আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পেশ শুরু আজ শুক্রবার থেকে
কলকাতা, ৯ জুন: রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বেজে গেল। আগামী ৮ জুলাই রাজ্যের ২২টি জেলায় নির্বাচন হবে এক দফাতেই। এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন নয়া রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে মনোনয়ন পেশ। রবিবার ছাড়া প্রত্যেক দিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। ১৫ জুন পর্যন্ত চলবে মনোনয়ন পর্ব। অনলাইনে মনোনয়ন নেওয়া হবে না- এমনই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দিনক্ষণ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে চালু হয়ে গিয়েছে আদর্শ আচরণবিধি। ফলে নিয়ম অনুযায়ী রাত ১০টা থেকে সকাল ৮ পর্যন্ত মিটিং মিছিল করা যাবে না। শুরু হয়ে গিয়েছে দেওয়াল লিখন। ১৭ জুন স্ক্রুটিনির তারিখ ধার্য করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা যাবে ২০ জুন পর্যন্ত। আজ, শুক্রবার প্রত্যেক জেলাশাসকের সঙ্গে নির্বাচনী ইস্যুতে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন নির্বাচন কমিশনার।
রাজ্যের প্রায় ৭৩ হাজার আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য হাতে রয়েছে মাত্র ৬ দিন। সূত্রের খবর, মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা বা অশান্তির ঘটনা না ঘটে, তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করছে নির্বাচন কমিশন৷ জানানো হয়েছে, পঞ্চায়েত অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ১০০ মিটারের মধ্যে শুধুমাত্র একটি গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে৷ মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীর সঙ্গে শুধুমাত্র দুজন থাকতে পারবে। নিয়ম সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য প্রত্যেকটি জায়গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকরা নজরদারি করবেন।
এদিকে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রায় একই দাবিতে শুক্রবার বিজেপি এবং কংগ্রেস কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করল। বিজেপির আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শুক্রবারেই দুপুরে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
মোট ৫টি দাবি নিয়ে আবেদনকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
১. মনোনয়ন জমা দেওয়ার অত্যন্ত কম সময়, যা সম্পন্ন করতে গেলে যে কোনও সময়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। মোট নির্বাচনী ক্ষেত্র দেখলে প্রতি কেন্দ্রে মনোনয়নের জন্য মাত্র ৩৯ সেকেন্ড সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রশ্ন, এই সময়ের মধ্যে এত প্রার্থী কী ভাবে মনোনয়ন জমা দেবেন?
২. এতদিনের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন ঘোষণার আগে কোনও সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়নি। বৈঠক না ডেকেই তড়িঘড়ি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। যেটা অনুচিত।
৩. ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের উদাহরণ দিয়ে আবেদনকারীরা বলছেন, সে সময় প্রচুর আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি প্রার্থীরা। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. সুষ্ঠু এবং অবাধ ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার আর্জি জানিয়েছেন আবেদনকারীরা। সব বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্যও আর্জি জানানো হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, নির্বিঘ্নে এক দফায় গোটা রাজ্যে ভোট করাতে হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন। অতীতে এ রাজ্যে সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোট করাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু এবারে নির্বাচন কমিশনার শুধুমাত্র রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা রেখেছেন।
৫. শুধুমাত্র জেলার নির্বাচন পরিচালনার কেন্দ্রীয় অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিস ছাড়াও অন্যত্র এই ব্যবস্থা করা হোক। মনোনয়ন জমা দিতে সমস্যা হলে জেলা বিচারক বা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক, এমন আর্জি জানিয়েছেন আবেদনকারীরা।
Comments