আগামীকাল গণনা কেন্দ্রের জন্য কমিশনের তরফে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জারি কেন্দ্রে প্রবেশের নিয়ম
কলকাতা, ৩ জুন, ২০২৪: মহাযজ্ঞের অবসান হতে চলেছে রাত পোহালেই। তবে তার আয়োজনও নেহাৎ কম নয়। রাজ্য জুড়ে মোট ৫৫ টি গণনা কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের গণনা করা হবে। এই ৫৫ টি গণনা কেন্দ্রের জন্য ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে কমিশন। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্যে গণনার কাজে থাকছেন ২৫ হাজার কর্মী। গণনাকেন্দ্রে প্রবেশের নিয়ম কী কী, তাও জানিয়েছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর। গণনা কেন্দ্রের বাইরে ২০০ মিটার পর্যন্ত জারি থাকছে ১৪৪ ধারা।
সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ২৩ রাউন্ড গণনা হবে শীতলখুচিতে। সবচেয়ে কম গণনা হবে চোপড়ায়। সেখানে ৯ রাউন্ড গণনা হবে। গণনাকেন্দ্রের মধ্যে কোনও অস্থায়ী এবং চুক্তিভিক্তিক কর্মী থাকতে পারবেন না। গণনাকেন্দ্রের টেবিলে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, পার্শ্বশিক্ষক, সিভিক ভলান্টিয়ার বা ওই জাতীয় কোনও অস্থায়ী কর্মীকে রাখা যাবে না। স্ট্রং রুমপিছু তিন সেকশন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ২৮ জন পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবে।
গণনাকেন্দ্রের ঢোকার আগে থেকেই শুরু হচ্ছে কড়া নিরাপত্তার বলয়। সেটা ভাগ করা হয়েছে দুটি বেষ্টনীতে। একেবারে সামনের বেষ্টনীতে থাকবে স্থানীয় পুলিশ এবং প্রশাসনের একাংশ। সেখানে কোনও গাড়ি রাখা যাবে না। ওই বেষ্টনী পেরিয়ে ১০০ মিটার দূরে থাকবে সশস্ত্র পুলিশ। সেখানে মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। তারপর শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় বেষ্টনী। ওখানে থাকছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের থাকার জায়গা। সেই বেষ্টনীর কাছে নির্দিষ্ট একটি জায়গা থাকবে মোবাইল রাখার জন্য। কাউন্টিং এজেন্ট এবং গণনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট কয়েক জন কাউন্টিং সেন্টারে ঢুকবেন। সেখানে স্থানীয় পুলিশের কেউ থাকতে পারবে না। পাহারায় শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। পাশাপাশি গণনাকেন্দ্রের মধ্যে কোন রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা কোথায় বসতে পারবেন, সেটাও জানিয়েছে কমিশন। গণনাকেন্দ্রের নির্দিষ্ট বসার জায়গায় একেবারে সামনের সারিতে বসবেন জাতীয় রাজনৈতিক দলের এজেন্ট। পরের সারিতে বসবেন আঞ্চলিক দলগুলির এজেন্টরা। একেবারে পিছনের সারিতে বসবেন নির্দল প্রার্থীদের এজেন্ট।
কমিশন জানিয়েছে, গণনা কেন্দ্রে প্রতি বিধানসভা পিছু একজন করে পর্যবেক্ষক থাকবেন। গণনাকর্মীর পাশাপাশি কাউন্টিং হলে প্রবেশ করতে পারবেন প্রার্থী। এ ছাড়া প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, কাউন্টিং এজেন্ট, কমিশন নিযুক্ত পর্যবেক্ষক, রিটার্নিং অফিসার থাকবেন। রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া হলে কেউ ঢুকতে পারবেন না। প্রার্থীর কাউন্টিং এজেন্টরা যত্রতত্র ঘোরাফেরা করতে পারবেন না। তবে প্রার্থী ও নির্বাচনী এজেন্ট ঘুরতে পারবেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
সিইও-র তরফে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র পেন, পেনসিল এবং খাতা নিয়ে গণনাকেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে। মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। গণনাকেন্দ্র থেকে এক বার বেরিয়ে গেলে আর প্রবেশ করা যাবে না। এমনকি, প্রার্থীদের কাউন্টিং এজেন্টদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। গণনার মাঝপথে কাউন্টিং এজেন্ট পরিবর্তন করা যাবে না। গণনা কেন্দ্রে প্রতি বিধানসভা পিছু একজন করে পর্যবেক্ষক থাকবেন অর্থাৎ ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ২৯৪ জন গণনা পর্যবেক্ষক থাকবেন। গণনা কেন্দ্রে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষকরাই মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন। এর পাশাপাশি সমগ্র গণনা কেন্দ্র-সহ তার চারপাশ সিসিটিভিতে মোড়া থাকবে। গণনা কেন্দ্রের ভিতর ওয়েব কাস্টিং হবে না। পোস্টাল ব্যালট গণনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একবারই নির্দিষ্ট ওটিপি দেখার জন্য যদি মোবাইল কারুর কাছে পাওয়া যায় তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনী তা বাজেয়াপ্ত করবে এবং নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী তাঁর হাজতবাস অথবা জরিমানা হতে পারে। মোবাইল ব্যবহার করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার।
কাউন্টিং অফিসারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করল পূর্ব রেল। আগামীকাল অর্থাৎ ৪ জুন গণনার জন্য শিয়ালদা থেকে একটি স্পেশ্যাল লোকাল ট্রেন চালানো হবে। ভোর ৪:৫০ মিনিটে শিয়ালদা থেকে ক্যানিং এর উদ্দেশ্যে রওনা দেবে এই ট্রেন। ৬:০৩ মিনিটে ক্যানিং এ পৌঁছাবে এই ট্রেন। সমস্ত স্টেশনে দাঁড়াবে ট্রেনটি। পাশাপাশি কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, ভোট গণনার দিন কলকাতায় মেট্রো চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
Commenti