় এবং নতুনভাবে সবকিছু শুরু হবে পাশাপাশি সবকিছু ভালো হবে এমন একটা পজিটিভ এনার্জি দেয় মনকে, যা এই ঠা -ঠা রোদ্দুরকেও যেন স্বাগত জানাতে পারে যাতে রোদের তেজ দিয়ে সব খারাপ মুছে যাওয়ার একটা বিশ্বাস তৈরি করতে পারে।
স্বর্ণালী গোস্বামী
Comments